শরীর ভালো যাবে না। সাংসারিক কলহ বৃদ্ধি। প্রেমে সফলতা। শত্রুর সঙ্গে সন্তোষজনক সমঝোতা। সন্তানের সাফল্যে ... বিশদ
ডাঃ মিত্র জানান, আগে থেকে হার্টের রোগ নেই এমন ব্যক্তিরও কোভিড হলে তিনি হার্টের সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারেন। কারণ ফুসফুসের উপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলছে করোনা সংক্রমণ। ডাঃ মিত্র বলেন, ‘ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, এমন রোগীদেরও জানি যাঁরা কোভিডে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তবে আইসিইউতে রাখতে হয়নি। রোগী ছিলেন সেফ হোমে। অথচ করোনা মুক্ত হওয়ার একমাস পরেও এমন রোগীকে পরীক্ষা করতে গিয়ে দেখতে পাচ্ছি অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯৪-৯৫! রোগীর বয়স ৪০। আরও আশ্চর্য ব্যাপার হল, হার্ট রেট ১২০ থেকে ১৩০! স্বাভাবিক অবস্থায় আমাদের হার্ট রেট থাকে ৬০ থেকে ১০০-এর মধ্যে। এভাবে একটানা হার্টরেট ১২০ বা তার বেশি থাকলে কিছুদিন বাদে হার্ট ফেলিওরের সমস্যা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা এড়ানো যায় না।’
তিনি আরও জানান, যে কোনও ভাইরাসের সংক্রমণে হার্টে একধরনের প্রদাহ হয়। করোনাও ভাইরাল ইনফেকশন। হার্টের তিনটি স্তর রয়েছে। একদম মাঝের স্তরের নাম মায়োকার্ডিয়াম। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে মায়োকার্ডিয়ামে একধরনের প্রদাহ হয় যাকে বলে মায়োকার্ডিয়াইটিস। এই অসুখে হার্টরেট বেড়ে যায়। বৃদ্ধি পায় হার্ট ফেল করার আশঙ্কাও । তাই কোভিড থেকে সুস্থ হওয়ার পরে অবশ্যই একটা ইসিজি, ইকো করিয়ে নিন। সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে করান ব্লাড টেস্ট।
ডাঃ মিত্রে মতে, আপাতভাবে সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের মধ্যে কোভিডের মারাত্মক উপসর্গ দেখা দিলেও তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা দরকার। কারণ দেখা যাচ্ছে কোভিডের কারণে যে সমস্ত রোগীকে আইসিইউ বা ভেন্টিলেশনে রাখতে হচ্ছে তাঁদের মধ্যে অনেকেই হার্টের সমস্যা অনুভব করছেন। আসলে দীর্ঘদিন ধরে এই ধরনের ব্যক্তির ফুসফুসে অক্সিজেন প্রবাহ কম থাকে। ফলে হার্টেও তার ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। ৭ থেকে ১০ দিন ভেন্টিলেশনে থাকতে হলে ফুসফুসের সঙ্গে হার্টের উপরেও একধরনের স্ট্রেস পড়ে। তাছাড়া দীর্ঘ দিন অসুখে ভোগার কারণে শরীরে পুষ্টির মাত্রার গণ্ডগোল হতে পারে। এই বিষয়গুলিও হার্টের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই কোভিড সেরে গেলেও হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার পর অন্ততপক্ষে তিনমাস খুব সাবধানে থাকতে হবে। ছোট ছোট লক্ষণগুলি অবহেলা করলে চলবে না। দেখতে হবে হাঁটাচলা বা সিঁড়ি ভাঙার সময় বুকে কোনও কষ্ট হচ্ছে কি না! অনেকসময় এমন রোগীর শুকনো কাশি হতে দেখা যায়। যা ফুসফুস ও হার্টের দুর্বলতার দিকে ইঙ্গিত করে।
ডাঃ মিত্র আরও বলেন, ‘সুগার রোগীকেও থাকতে হবে খুব সাবধানে। দীর্ঘদিনের ডায়াবেটিসে (Diabetes) হার্টের ছোট ছোট যে ধমনীগুলি আছে সেগুলি অনেকসময় বন্ধ হয়ে যায়। ধীরে ধীরে বড় বড় ধমনীতেও ব্লক হতে শুরু করে। আর তা হয় নিঃশব্দে। আরও মুশকিল হল, ডায়াবেটিস থাকলে হার্ট অ্যাটাকের ব্যথাও বোঝা যায় না। আসলে আমরা ব্যথার অনুভূতি পাই স্নায়ুর মাধ্যমে। দীর্ঘদিনের সুগার নার্ভের ক্ষতি করে। ফলে ব্যথার অনুভূতি চলে যায়। যন্ত্রণাবোধ ছাড়াই রোগীর হার্ট অ্যাটাক হয়ে যায়! এই কারণে ডায়াবেটিসকে সাইলেন্ট কিলার বলা হয়। অতএব ডায়াবেটিস রোগীর কোভিড হলে হৃদযন্ত্রে প্রদাহ হয় ও হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ফেলিওরের মতো সমস্যায় ইন্ধন জোগায়। সমস্যা হল, ফুসফুসে সাইটোকাইন স্টর্ম সামলাতে এখন স্টেরয়েড ব্যবহার করতে হচ্ছে। স্টেরয়েড-এর কারণে আবার রক্তে সুগারের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকছে। এই কারণে করোনা মহামারীর সময়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে হবে শক্ত হাতে।’
এই সমস্ত কারণেই বিশেষজ্ঞরা কোভিড থেকে সেরে ওঠার পর প্রথম তিনমাস খুব সতর্ক থাকতে নির্দেশ দিচ্ছেন। তাঁরা বলছেন সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় বুকে চাপ অনুভব করা, শুকনো কাশি হওয়ার মতো সমস্যা থাকলে অবহেলা করবেন না। সত্ত্বর চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ডাঃ মিত্র জানান, একটি সহজ পরীক্ষার মাধ্যমেও শরীরের অবস্থা সম্পর্কে ধারণা করা যায়। পরীক্ষাটির নাম ‘সিক্স মিনিট ওয়াকিং টেস্ট।’
৬ মিনিট হাঁটার পরীক্ষা—
প্রথমে অক্সিজেন স্যাচুরেশন মাপুন। স্বাভাবিক অবস্থায় অক্সিজেন স্যাচুরেশন থাকা উচিত ৯৮ থেকে ১০০-এর মধ্যে। এরপর ছয় মিনিট হাঁটুন। ছয় মিনিট হাঁটার পর ফের অক্সিজেন স্যাচুরেশন দেখুন। ছয় মিনিট হাঁটার পর অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯২-এর কমা উচিত নয়। তবে ৯২ এরও নীচে নেমে গেলে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
লিখেছেন সুপ্রিয় নায়েক