শরীর ভালো যাবে না। সাংসারিক কলহ বৃদ্ধি। প্রেমে সফলতা। শত্রুর সঙ্গে সন্তোষজনক সমঝোতা। সন্তানের সাফল্যে ... বিশদ
বিবর্তনের ইতিহাসে মিউটেশন এক অতি প্রয়োজনীয় ঘটনা। মনে করুন, যদি মিউটেশন ন হতো, তাহলে ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি হতো। সেই অ্যান্টিবডি আস্তে আস্তে সংক্রমণ কমিয়ে আনত। কিন্তু ভাইরাস চাইবে নিজের জিনের সংরক্ষণ। মানুষ যেমন তার ওষুধ, ভ্যাকসিন ইত্যাদি অস্ত্র নিয়ে জীবাণুজগতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছে, তেমন ভাইরাসেরও অস্ত্র আছে সেই আক্রমণ প্রতিহত করার। মিউটেশন হল সেই গোপন অস্ত্র। জিনের পরিবর্তন ভাইরাসের বাহ্যিক রূপে আনে বদল। আগের ওষুধ, আগের ভ্যাকসিন, সবই তখন অসহায়!
সম্প্রতি ভারতে যে দ্বিতীয় ঢেউ এল, তার পেছনে ছিল ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। দেখা গিয়েছে সেই ২০১৯ সালের শিশু করোনাভাইরাসের তুলনায় এই ডেল্টা প্রজাতিতে রয়েছে ১২ বা তারও বেশি মিউটেশন! মনে করুন গ্রিক দার্শনিক, প্লুটার্ক-এর সেই থিসিয়াসের জাহাজের ধাঁধা। সেইরকম যদি কোনও জীবাণুর জিনে এত পরিবর্তন ঘটে যায়, সে কী আর সেই আগের ভাইরাস থাকে? না শুধু নামেই করোনা, কিন্তু তার আড়ালে এক নতুন প্রজাতির ভাইরাস? আগে শরীরে তৈরি হওয়া ভাইরাসের অ্যান্টিবডি দিয়ে আটকায় না এই ডেল্টা প্রজাতি। তাই আগে একবার ইনফেকশন হলেও সুরক্ষা নেই। অক্টোবর ২০২০ তে প্রথম এই প্রজাতি ভারতে দেখা দিয়েছিল। একদিনের মধ্যে হয়নি। যত নতুন মানুষের শরীরে ভাইরাস ঢুকেছে, তত নতুন মিউটেশন হয়েছে। এভাবে জিনের পরিবর্তন জমা হতে হতে একদিন আবির্ভূত হয়েছে এই রক্তবীজের বংশ। দারুণ সংক্রমণের ক্ষমতা। হু হু করে ছড়িয়েছে শহর থেকে শহরে, তারপর গ্রামে। ৩১শে মে, ২০২১-এ ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গ্যানাইজেশন যে নতুন করোনা ভাইরাসের শ্রেণীবিভাগ প্রকাশ করেছে, সেখানে ডেল্টা, আরও তিনটি প্রজাতির সঙ্গে, রয়েছে ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন— এই শ্রেণীতে। মানে এই ভ্যারিয়েন্টকে নিয়ে পৃথিবীজুড়েই দুশ্চিন্তা রয়েছে। ভারত জুড়ে তাণ্ডব চালানোর পর এটি এখন পাড়ি দিয়েছে সমুদ্র পেরিয়ে ইউরোপে।
কিন্তু ডেল্টা প্রজাতিতেই করোনার মহামারীর শেষ নয়। হয়ত কিছুদিন পরে আবার আসবে নতুন মিউটেশন। তার ধ্বংসের ক্ষমতা হয়তো হবে আরও বেশি। বা, আমাদের সৌভাগ্য হলে, হয়তো কমে যাবে ভাইরাসের তেজ। ১৯১৮ সালের ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারীর সময়ে এরকমই হয়েছিল। তিন বছর তাণ্ডব চালানোর পর হঠাৎ করেই ভাইরাস বিদায় নিয়েছিল। ভ্যাকসিন নেওয়া থাকলে তান কিছুটা হলেও সুরক্ষা দেবে। তাই ভ্যাকসিন নিতেই হবে। তবে আমাদের মনে রাখা দরকার, জীবাণু জগতের বিরুদ্ধে যুদ্ধটা অত সহজ নয়। আজ থেকে তিন বা চার হাজার বছর আগেকার মিশরীয় মমির অস্থির মধ্যে টিবির জীবাণু পাওয়া গেছে। আজ চার হাজার বছর ধরে যক্ষ্মার সঙ্গে আমাদের লড়াই চলছে। করোনা তো সবে দেড় বছর! তবে মানবজাতি নিশ্চিহ্ণ হয়নি ভয়ঙ্কর অসুখের প্রকোপেও। তাই লড়তে হবে। পালন করতে হবে সুস্থ ও স্বাস্থ্যকর জীবন।