শিক্ষার জন্য দূরে কোথাও যেতে পারেন। প্রেম-প্রণয়ে নতুন যোগাযোগ হবে। বিবাহের কথাবার্তাও পাকা হতে পারে। ... বিশদ
কানে ঢুকলে
সাধারণত ছোটরা খেলতে গিয়ে বা কৌতূহলবশত কানে ছোটখাট বস্তু ঢুকিয়ে ফেলে। তালিকায় মটরশুঁটি থেকে শুরু করে লোহার ছোট বল, কিছুই বাদ থাকে না। তবে বড়দের সঙ্গেও এমনটা হওয়া আশ্চর্যের কিছু নয়। এই জটিল পরিস্থিতিতে সময় থাকতে থাকতে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
সাধারণত তিন ধরনের বস্তু কানে ঢুকে যেতে পারে— পোকামাকড় বা লিভিং ফরেন বডি, উদ্ভিজ্জ বস্তু বা ভেজিটেবল ফরেন বডি (ছোলা, মটরশুঁটি ইত্যাদি) এবং অজৈব পদার্থ বা নন লিভিং ফরেন বডি (প্লাস্টিক, লোহা ইত্যাদি)।
শেষ থেকে শুরু করা যাক। অজৈব পদার্থ কানে ঢুকলে এই কয়েকটি বিষয়ে নজরে রাখুন— বস্তুটিকে টেনে বের করে দিতে পারলে, বের করে দিন। তবে বেশি টানাটানি-খোঁচাখুঁচি করে চেষ্টা করবেন না। বেশি খোঁচাখুঁচি করলে কানের পর্দা বা কানের ভিতরের অন্যান্য অংশের ক্ষতি হতে পারে। এ সময় কতগুলি বিষয় মাথায় রাখবেন।
১. বস্তুটি বাইরে বের করার মতো অবস্থায় থাকলেই বের করার চেষ্টা করুন। ২. কানে ব্যথা হচ্ছে না, কানের ভিতর ঢুকে যাওয়া বস্তুটি ধারালো নয়, এমন অবস্থায় খুব বেশি তাড়াহুড়ো বা উত্তেজিত হওয়ার দরকার নেই। এটা ততটাও ইমার্জেন্সি নয়। সময় নিয়ে একজন ইএনটি চিকিৎসকের কাছে আসুন ৩. কানে ব্যথা হচ্ছে বা কানের ভিতরে ঢুকে যাওয়া বস্তুটি ধারালো ধরনের হলে নিজে থেকে বের করার কোনও চেষ্টাই করবেন না। বদলে যত শীঘ্র সম্ভব রোগীকে নিয়ে নিকটবর্তী হাসপাতাল বা ইএনটি বিশেষজ্ঞের কাছে যান।
উদ্ভিজ্জ বস্তু ঢুকে যাওয়া: এক্ষেত্রে সেই বস্তুর কানের ভিতরে বেড়ে ওঠার ভয় থাকে। একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। ধরুন কানে ঢুকেছে মটরশুঁটি। এবার দীর্ঘ সময় সেই মটরশুঁটি কানে থেকে গেলেই সমস্যা তৈরি হয়। এক্ষেত্রে মটরশুঁটি কানের ঘাম ও আবহাওয়ার কারণে ফুলে যেতে পারে। ফলে কানের ব্যথা বাড়ে। সেই বস্তুটিকে বের করার সময়ও বেগ পেতে হয়। তাই এক্ষেত্রে একদণ্ড সময় নষ্ট না করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে আনতে হবে। এর আগে অবশ্য নির্দিষ্ট কানে দুই-এক ফোঁটা গ্লিসারিন দেওয়া দরকার। কানে গ্লিসারিন দিলে উদ্ভিজ্জ বস্তুটি আকারে ছোট হয়ে যাবে। কমবে ব্যথা। আর বস্তুটিকে বের করতেও সমস্যা হবে না। তাই কারও সঙ্গে এমন ঘটলে প্রথমেই এই কাজটি সেরে ফেলা দরকার। তবে মনে রাখবেন, গ্লিসারিনের বদলে গরম তেল বা ওই জাতীয় কোনও কিছু ব্যবহার করা উচিত হবে না।
