শরীর ভালো যাবে না। সাংসারিক কলহ বৃদ্ধি। প্রেমে সফলতা। শত্রুর সঙ্গে সন্তোষজনক সমঝোতা। সন্তানের সাফল্যে ... বিশদ
উত্তরটা ‘না’ ছাড়া আর কিছু হবে না। অন্তত তেলের দামের পরিসংখ্যান সেই কথাই বলছে। শুধু পেট্রল-ডিজেলের দাম মাপকাঠি কেন? কারণ, এই ক্ষেত্রটির প্রভাব সরাসরি পড়ে মূল্যবৃদ্ধিতে। তেলের দাম বাড়লে পরিবহণ খরচ বাড়বে। বৃদ্ধি পাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রের উৎপাদন খরচও। সেই ধাক্কা খোলা বাজারে আসবেই। অর্থাৎ, বাড়বে নিত্য প্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম। ইতিমধ্যেই পণ্য পরিবহণ সেক্টর থেকে দাবি উঠছে, টাকা বাড়াতে হবে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ। অর্থাৎ, সোজা অঙ্কে তার প্রভাব পড়বে জিনিসপত্রের দামে। এরপরও কি আমরা বলব, আচ্ছে দিন এসে গিয়েছে? সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকনমি সম্প্রতি একটি সমীক্ষা রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। সেই অনুযায়ী, ২০২০ সালের তুলনায় গত মে মাস পর্যন্ত দেশজুড়ে কাজ হারিয়েছেন ১ কোটির বেশি মানুষ। আর আয় কমেছে বা একই থেকেছে ৯৭ শতাংশ মানুষের। মানেটা সাফ, মাত্র ৩ শতাংশ মানুষ বলেছেন, এই পর্বে তাঁদের ইনকাম বেড়েছে। তার উপর সোমবার প্রকাশিত পাইকারি মূল্যবৃদ্ধির হিসেব সর্বকালীন রেকর্ড ছুঁয়েছে—১২.৯৪ শতাংশ। আকাশছোঁয়া দামের পাহাড়ে চাপা পড়ছে মানুষ। আর কেন্দ্রীয় সরকার দর কষছে... আগে রাজ্য তাদের ভ্যাট কমাক, তারপর আমরা তেলের এক্সাইজ ডিউটি বা সেস নিয়ে ভেবে দেখব।
কোন কোন ক্ষেত্র থেকে রাজস্ব আসে কেন্দ্রের? উপায় মূলত চারটি—কর্পোরেট ট্যাক্স, ব্যক্তিগত আয়কর, জিএসটি এবং তেলের উপর এক্সাইজ ডিউটি। হিসেব কষে দেখা যাচ্ছে, ২০১৮-১৯ সালে কেন্দ্রের রাজস্বের ১২ শতাংশ এসেছিল পেট্রল-ডিজেলের উপর চাপানো শুল্ক থেকে। ২০১৯-২০ সালে সেই পরিমাণটা ছিল ১৪ শতাংশ এবং ২০২০-২১ সালে উল্লেখযোগ্যভাবে ২০ শতাংশ। গত এক বছরেই এক্সাইজ ডিউটি পেট্রলে ১৩ টাকা প্রতি লিটার এবং ডিজেলে ১৬ টাকা লিটার পিছু বাড়ানো হয়েছে। অথচ, ২০১৪ সালের মে মাসে ডিলারদের যে দামে কোম্পানিগুলি তেল বিক্রি করত, তা ২৪ শতাংশ কমেছে। কারণ এখন আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম সেই বছরের তুলনায় ব্যারেলে প্রায় ৩০ ডলার কম। তারপরও দাম কেন কমেনি? উত্তর সহজ, মোদি সরকারের এক্সাইজ ডিউটি বেড়েছে তিন গুণ। অর্থাৎ, এই মন্দার বাজারেও তেলের দাম থেকে মোদিজি ভাঁড়ার সমৃদ্ধ করছেন। গত অর্থবর্ষে গোটা দেশই কিন্তু থমকে গিয়েছিল লকডাউনে। গাড়ি কম চলেছে, উৎপাদন ক্ষেত্রও ধাক্কা খেয়েছে। তারপরও এই ‘শ্রীবৃদ্ধি’ নজর করার মতো। তার সুফল কি মানুষ পেয়েছে? পরিকাঠামো খাতে উন্নয়ন কতটা হয়েছে? করোনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে, গ্রামীণ স্বাস্থ্যক্ষেত্রে আমরা আজও ধুঁকছি। শুধু পকেট না ভরে সাধারণের স্বার্থে এগিয়ে আসার, সাধারণের মধ্যে টাকার জোগান বাড়ানোর দায়িত্ব কি কেন্দ্রের নয়? তাও কেবল রাজ্যের?
