শরীর ভালো যাবে না। সাংসারিক কলহ বৃদ্ধি। প্রেমে সফলতা। শত্রুর সঙ্গে সন্তোষজনক সমঝোতা। সন্তানের সাফল্যে ... বিশদ
কোভিড-১৯ এখন অবধি সবথেকে বেশি আক্রমণ করছে প্রাপ্তবয়স্কদের। তাই ২০২১ সালের শুরুতে সারা পৃথিবীতে যখন টিকাকরণ শুরু হল, তখন এই গোষ্ঠীকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আস্তে আস্তে ভাইরাসের মিউটেশন হয়েছে। এখন শিশুদের মধ্যেও কোভিড রোগী যথেষ্ট পাওয়া যাচ্ছে। এবং এদের কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাড়াবাড়িও হয়েছে। তাই প্রশ্ন, বয়স্ক বা কো-মরবিডিটি থাকা ব্যক্তিরা যেমন টিকা পাচ্ছেন, তেমন শিশুরাও কোভিড টিকা (Corona Vaccine for children) পাবে তো?
এখন সবাই জানেন, ভ্যাকসিন সহ যে কোন ওষুধ বাজারে আসার আগে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হয়। অত্যন্ত সাবধানে পরীক্ষা করে দেখতে হয় যে ওষুধে কারও শরীরে কোনও বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে কি না। সব ঠিক থাকলে তারপরেই ওষুধ ব্যবহারের অনুমতি পাওয়া যায়। প্রায় সমস্ত ট্রায়াল করা হয় প্রাপ্তবয়স্কদের ওপর। কারণ ট্রায়ালে অংশ নিতে হলে প্রয়োজন হয় সম্মতির। প্রাপ্তবয়স্ক ছাড়া কেউ এই ‘ইনফরমড কনসেন্ট’ দিতে পারেন না। এর ফলে, ট্রায়াল থেকে যে তথ্য পাওয়া যায়, সবই ১৮ (বা কিছু ক্ষেত্রে ১৬) বছরের বেশি ব্যক্তির জন্য। তাই এরপর যখন গাইডলাইন তৈরি হয়, তখন তাতেও শুধু প্রাপ্তবয়স্কদের কথাই থাকে। শিশুদের কথা থাকে না।
আসলে, ওষুধ প্রয়োগের ক্ষেত্রে শিশুর ব্যাপারে অতিরিক্ত সতর্কতা নিতেই হয়। কিন্তু আবার অন্য দিকে, শিশু-কিশোরদের সংক্রামক অসুখ থেকে রক্ষা করাও আমাদের সবার দায়িত্ব। তাই খুব সাবধানে, বিশেষজ্ঞের মতামত নিয়ে, শিশুর ওপর ট্রায়াল শুরু করা হয়েছে। বিদেশে আগেই হয়েছে। ভারতে জুন মাস থেকে কোভ্যাক্সিনের ট্রায়াল হওয়ার কথা। এই ট্রায়ালের ফলাফলের ওপর নির্ভর করবে আগামী দিনে ভারতে শিশুরা এই ভ্যাকসিন পাবে কি না। কোভিশিল্ড ইংল্যান্ডে শিশুদের ওপর পরীক্ষা করা শুরু হয়েছিল। কিন্তু রক্ত জমাট বাঁধার কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সামনে আসায় আপাতত এই ট্রায়াল বন্ধ।
মে মাসের শেষ সপ্তাহে নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিনে ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সিদের ওপর ফাইজারের ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। তাতে দেখানো হয়েছে যে এই ভ্যাকসিন কিশোর বয়সে প্রায় একশো শতাংশ কার্যকরী। এই চমকপ্রদ ফল প্রকাশের একদিন পরেই ইউরোপে ১২ বছরের ওপর সবার জন্য কোভিড টিকাকরণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। জার্মানি জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকেই কিশোরদের ভ্যাকসিন শুরু করার পরিকল্পনা করেছে। আমেরিকায় এর দুই সপ্তাহ আগেই ১২ বছরের ওপরে সবার টিকা দেওয়া শুরু করে দিয়েছিল। তবে এখনও অবধি বিশ্বে একমাত্র ফাইজার কোম্পানির টিকাই শিশু-কিশোরদের জন্য অনুমোদিত। ভারতে যে দুটি টিকা ব্যবহার হচ্ছে সেগুলি সম্পর্কে কোন তথ্য এখনও নেই।
এছাড়া চীনের যে ভ্যাকসিন, সাইনোভ্যাক, তার নির্মাতারা দাবি করেন যে একদম ছোট শিশুদের ক্ষেত্রেও এই ভ্যাকসিন নিরাপদ। এছাড়া ভারতে সম্প্রতি তৃতীয় যে ভ্যাকসিনের কথা শোনা যাচ্ছে, সেই স্পুটনিক ভি সম্প্রতি ইউনিসেফকে ভ্যাকসিন সরবরাহ করার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। ফলে আগামী দিনে হয়ত এটিও শিশুদের ওপর ব্যবহার করা যাবে।
তাহলে শেষ কথা এটাই যে শিশুদের করোনা টিকা এখনই দেওয়া শুরু হচ্ছে না। তাই তাদের সুরক্ষার দায়িত্ব আমাদের বড়দের ঘাড়েই। আমাদেরই সচেতন হয়ে পরতে হবে মাস্ক। বজায় রাখতে হবে সামাজিক দূরত্ব। সাবান দিয়ে ধুতে হবে হাত। বারবার হাতে স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে। এই পৃথিবীকে শিশুর বাসযোগ্য করে যাওয়ার দায়িত্ব কিন্তু আমাদেরই।