বিতর্ক বিবাদ এড়িয়ে চলা প্রয়োজন। প্রেম পরিণয়ে মানসিক স্থিরতা নষ্ট। নানা উপায়ে অর্থ উপার্জনের সুযোগ। ... বিশদ
শাহজাহান রিজেন্সি নিয়ে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি?
আমার মনে হয়, অনেকদিন পরে বাংলা ছবিতে এত অভিনেতা-অভিনেত্রীকে একসঙ্গে কাজ করতে দেখা যাবে। সবাই ভালো পারফর্ম করেছেন, সেটাও আলোচনার বিষয় হয়ে উঠতে চলেছে। একটা সহজ গল্প সৃজিত খুব সুন্দর করে বলেছেন। গল্প তথা ছবিতে অনেকগুলো চরিত্র আছে, তাদের সঙ্গে দর্শকদের আলাপ হবে। ছবির গানগুলো ইতিমধ্যেই ভাইরাল হতে শুরু করেছে। তাই বলব, শাহজাহান রিজেন্সিতে আগামী ১৮ জানুয়ারি চেক-ইন করলে কেউ ঠকবেন না।
উত্তমকুমার অভিনীত ‘চৌরঙ্গী’র সঙ্গে তুলনা তো হবেই...
দেখুন, আমি এখন যদি একটা কাঠের কাজ করি, মানুষ বলবে আগে কাঠের গুণগত মান কত ভালো ছিল, কাজের সূক্ষ্মতা নিয়েও তুলনামূলক বিচার করতে বসবেন। তাই এক্ষেত্রেও ছবিটা নিয়ে তুলনা হবেই। ‘চৌরঙ্গী’ একটা কলজয়ী উপন্যাস। সৃজিত সেই উপন্যাসকে আধার করেই ছবি করেছেন। এটা একেবারেই উত্তমবাবু অভিনীত ‘চৌরঙ্গী’ নয়।
মূল উপন্যাসের চরিত্রদের নাম এই ছবিতে বদলে দেওয়া হয়েছে। যেমন স্যাটা বোস হয়ে গেছেন সমীরণ বসু ওরফে স্যাম। আপনার চরিত্রের নাম কি হয়েছে?
আমি এই ছবিতে রুদ্র।
চরিত্রায়ণে কতটা বদল ঘটানো হয়েছে?
রুদ্র ‘চৌরঙ্গী’র শঙ্করের মতো নয়। মূল উপন্যাসটায় যেমন আছে, শঙ্কর তথা রুদ্রর চোখ দিয়ে, লেন্স দিয়ে আমরা ছবিটা দেখব।
এই ধরণের একটি চরিত্রে অভিনয়ের অফার পাওয়ার পর প্রস্তুতি পর্বটা কেমন ছিল?
সত্যি কথা বলতে কী প্রথমে একটু শঙ্কায় ছিলাম। মণিশঙ্করবাবুর চৌরঙ্গী বাংলা সাহিত্যে অন্যতম জনপ্রিয় উপন্যাস। এদিকে সিনেমাও একটি জনপ্রিয় মাধ্যম। এক্ষেত্রে হয় কী, সিনেমাটা মাথায় বেশি থেকে যায়। সেই কারণেই দর্শকের কাছে চৌরঙ্গী ছবির স্মৃতি হয়তো এখনও অনেক উজ্জ্বল। সেই চৌরঙ্গী ছিল সম্পূর্ণ স্যাটা বোসের ছবি। উপন্যাসটা কিন্তু অন্য কথা বলে। সেখানে প্রতিটি চরিত্রের গুরুত্ব আছে। চাহিদা আছে। রুদ্র শাহজাহান রিজেন্সিতে চাকরি করতে আসে। রুদ্র একটা লেন্স। হোটেলটা তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ।
তাহলে কি রুদ্রই শাহজাহান রিজেন্সির নায়ক?
ঠিক তা নয়। শাহজাহান রিজেন্সি বিশেষ কারও ছবি নয়। হোটেল এমন একটা জায়গা, যেখানে মানুষের চরিত্রের সব রং ধরা পড়ে। হোটেলের বন্ধ ঘরে বা পানশালায়, খাবার জায়গায় মানুষের এক একটা রং। সেই রংগুলো নিয়েই জীবন। এই সব রঙের মিশেল ‘চৌরঙ্গী’ উপন্যাস। এবার সেই রংগুলোকে কে কীরকম দেখছেন, বিচার করছেন সেটাই দেখার। ছবিতে হোটেলের মাধ্যমে কোথাও একটা বৃহত্তর জীবনের কথা বলা হয়েছে। রুদ্র নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা যুবক। এখানে এসে সে বুঝতে পারে তার দেখার বা জানার বাইরেও একটা বৃহত্তর দুনিয়া আছে এবং রুদ্রর জানার মধ্যে দিয়ে দর্শকরাও সেটা জানতে পারেন। ছবির চিত্রনাট্য প্রশংসার দাবি রাখে। আমার মতে, অত্যন্ত সরলভাবে বলা একটি গল্প। নর্মাল মানুষগুলোর অ্যাবনর্মাল দিকগুলো সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে। আমি চেষ্টা করেছি। বাকিটা দর্শক বলবেন।
সৃজিত মুখোপাধ্যায় সম্পর্কে পরিচালক পরমব্রতর মূল্যায়ণ?
সৃজিত এখন অনেক পরিণত। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ওঁর মধ্যে একটা প্রাজ্ঞ ব্যাপার এসেছে। (হাসি)
এর আগে সৃজিতের সঙ্গে ‘বাইশে শ্রাবণ’, ‘হেমলক সোসাইটি’, ‘জুলফিকার’-এ কাজ করেছেন। ইন্ডাস্ট্রিতে সবাই বলে পরমব্রত সৃজিতের সহায়। শাহজাহান রিজেন্সিতেও আপনি শেষ মুহূর্তে বড় ইনিংস খেলার জন্য ব্যাট ধরলেন। কি বলবেন?
বীরেন্দ্র সেওয়াগের চেয়ে রাহুল দ্রাবিড় আমার পছন্দের খেলোয়াড়। আমি রাহুল দ্রাবিড় হতে চাই। তাতে যদি কেউ স্বচ্ছন্দ ও নিশ্চিন্ত বোধ করেন, সেটা আমার কাছেও আনন্দের।
নতুন বছরে পরমব্রতর কাছ থেকে দর্শকরা আর কী কী পেতে চলেছেন?
এই তো, ‘শাহজাহান রিজেন্সি’। তারপর ‘সাগরদ্বীপের যখেরধন’, ‘খেলেছি আজগুবি’। পরের ছবি দু’টি বছরের মাঝামাঝি রিলিজ করতে পারে।
আর ফেলুদা সিরিজ?
অবশ্যই। সিজন ২ খুব তাড়াতাড়ি শুরু করব। এই বছরের শেষের দিকে আসবে।
হিন্দি ছবি?
এই তো একটা ছবি শেষ করে এলাম। দৃশ্যম ফিল্মস-এর ‘পিণ্ডদান’। নাসিরুদ্দিন শাহ, বিনয় পাঠক, কঙ্কনা সেনশর্মা রয়েছেন। আরও দুটো হিন্দি ছবির কাজ শুরু হবে। একটা ফেব্রুয়ারিতে, আর একটা এপ্রিলে। ওই ছবি দুটোর ব্যাপারে এখন বিস্তারিত কিছু বলা নিষেধ।
প্রিয়ব্রত দত্ত
ছবি: ভাস্কর মুখোপাধ্যায়