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বেসামাল দেশ। কেন্দ্রীয় সরকার এবার আর লকডাউনের ঝুঁকি নেয়নি। কিন্তু বিধিনিষেধ চালু হয়েছে কার্যত সব রাজ্যে। যেখানে সংক্রমণের হার বেড়েছে, সেই রাজ্যই হেঁটেছে কঠোর অনুশাসনের পথে। অর্থাৎ, বাস-ট্রেন নেই। অফিস বন্ধ, কারখানার ঝাঁপ ফেলা। পেটের দায়ে বাড়ির বাইরে বেরতে হলে ভরসা ব্যক্তিগত যান। ফলে মাসের বাজেট বাড়ছে অনেকটা। তবে তেলের দাম বৃদ্ধি শুধু ঘর-গৃহস্থে নয়, প্রভাব ফেলছে সর্বত্র। যার মধ্যে প্রধান হল অটোমোবাইল সেক্টর। গাড়ি বিক্রি কমলে ধাক্কা শুধু শিল্পের বহরে নয়, কাজ হারাচ্ছেন বহু মানুষও। অথচ, এই সেক্টরেই অগুনতি কর্মসংস্থান হয়। এই আঁচ এড়াতে পারে না ক্ষুদ্র ও অতি ক্ষুদ্র শিল্প সংস্থাগুলিও। কারণ, গাড়িশিল্পের বহু ছোটখাট যন্ত্রাংশ সরবরাহ করে এমএসএমই। ‘আচ্ছে দিনে’ তালা পড়ছে এখানেও। পেট্রল-ডিজেলের মাত্রাতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধিতে ভেঙে পড়ছে কর্মসংস্থানের মেরুদণ্ড।
তাও আমরা চুপ। প্রতিবাদ নেই। বিহারের আরারিয়া বা কিষানগঞ্জের অনেকেই এখন বেআইনিভাবে নেপাল থেকে পেট্রল-ডিজেল সংগ্রহ করছে। শুরু হয়েছে স্মাগলিং। ‘আত্মনির্ভর ভারতের’ নতুন কর্মসংস্থান। কেন? কারণ, নেপালে পেট্রলের দাম লিটার পিছু ৬৯ টাকা ৫০ পয়সা, আর ডিজেল ৫৮ টাকা ৮৮ পয়সা। কিছুটা সাশ্রয় হল, আবার ব্যবসাও। উপায়ই বা কী? কারণ জন্ম হয়েছে নতুন এক আশঙ্কার—চলতি অর্থবর্ষে মাথাপিছু আয় (পার ক্যাপিটা ইনকাম) কমতে চলেছে আরও ৯ শতাংশ। বাংলাদেশের পরিসংখ্যানও আমাদের থেকে ভালো। তাই চাল, ডাল, ভোজ্য তেল কিনতে হাত পুড়ছে আম জনতার। কেন্দ্রীয় সরকারি তথ্যই বলছে, এক বছরে ভোজ্য তেলের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। কেন? মোদি সরকারের যুক্তি অকাট্য, যে পরিমাণ তৈলবীজের উৎপাদন আমাদের দেশে হয়, তার তুলনায় চাহিদা অনেকটাই বেশি। ফলে আমদানি ছাড়া উপায় নেই। সরকারি হিসেব অনুযায়ী, ভারত এখন মোট চাহিদার ৬০ শতাংশ তৈলবীজই আমদানি করে। ফল—চড়চড় করে দাম বাড়ছে। ‘আত্মনির্ভরতা’ গুলি মারো... কেন্দ্র বলছে, ব্যবস্থা নেওয়া উচিত রাজ্যের। আর সাধারণ মানুষের টান পড়ছে পকেটে। শুধু ভোজ্য তেলের হিসেবটা দেখা যাক নীচের টেবিলে:
ভোজ্য তেল ২০২০ ২০২১
সূর্যমুখী ১১০ টাকা ১৭৫ টাকা
বনস্পতি ৯০ টাকা ১৪০ টাকা
সর্ষের তেল ১১৫ টাকা ১৭০ টাকা
সয়া তেল ১০০ টাকা ১৫৫ টাকা
এই সবই পাইকারি দাম। খোলা বাজারের দাম এর থেকে বেশি। যেমন কলকাতার বাজারে এখন সর্ষের তেলের দাম ১৯০ টাকার আশপাশে।
কংগ্রেস চেয়েছিল রাজস্ব বাড়াতে। অর্থনীতি যাতে খানিকটা চাঙ্গা হয়, তাই ধীরে ধীরে তেলের থেকে ভর্তুকি তুলে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল দ্বিতীয় ইউপিএ সরকার। এর প্রেক্ষিতে নতুন পরিকল্পনাও ছিল। মনমোহন সিং সরকার জানিয়েছিল, যে বাড়তি রাজস্ব এর থেকে আসবে, তা খরচ হবে পরিকাঠামো উন্নয়নে। সহ্য হয়নি বিজেপির। আর এখন সেই পথেই ছুটছে তারা। হাতে তরবারি নিয়ে। নাম তার সংস্কার। দিনান্তে মাথা কাটা যাচ্ছে মানুষের।
২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাস। বিজেপির সেই বাইক মিছিলে হেলমেট না পরার জন্য ট্রাফিক কেস হয়েছিল দিল্লির তৎকালীন বিজেপি সভাপতি বিনয় গোয়েল এবং গেরুয়া শিবিরের আর এক নেতা বিজেন্দর গুপ্তার। কিন্তু বিপুল হম্বিতম্বি এবং অশান্ত পরিস্থিতির জন্য ট্রাফিক সার্জেন্ট তাঁদের ১০০ টাকার স্পট ফাইন করতে পারেননি (যদিও সেটাই নিয়ম)। কেস পাঠানো হয়েছিল বাইকের রেজিস্ট্রেশন নম্বর অনুযায়ী... বাড়িতে। পরে দেখা গেল, বাইকের মালিক তাঁরা ছিলেনই না! কাজেই ফাইন দিয়েছিলেন অন্য কেউ। বিজেপির ওই দুই নেতা নন।
ধাপ্পা-ট্র্যাডিশন যে সরকারে এসেও বদলাল না!