শরীর ভালো যাবে না। সাংসারিক কলহ বৃদ্ধি। প্রেমে সফলতা। শত্রুর সঙ্গে সন্তোষজনক সমঝোতা। সন্তানের সাফল্যে ... বিশদ
ক্যালকাটা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের (পাভলভ হাসপাতাল) সাইকিয়াট্রি বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ডাঃ শর্মিলা সরকার জানাচ্ছেন, স্বপ্ন নিয়ে কথা বলতে হলে আগে সিগমুন্ড ফ্রয়েডের কথা উল্লেখ করতেই হবে। ফ্রয়েড ছিলেন সাইকোঅ্যানালিসিস-এর জনক। তিনি লিখেছিলেন বিখ্যতা বই— ‘দ্য ইন্টারপ্রিটেশন অব ড্রিমস’। অর্থাৎ স্বপ্নের ব্যাখ্যা। অস্ট্রিয়ান মনোরোগবিশেষজ্ঞ ফ্রয়েডের মতে, স্বপ্ন হল এক ধরনের ইচ্ছেপূর্তি! অর্থাৎ যা কিছু আমরা অবচেতনে কামনা করি তাই আমরা দেখি স্বপ্নে। এক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠতেই পারে, আমরা কি তবে ভূতকেও কামনা করি? নিশ্চয় নয়। তাহলে স্বপ্নে ভূত আসে কেন? এক্ষেত্রে স্বপ্ন নিয়ে গবেষণা করেছেন এমন অন্যান্য গবেষকরা জানাচ্ছেন, শুধু ভূত নয়, আমরা এমন স্বপ্নও দেখি যেখানে খুনিরা আমাদের তাড়া করেছে। এমনকী কোনও বড় সাপ তেড়ে আসছে এমন স্বপ্নও আমরা দেখে থাকি। মোটকথা তীব্র ভয়ের উদ্রেক ঘটায় এমন নানা স্বপ্ন আমাদের ঘুমের মধ্যে ঘুরেফিরে আসে। এক্ষেত্রে বুঝতে হবে, ভয়ের স্বপ্ন যিনি দেখছেন তাঁর বাস্তব জীবনে কোনও একটি বিষয় নিয়ে মনের মধ্যে প্রবল দুশ্চিন্তা বাসা বেঁধেছে। আর সেই আতঙ্ক তৈরি হওয়ার কেন্দ্রে হয়তো কোনও মৃত মানুষ নেই। রয়েছে কোনও জ্যান্ত মানুষ! আবার চোখের সামনে চেনা লোকের মৃত্যু দেখা কিংবা কোনও ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়ার পর অনেকেই মারাত্মক মানসিক চাপে ভোগেন। মানসিক চাপের কারণে গভীর ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। আর অগভীর ঘুমেই আমরা স্বপ্ন বেশি দেখি। মানসিক চাপ ও গভীর ঘুমের অভাব— এই দুইয়ের যোগফলে আসতে পারে ভয়ের স্বপ্ন।
অন্যদিকে, আধুনিক কিছু গবেষক জানাচ্ছেন অবাক করার মতো তথ্য। তাঁরা বলছেন, ভয়, আতঙ্ক, রাগ, দুঃখের মতো আবেগজনিত বিষয়গুলি নিয়ন্ত্রণ করে মস্তিষ্কের অ্যামিগডালা নামক অংশ। ঘুমের সময় কিন্তু এই অংশটি সক্রিয় থাকে। এছাড়া ঘুমের সময়েই মস্তিষ্কের হিপ্পোক্যাম্পাস নামক অংশটি সারাদিনের নানা ঘটনাকে বেছে রেখে দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতিভাণ্ডারে জমা রাখার কাজটিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। অবাক করার মতো বিষয় হল, ঘুমের সময় আমাদের মস্তিষ্কের প্রি ফ্রন্টাল কর্টেক্স খানিকটা নিষ্ক্রিয় অবস্থায় থাকে। প্রি ফ্রন্টাল কর্টেক্স আবার দায়ী থাকে চিন্তা-ভাবনা, যুক্তিবোধ তৈরি করার জন্য। ফলে ঘুমের সময় অ্যামিগডালা সক্রিয় থাকায়, অবচেতনের অযৌক্তিক ভয় বা আবেগ স্বপ্ন হয়ে হানা দিলেও আমরা যুক্তিবোধের অভাবে নিজেদের অসহায় বোধ করি। স্বপ্নের মধ্যে অবাস্তব কিছু ঘটছে দেখার পরেও তা নিয়ে বিশ্লেষণ করতে পারি না। অহেতুক আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ি। প্রশ্ন হচ্ছে এর মধ্যে স্মৃতির ভূমিকা কোথায়? আসলে দিনের মধ্যে নানা ঘটনা ঘটে যা আমাদের মনে ভয়, দুশ্চিন্তার মতো আবেগও তৈরি করে। সেই আবেগ আমরা সচেতনভাবে চাপা দিয়ে রাখি। আবেগগুলি পাঠিয়ে দিই অবচেতন মনে। ঘুমের মধ্যে অবচেতন থেকে উঠে আসা সেই সব স্মৃতি স্বপ্নে এসে আবেগের স্রোত তৈরি করে। তবে ভয়ের স্বপ্ন বিষয়টা শুনতে ভয়ঙ্কর লাগলেও, এই ধরনের স্বপ্নের বেশ কিছু লাভজনক দিকেরও দেখা মিলেছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় — এই রকম স্বপ্ন আসলে মনের মধ্যে চাপা দিয়ে রাখা দুশ্চিন্তার ভার লাঘব করতে সাহায্য করে। ভয়ের স্বপ্ন দেখে জেগে ওঠা বহু মানুষ জানিয়েছেন, আতঙ্কজনক স্বপ্ন দেখার পর তাঁদের মন অনেক হালকা হয়ে গিয়েছে। আগের মতো মানসিক চাপেও ভুগছেন না!