রঞ্জুগোপাল মুখোপাধ্যায়, মালদহ : ধৃত চীনা নাগরিক কোন পথে মালদহ থেকে তার গন্তব্য গুরুগ্রামে যেত তা জানতে মরিয়া পুলিস। বিষয়টি নিয়ে চীনা নাগরিককে জেরা করে পুলিস তথ্য জোগাড় করতে চাইছে। এ জেলা বা রাজ্যে তার কোনও সাহায্যকারী রয়েছে কি না তাও জানার চেষ্টা চলছে। তার যাতায়াতের রুট সম্পর্কে জানা গেলে অনেক রহস্যের জট খোলা সম্ভব বলে পুলিস মনে করছে। তবে মালদহ সীমান্ত থেকে গুরুগ্রাম পর্যন্ত তাকে পৌঁছতে কেউ না কেউ সাহায্য করার জন্য ছিল বলেই তদন্তকারীরা মনে করছেন। কারণ, অপরিচিত এলাকায় ওই চীনা নাগরিকের পক্ষে এই কঠোর আত্মশাসনের মধ্যে ওই দূরত্ব অতিক্রম করা সম্ভব নয় বলেই পুলিস আধিকারিকদের একাংশের অভিমত। এদিকে, হানকে নিয়ে রাজ্য পুলিসের স্পেশাল টাস্ক ফোর্সও (এসটিএফ) এবার সক্রিয় হয়েছে। সোমবার এসটিএফের এসপি পদমর্যাদার এক আধিকারিক মালদহে আসেন। এদিন দুপুরে তিনি মালদহের পুলিস সুপার অলোক রাজোরিয়ার সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করেন। হানকে জেরা করে পাওয়া তথ্য নিয়ে দুই পুলিসকর্তার মধ্যে কথা হয় বলে জানা গিয়েছে। মালদহের পুলিস সুপার বলেন, বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে কোথায় কীভাবে তার যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তা আমরা জানার চেষ্টা করছি। জিজ্ঞাসাবাদপর্ব শেষ না হলে বিস্তারিত বলা সম্ভব নয়। তবে এখনও পর্যন্ত মালদহ বা এ রাজ্যের কোনও বাসিন্দার সঙ্গে ওই চীনা নাগরিকের অনুপ্রবেশের কোনও যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া যায়নি। আমরা সবদিক খতিয়ে দেখছি। উল্লেখ্য, গত ১০ জুন এদেশে অনুপ্রবেশের সময় চীনা নাগরিক হান জুনওয়েকে সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) পাকড়াও করে। মালদহের কালিয়াচক থানার মিলিক সুলতানপুর এলাকার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত পার হয়ে হান এদেশে ঢোকে। সে নদীতে সাঁতরে বাংলাদেশ থেকে ভারতে এসে ওঠে। ভারতে ঢোকার আগে বাংলাদেশের ভিসা নিয়ে ওই চীনা নাগরিক ঢাকায় সপ্তাহখানেক ছিল। সেসময় তার জ্বরও হয়। পরে এক ব্যক্তির সাহায্যে সড়কপথে সীমান্তঘেঁষা বাংলাদেশের চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলার একটি ডেরায় সে পৌঁছয়। সেখান থেকে ভারতে অনুপ্রবেশ করে। এদেশে অনুপ্রবেশের নতুন রুট খুঁজতে চীনে বসে থাকা জালিয়াতি চক্রের মাথারা হানকে পাঠিয়েছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে পুলিস ও বিএসএফ জানতে পেরেছে।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, হানকে জেরা করে বেশ কিছু তথ্য পেয়েছেন তদন্তকারীরা। তবে হানের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের সঙ্গে আন্তর্জাতিক স্তরের নানা বিষয় জড়িয়ে রয়েছে। ফলে পুলিসের পক্ষে দ্রুত সেসব খতিয়ে দেখা সম্ভব হচ্ছে না। জেরায় উঠে আসা তথ্য জেলা পুলিসের তরফে রাজ্যকে জানানো হচ্ছে। বেশ কিছু বিষয় নিয়ে রাজ্যের সঙ্গে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ও গোয়েন্দাদের কথা হচ্ছে। এবিষয়ে এক পুলিস আধিকারিক বলেন, ধৃত চীনা নাগরিকের সঙ্গে মালদহের সেভাবে কোনও সম্পর্ক নেই। পুরো বিষয়টি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে রয়েছে। এই ধরনের ঘটনায় জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা বা এনআইএ সাধারণত তদন্ত চালিয়ে থাকে। এনআইএ-র জাল গোটা দেশে ছড়িয়ে রয়েছে। ফলে ধৃতকে জেরায় পাওয়া তথ্য তারা সহজেই খতিয়ে দেখতে পারে। যা আমাদের পক্ষে সবসময় সম্ভব হচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, হান মালদহ টাউন স্টেশন থেকে ট্রেনে কলকাতা বা শিয়ালদহ যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। সেখান থেকে সে গুরুগ্রামে পৌঁছত। তবে বর্তমানে খুব কম সংখ্যক ট্রেন চলাচল করছে। অসংরক্ষিত কামরা নেই। ফলে আগাম টিকিট না কাটলে কারও পক্ষে গন্তব্যে পৌঁছনো সম্ভব নয়। ওই চীনা নাগরিক কীভাবে ট্রেনের টিকিট জোগাড় করত তা আমরা জানার চেষ্টা করছি। পুলিসকে বিভ্রান্ত করতে সে কোনও গল্প ফাঁদছে কি না তাও আমরা খতিয়ে দেখছি।