শরীর ভালো যাবে না। সাংসারিক কলহ বৃদ্ধি। প্রেমে সফলতা। শত্রুর সঙ্গে সন্তোষজনক সমঝোতা। সন্তানের সাফল্যে ... বিশদ
কেমন নিম পাতা?
সুগার কন্ট্রোলে সাধারণত কচি নিমপাতা খেতে হয়। তাই বলে একেবারে লাল রঙের পাতা খেয়ে কোনও লাভ হবে না। লাল থেকে সদ্য সবুজ হচ্ছে এমন নিমপাতা সেবন বাঞ্ছনীয়। অথবা সবে সবুজ হয়েছে, পাতার গাত্র নরম আছে— এমন নিম পাতাই খাওয়া দরকার। নিমপাতা দামড়া হয়ে গিয়েছে, পাতার গাত্র খসখসে হয়ে আছে এমন পাতা সেবন করে লাভ নেই।
নিমপাতা তুলে একটা পরিষ্কার পাত্রে পরিশ্রুত জল দিয়ে ধুয়ে নিন। এবার পাতাগুলি একটি পরিচ্ছন্ন থালায় বিছিয়ে রাখুন। হাওয়া দিয়ে জল শুকিয়ে নিন। একটি পরিষ্কার কাপড় দিয়ে ঢাকা দিন ও আধঘণ্টা রোদে দিন। পাতায় জল শুকিয়ে গেলে ওই থালা নিয়ে ঘরের মধ্যেই একটি উপদ্রবহীন জায়গায় রেখে দিন। অর্থাৎ যেখানে ইঁদুর, আরশোলা যায় না এমন জায়গায় থালা রাখতে হবে। দিন কয়েকের মধ্যে পাতা শুকিয়ে খরখরে হয়ে যাবে। সেই পাতা মিক্সিতে গুঁড়ো করে একটা কাচের জারে রেখে দিন। প্রতিদিন নির্দিষ্ট মাত্রায় এই নিমপাতা গুঁড়ো খেতে হবে। কত ডোজে নিমপাতা গুঁড়ো খাবেন তা বলার আগে আরও কতকগুলি বিষয় জেনে রাখা দরকার।
নিমপাতা সংগ্রহ করে রাখতে হবে চৈত্র মাসের মধ্যে। বৈশাখ, জৈষ্ঠ্য, আষাঢ় নিমপাতা সংগ্রহ করা যাবে না, খাওয়াও যাবে না। তবে মধ্যবর্তী এই তিনমাসে সেবন করা যেতে পারে নিম ছাল। নিমগাছের ছালও পাতার মতোই সমগুণসম্পন্ন। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রমতে বছরের বৈশাখ, জৈষ্ঠ্য, আষাঢ় এই তিনমাস পাতার বদলে নিম ছাল ব্যবহার করতে হবে।
নিম পাতার গুঁড়ো খাওয়ার নিয়ম—
শুধু নিমপাতার গুঁড়ো খেলে খেতে হবে ৩ গ্রাম। খেতে হবে সকাল বেলায় খালি পেটে।
সুগার নিয়ন্ত্রণে সবচাইতে ভালো কাজ হয় ১ গ্রাম নিমপাতার সঙ্গে ২ গ্রাম হলুদগুঁড়ো মিশিয়ে খেলে। তবে বাজারচলতি প্যাকেটের হলুদ খেলে চলবে না। গাঁট হলুদ কিনে এনে রোদে শুকিয়ে তা গুঁড়ো করে রাখতে হবে। এরপর নিমপাতার গুঁড়োর সঙ্গে মিশিয়ে খেতে হবে। নিম ও হলুদ গুঁড়ো একত্রে খেলে তা খেতে হবে সকালে টিফিন করার আধঘণ্টা থেকে পনেরো মিনিট আগে।
ডায়াবেটিস আরও ভালো নিয়ন্ত্রণ করা যাবে ১গ্রাম হলুদ ও ১গ্রাম নিমের গুঁড়োর সঙ্গে ১ গ্রাম আমলকী চূর্ণ মিশিয়ে খেলে। এক্ষেত্রেও খেতে হবে সকালে টিফিন করার আধঘণ্টা থেকে পনেরো মিনিট আগে।
নিম ছালের ডোজ
১০ থেকে ১৫ গ্রাম ছাল জলে ভালো করে ধুয়ে নিন। শুকিয়ে নিন। সন্ধেবেলায় পরিশ্রুত জলে ভিজিয়ে রাখুন। রাতে একটি পাত্রে তিন কাপ জল দিয়ে ফোটান। জল ফুটে এক কাপ হয়ে গেলে নামিয়ে রাখুন। ওই জলের অর্ধেকটা সকালে খালি পেটে আর বাকি অর্ধেকটা সন্ধেবেলায় পান করতে হবে। তবে ছাল বেশ কাঁচা হলে, তা ফোটাতে হবে না। সারা রাত এককাপ জলে ভিজিয়ে রেখে দিতে পারেন। এরপর সকালে ও সন্ধেয় অর্ধেক কাপ করে জল ছেঁকে পান করা যেতে পারে। খুব ভালো হয় নিমছালের সঙ্গে চার পাঁচটি পদ্মগুলঞ্চের ছোট ছোট ডাল মিশিয়ে নিতে পারলে।
শাস্ত্রমতে সারাবছরের জন্য পাতা সংগ্রহের সময়—
আষাঢ় মাস অতিক্রান্ত হওয়ার পর, সকালে একপশলা বৃষ্টি হয়ে গেলে, তারপর রোদ উঠলে ওই সময়ে সংগ্রহ করতে হবে আগের বর্ণনার মতো নিমপাতা। সকালে বা সন্ধেবেলায় নিমপাতা সংগ্রহ করতে নেই। তবে নিমপাতায় একধরনের পোকা ডিম পাড়ে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে ছত্রাক সংক্রমণও হতে পারে। তাই নিমপাতা তোলার পর ছত্রাক ও ডিম আছে এমন পাতা বাদ দিয়ে দিন।
নিমছাল সংগ্রহের নিয়ম
মোটামুটি ৬ ইঞ্চি বেড় আছে এমন ডাল থেকে ছাল সংগ্রহ করতে হবে। মোটমুটি দশগ্রাম মতো ছাল সংগ্রহ করুন।
বাড়িতে নিমগাছ
বাড়িতে, ছাদে অথবা ঝুলবারান্দায়, একটা বড় ধরনের টবে নিমগাছ লাগানো যেতে পারে। ডগা কেটে দিলে সেখান থেকে নতুন করে শাখা বেরিয়ে বড় ধরনের ঝাঁকড়া নিম গাছ তৈরি হয়ে যাবে। সারা বছর সেই গাছ থেকেই মিলতে পারে পাতা ও ছাল।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার: ডাঃ সুবলকুমার মাইতি (ভারত সরকারের আয়ুর্বেদ গবেষণা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসা বিজ্ঞানী)