শিক্ষার জন্য দূরে কোথাও যেতে পারেন। প্রেম-প্রণয়ে নতুন যোগাযোগ হবে। বিবাহের কথাবার্তাও পাকা হতে পারে। ... বিশদ
ত্বকের উপরের অংশে কড়া পড়ার প্রধান কারণ হল বারবার ঘর্ষণজনিত আঘাত। বহিস্ত্বকের কোনও অংশে বারবার ধাক্কা লাগলে এবং ঘর্ষণ হলে সেই অংশটি ক্রমশ মোটা এবং কালো হতে থাকে। চলতি ভাষায় ত্বকের এই অবস্থাকে আমরা কড়া বলে থাকি।
জানার বিষয় হল, কড়া পড়া আসলে ত্বকের প্রতিরোধ ব্যবস্থার অন্যতম রূপ। আসলে, আমাদের ত্বকের বহির্ভাগে থাকে শক্ত, প্রতিরোধী প্রোটিন যার নাম কেরাটিন। বহিস্ত্বকের কোনও অংশে বারংবার চাপ পড়লে বা ঘর্ষণ হলে সেখানে বেশি পরিমাণে কেরাটিন জমা হয় ও ত্বককে রক্ষা করার চেষ্টা করে।
কড়া পড়ে কোথায়?
খেয়াল করলে দেখা যাবে, মূলত হাত এবং পায়েই কড়া পড়ে।
পায়ে কড়া: পায়ে কড়া পড়ার অনেক ধরন থাকে। আমাদের পায়ের অ্যাঙ্কল-এ মেলিওলাস নামক হাড় উঁচু হয়ে থাকে, সেখানেও কড়া পড়ে এবং চামড়ায় মোটা কালো ছোপ পড়ে যায়। বিশেষ করে যাঁরা মাটিতে বাবু হয়ে বসে খাবার খান বা কাজ করেন, তাঁদের এই ধরনের সমস্যা বেশি হতে দেখা যায়।
হাঁটুতে কড়া: এছাড়া হাঁটুতে ভর দিয়ে কাজ করলেও, সেখানকার চামড়া মোটা হয়ে যেতে পারে। বিশেষ করে হাঁটুর উপর চাপ দিয়ে ঘর মুছলে বা কাজ করলে এই ধরনের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
পায়ের আঙুলে কড়া: পায়ের আঙুলেও কড়া পড়ে অনেকের। প্রধানত সর্বক্ষণ চটি পরে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করলে পায়ের আঙুলে কড়া হতে পারে। অতিরিক্ত ধুলোবালির মধ্যে চলাফেরা করার ফলে ক্রমাগত ঘর্ষণে আঙুলের গাঁটে কড়া পড়ে যায়। কারও কারও শক্ত জুতো পরার অভ্যেস থাকলেও আঙুলে কড়া পড়ে যেতে পারে।
অন্যান্য কড়া: শক্ত জুতোর ধারে ধাক্কা লেগে পায়ের পিছনদিকে গোড়ালির একটু উপরেও কড়া পড়ে যায়। আবার ফিতে দেওয়া জুতো পরার অভ্যেস থাকে অনেকের। সেই ফিতেয় ঘষা লেগেও পায়ের ত্বক মোটা এবং কালো হয়ে যেতে পারে। অন্যদিকে পায়ে ভারী নূপুর পরার কারণে বারবার ত্বকে অলঙ্কারের ঘর্ষণ লেগে ত্বক কালো এবং মোটা হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
হাতে কড়া: এছাড়া যাঁরা নিয়মিত ভারী জিনিসপত্র হাতে ধরে তোলেন, তাঁদের হাতের তালুতে কড়া পড়ে যায়। নির্মাণকার্যের সঙ্গে যুক্ত মানুষ, কলকারখানার শ্রমিকদের হাতের তালুতে এমন কড়া দেখা যায়। আবার জিমে গিয়ে মাত্রাতিরিক্ত ভারী ওজন তোলার মতো পরিশ্রম করলেও হাতের তালুতে কড়া পড়ে যেতে পারে। এছাড়া বক্সিং-এর মতো খেলার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি যাঁরা প্র্যাকটিসের সময় গ্লাভস পরেন না, তাঁদের আঙুলের গাঁটে কড়া পড়ে যেতে পারে।
চিকিৎসা—
কড়া পড়া প্রতিরোধ করার জন্য প্রাথমিক কর্তব্যই হল, ত্বকের ওই অংশে ঘর্ষণ প্রতিরোধ করার ব্যবস্থা। একই সঙ্গে ত্বকের ওই অংশে আর্দ্রতা বজার রাখাও সমভাবে জরুরি। খেয়াল রাখতে হবে, ময়েশ্চারাইজারে যেন কেরাটোলাইটিক এজেন্ট থাকে। কেরাটোলাইটিক এজেন্টের কাজ হল, ত্বকের যে অংশ শক্ত হয়ে গিয়েছে তাকে নরম করা এবং অতিরিক্ত ত্বক তৈরি হওয়া বন্ধ করা। খুব ভালো হয় স্যালিসাইলিক অ্যাসিড এবং ইউরিয়া থাকে এমন ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারলে। সঠিকভাবে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের সঙ্গে রোগীকে সাবান ব্যবহারের ক্ষেত্রেও সতর্ক হতে হবে। মাত্রাতিরিক্ত ক্ষারযুক্ত সাবান ব্যবহার করা চলবে না। খোলা হাতে ডিটারজেন্ট পাউডার ব্যবহার করাও যাবে না।
কিছু কিছু রোগীর অ্যাঙ্কলের মেলিওলাস হাড়ের অংশে কড়ার সঙ্গে একজিমাও হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে রোগীকে স্টেরয়েড এবং কেরাটোলাইটিক ক্রিম দিতে হয়।