কানে পোকা ঢুকে যাওয়া: এই ঘটনার প্রাথমিক সমস্যা হল অস্বস্তি। পোকাটি কানের ভিতর নড়ে-চড়ে, উড়ে বেড়ায়। কানে ভোঁ-ভোঁ শব্দ শোনা যায়। সমস্যা সমাধানে প্রথমেই পোকাটিকে মেরে ফেলা দরকার। কিন্তু কীভাবে? কানের পর্দায় ফুটো না থাকলে জল দিতে পারেন। সব থেকে ভালো হয়, সরষের তেল-নারকেল তেল জাতীয় যে কোনও ব্লান্ট অয়েল কানে দিলে। এই পদ্ধতি অবলম্বন করলে পোকাটির জীবননাশ হবে নিশ্চিত। মিলবে স্বস্তি। এরপর ধীরে সুস্থে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে এসে পোকাটি বের করে নিতে পারেন।
বাচ্চাদের অভিযোগ: অনেক সময় বাচ্চারা অভিভাবকদের বলে, কানে কিছু ঢুকে গেল মনে হচ্ছে। কানটা ফড়ফড় করছে। অভিভাবকরা জেনে রাখুন, সর্দির কারণেও এমনটা হতে পারে। এক্ষেত্রে নাকের সঙ্গে কানের সংযোগকারী নালীর (ইউস্টেশিয়ান নালী) মধ্যে সর্দি জমে। তবে বিনা কারণে ঝুঁকি নেওয়ার কোনও মানে নেই। সমস্যা দেখা দিলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছেই আনুন।
কানে জল ঢোকা: বেশ কিছু মানুষ কানে জল ঢোকার সমস্যার অভিযোগ করেন। তবে সত্যি বলতে, কানে ঢোকা জল আপনা থেকেই বেরিয়ে আসা বা উবে যাওয়া দরকার। তাই বেশি চিন্তা নয়। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলেই সমস্যা মিটে যাবে। চাইলে কানে গরম সেক দিতে পারেন। তবে বারংবার কানে জল ঢুকে যাওয়ার ঘটনা ঘটার অর্থ হতে পারে কানের পর্দায় ছিদ্র রয়েছে। তাই বারবার এই ঘটনা ঘটলে একবার অন্তত চিকিৎসকের কাছে আসতে হবে। পাশাপাশি কানে ইনফেকশন রয়েছে, জল ঢোকার কারণে কান ভারী লাগছে, কানে ব্যথা হচ্ছে, ভীষণ অস্বস্তি— এমন লক্ষণগুলির একটি থাকলেও চিকিৎসকের কাছে যাওয়া দরকার।
নাকে কিছু ঢুকলে
কানের মতোই নাকে কোনও কিছু ঢুকলেও, সমস্যার শেষ থাকে না। ধারালো কোনও বস্তু না হলে, গোল বস্তু না হলে, ব্যক্তি ছটপট না করলে, বস্তুটি বের করার মতো অবস্থা থাকলে— আঙুল বা চিমটে দিয়ে বের করে নিতেই পারেন। তবে সাবধান থাকতে হবে। অতিরিক্ত চেষ্টা নৈব নৈব চ।
বাচ্চাদের সমস্যা: বাচ্চারা অনেকসময় কোনও বস্তুকে নাকের ভিতর ঠেলতে ঠেলতে অনেক গভীরে নালীর মধ্যে ঢুকিয়ে ফেলে। এমন অবস্থায় খালি চোখে নাকের ভিতরে সেই বস্তুটিকে আর দেখা সম্ভব হয় না। এখানে মনে রাখার বিষয় হল, নাকে কোনও বস্তু ঢুকলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সেই নাকে সর্দি হয়। জল পড়ে টপটপ করে। তখন নাকে বস্তু ঢুকে রয়েছে বলে ধরে নিয়ে এগতে হয়। বস্তুটি ধাতব হলে চিকিৎসকরা এক্স-রে করে নিশ্চিত হন। ধাতব বাদে অন্য ধরনের কোনও বস্তু হলে নাকের মধ্যে ক্যামেরাযুক্ত নল ঢুকিয়ে দেখতে হয়।
