শিক্ষার জন্য দূরে কোথাও যেতে পারেন। প্রেম-প্রণয়ে নতুন যোগাযোগ হবে। বিবাহের কথাবার্তাও পাকা হতে পারে। ... বিশদ
একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশক পেরিয়ে শিশুদের ক্যান্সার চিকিৎসার সাফল্যের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় সত্তর শতাংশ। এই পরিসংখ্যান যেমন আশাপ্রদ তেমন নিরাশাজনকও বটে। শুধুমাত্র অভিভাবকদের অজ্ঞতার কারণে দেশের বহু ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুর আজও সঠিক চিকিৎসা হয় না।
শিশু ক্যান্সার মূলত দুই প্রকার। রক্তজনিত ক্যান্সার বা লিউকেমিয়া এবং অন্যটি হল টিউমার। রক্ত জনিত ক্যান্সার বা লিইকেমিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের সংখ্যাই বেশি। লিইকেমিয়ার কারণ না জানা গেলেও ডিএনএ অপত্যকোষ বিভাজনকে দায়ী করা যেতে পারে। পাঁচ প্রকার লিইকেমিয়ার মধ্যে জটিল অস্থিমজ্জার ক্যানসার (অল-অ্যাকিউট লিমফোব্লাস্টিক লিউকেমিয়া) প্রধান। এই অবস্থায় রক্তে শ্বেত কনিকার সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। ব্লাড ট্রান্সফিউশন তখন অনিবার্য হয়ে পড়ে। মনে রাখতে হবে, যদি অভিবাবক তার সন্তানের রক্তাল্পতা, ঘন ঘন সংক্রমণ ইত্যাদি উপসর্গ উপেক্ষা না করেন ও প্রাথমিক স্তরে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ও পরীক্ষা পূর্বক রোগ নির্ণয় হয়, তবে ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব।
যেহেতু এই চিকিৎসা যথেষ্ট ব্যায়বহুল ও সময়সাপেক্ষ, তাই অনেকক্ষেত্রে মাঝপথে রোগীর পরিবার অর্থাভাবে চিকিৎসা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন। অনেকে অজ্ঞানতার কারণে ক্যান্সারের উপসর্গগুলিকে অবহেলা করেন।
দুঃখের বিষয়, প্রত্যন্ত গ্রামেএবং ছোট শহরে এখনও ক্যান্সারকে ছোঁয়াচে রোগ মনে করা হয়। এক্ষেত্রে নিয়মিত সরকারি ও বেসরকারি স্তরে গ্রামীণ হাসপাতাল, বিদ্যালয়, পঞ্চায়েতে সচেতনতা শিবির করা প্রয়োজন।
পুনর্বাসনও জরুরি
ক্যান্সার চিকিৎসায় সুস্থ হওয়ার পর সামাজিক ও শারীরিক পুনর্বাসন একান্ত প্রয়োজন। আমাদের দেশে এর জন্য কোনও পৃথক পরিকাঠামো আজও গড়ে ওঠেনি।
একবার হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে ফিরে যাওয়ার পর অধিকাংশ শিশুর পরিবার না হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করেন, না হাসপাতাল রোগীর পরিবারের সঙ্গে। ফলে এত লড়াই করে চিকিৎসকদের নিরলস প্রচেষ্টায় যে ৭০ শতাংশ শিশু সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যায় তার কত শতাংশ নিয়মিত ওষুধ খেয়ে চিকিৎসকের নির্দেশ অনুসারে আবার পরামর্শ নিতে ফেরত আসে? সমীক্ষা বলছে মাত্র তিন থেকে চার শতাংশ! অর্থাৎ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরাদের একটা বড় অংশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আমরা অন্ধকারে।
তাই বাচন ভঙ্গি (স্পিচ থেরাপি), ব্যাবহারিক আচরণ(অক্যুপেশনাল থেরাপি), মাংসপেশির সক্ষমতা (ফিজিওথেরাপি), সঙ্গীতের মাধ্যমে (মিউজিক থেরাপি) মস্তিষ্কের কোষ স্বাভাবিক করে তোলা ইত্যাদি অতি গুরুত্বপূর্ণ থেরাপি সুস্থ হয়ে ওঠার পক্ষে অত্যন্ত জরুরি।
দুর্ভাগ্যবশত হাতে গোনা দুই একটি সংস্থা ছাড়া শিশু ক্যান্সার পুনর্বাসনের এই পরিকাঠামো আমাদের দেশেই।
অচিরেই শহর কলকাতায় ইনস্টিটিটিউট অফ চাইল্ড হেল্থের উদ্যোগে এবং রোটারি ও রোটারাক্ট ইনটারন্যশনাল ডিস্ট্রিক্ট ৩২৯১ এর সহায়তায় ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেল্থ-এ গড়ে উঠছে স্বয়ংসম্পূর্ণ শিশু ক্যান্সার পুনর্বাসন কেন্দ্র। সেখানে প্রতিটি ক্যান্সার মুক্ত শিশুকে সম্পূর্ণ বিনামুল্যে পরিষেবা দেওয়া হবে।