শক্ত জুতো থেকে কড়া পড়লে নরম জুতো পরতে হবে। চটি পরা থেকে কড়া পড়লে পা ঢাকা জুতো পরা বাঞ্ছনীয়। পায়ে অলঙ্কার ব্যবহার থেকেও সতর্ক হতে হবে।
হাতের কড়া পড়া আটকাতে গ্লাভস পরে ভারী জিনিস তুলুন।
কড়া এবং কালো দাগ—
মুশকিল হল অনেকে কালো দাগ এবং কড়ার মধ্যে পার্থক্য করতে পারেন না। কড়া পড়ে মূলত হাতে আর পায়ে। আর শরীরের যে কোনও অংশে কালো দাগ নানা কারণে হতে পারে।
আঘাত থেকে কালো দাগ: শরীরের কোথাও আঘাত লাগার ক্ষত তৈরি হয়। এই ক্ষত শুকিয়ে যাওয়ার পর, সেখানে ঘন কালো দাগ তৈরি হতে পারে। এই অবস্থাকে বলে পোস্ট ইনফ্লেমেটরি হাইপার পিগমেন্টেশন।
লাইকেন প্ল্যানাস পিগমেনটোসাস: শরীরের রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতার গণ্ডগোলের কারণে এমন হয়। রোগীর মুখে, ঘাড়ে, চোখের পাশে কালো কালো ছোপ দেখা যায়। এই সমস্ত ক্ষেত্রে রোগীর উচিত সরাসরি চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।
আঁচিল: অনেকের মুখে, গলায় বড়সড় আঁচিল দেখা যায়। আঁচিলের জন্য দায়ী হিউম্যান প্যাপিলোমা নামে ভাইরাস। অনেকে আঁচিলের সঙ্গে কড়ার পার্থক্য করতে পারেন না। কেউ কেউ ধারালো ব্লেড দিয়ে আঁচিল কাটতে শুরু করেন। সেখান থেকে রক্তপাত ও সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। তাই মুখে কোনওরকম কালো প্যাচ হলে নিজের থেকে ডাক্তারি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়াই বাঞ্ছনীয়।
ক্যান্থোসিস নাইগ্রিকানস: ঘাড়ে, বগলের তলায় কালো ছোপ পড়ে ও চামড়া মোটা হয়ে যায়। এই সমস্যাকে প্রাথমিকভাবে কড়া পড়েছে বলে মনে হতে পারে। তবে এই সমস্যার নাম ক্যান্থোসিস নাইগ্রিকানস। সাধারণত স্থূলকায় ব্যক্তি, টাইপ-২ ডায়াবেটিসের সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তি, পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোমে আক্রান্ত মহিলাদের এই ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। মূল সমস্যার চিকিৎসা হলে এই ধরনের উপসর্গও সেরে যায়।
শুষ্ক ত্বক: বয়স বাড়ার সঙ্গে কিছু কিছু মানুষের ত্বক খুব শুষ্ক হয়ে পড়ে। কারণ আমাদের ত্বকে থাকা লিপিড বা তেলজাতীয় পদার্থক্ষরণকারী গ্রন্থি। এই গ্রন্থির নাম সিবেসিয়াস গ্ল্যান্ড। বয়স বাড়ার সঙ্গে এই গ্ল্যান্ডগুলি সংকুচিত হতে থাকে। ফলে লিপিডের অভাবে ত্বকের টানটান ভাব কমে যায়। এছাড়া বয়ঃবৃদ্ধিজনিত কারণে ঘর্মগ্রন্থিগুলির আকারও ছোট হতে থাকে। ফলে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। এই কারণে বয়স্কদের ত্বক ঝুলে যায় ও ভাঁজের অংশগুলি মোটা হয়ে যায়। তাই বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ত্বকে বাইরে থেকে ময়েশ্চারাইজার দিতে হবে।
তবে বয়সবৃদ্ধি ছাড়াও অন্যান্য কিছু অসুখের কারণেও ত্বক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। উদাহরণ হিসেবে, ডায়াবেটিস, জিঙ্কের ঘাটতি, হাইপোথাইরয়েডিজম, এন্ড স্টেজ রেনাল ডিজিজ, লিম্ফোমা, এইচআইভি, সোগ্রেন সিনড্রোম-এর কথা বলা যায়।
আবার কিছু ওষুধ যেমন ডাইইউরেটিক, কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ, অ্যান্টি-আন্ড্রোজেনস এবং সিমেটিডাইন নিয়মিত সেবন করলেও ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি, বাচ্চাদের মধ্যে কড়া পড়ার সমস্যা সাধারণত দেখা যায় না। তবে বাচ্চাদের অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস রোগ হলে এবং তা সেরে যাওয়ার পরে এক ধরনের কালো দাগ দেখা দেয় ত্বকে। তবে বাচ্চাদের ত্বকে কোনও ধরনের কালো দাগ দেখলে, নিজের থেকে কোনও সিদ্ধান্ত নেবেন না। আগে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
সাক্ষাৎকার: সুপ্রিয় নায়েক