বস্তু এবং তার অবস্থান সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়ার পর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বিভিন্ন যন্ত্র ব্যবহার করে সেই বস্তুটিকে বাইরে বের করে দেন। তবে বেশি ভয় পাওয়ার কিছুই নেই, ঠিক সময়ে চিকিৎসকের কাছে আসলেই সমস্যা মিটে যায়।
গলায় ঢুকলে
গলায় কাঁটা ঢুকলে: রসিয়ে মাছ খেতে খেতে গলায় কাঁটা ফোটানো বাঙালির সংখ্যা নেহাত কম নয়। ভুক্তভোগী মাত্রই জানেন, বিষয়টা ঠিক কতটা অস্বস্তিকর। এরই মাঝে এপাশওপাশ থেকে ছুটে আসে উপদেশ। ভাত খাও, রুটি খাও, কলা খাও, বিড়ালের পা ধরো ইত্যাদি ইত্যাদি। বিড়ালের পা ধরার মতো অবৈজ্ঞানিক ধারণাকে প্রথমেই বাদের খাতায় ফেলে দিতে হবে। তালিকায় রইল ভাত, কলা, রুটির মতো খাদ্যবস্তু। সত্যি বলতে, কিছু ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি অবলম্বন করে কাঁটা নেমে যায়। তবে মুশকিল হল, এই পদ্ধতির কারণে বেশিরভাগ সময়ই কাঁটা গলার আরও ভিতরে ঢুকে যায়। তখন সেই কাঁটা বের করে আনাও ততোধিক কঠিন হয়ে পড়ে। তাই প্রথমেই এসব ধারণা থেকে দূরে সরে আসুন।
মাংসের টুকরো, ধানের তুষ: তবে শুধু মাছের কাঁটা নয়, মাংসের টুকরো, ধানের তুষ সহ আরও হাজারো জিনিস গলায় গেঁথে যেতে পারে। সাধারণত টনসিলে বা জিভের পিছনের দিকেই এই বস্তুগুলি গেঁথে যায়। এক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে হাত দিয়ে বের করার চেষ্টা করা যেতে পারে। জলপান করেও দেখা যেতে পারেন। জলপানে সাধারণত আটকে থাকা বস্তু না বেরলেও, সেই বস্তু কোথায় আটকে রয়েছে, তা বোঝা যায়।
ঢুকে থাকা বস্তু না বেরিয়ে আসলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে আসতে হবে। মুখের মধ্যে, টনসিলে কোনও বস্তু থাকলে নির্দিষ্ট যন্ত্রের মাধ্যমে খুব সহজেই সেই বস্তুটিকে বের করে আনা সম্ভব। গলার ভিতরে শ্বাসনালীর উপরের অংশে ফুটে থাকলে, জিভ টেনে ধরে আয়না দিয়ে দেখে ইনডাইরেক্ট ল্যারিঙ্গোস্কোপের মাধ্যমে বের করে আনতে হয়। এছাড়াও প্রয়োজনমতো অন্যান্য বিভিন্ন পদ্ধতিরও ব্যবহার চলে।
পেনের ক্যাপ, খেলনা: অনেক সময় বাচ্চারা খেলতে খেলতে পেনের ক্যাপ, খেলনার টুকরো গলায় আটকে ফেলে। এই সমস্যা অত্যন্ত জটিল রূপ নিতে পারে। তাই জানামাত্রই কাছের হাসপাতাল বা ইএনটি চিকিৎসকের কাছে যান।