শিক্ষার জন্য দূরে কোথাও যেতে পারেন। প্রেম-প্রণয়ে নতুন যোগাযোগ হবে। বিবাহের কথাবার্তাও পাকা হতে পারে। ... বিশদ
করোনারি আর্টারি রোগ একটি ঘাতক রোগ। এই রোগটি ভারতে গত ২০ বছর ধরে ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই অসুখে আক্রান্তদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। আর সব থেকে ভয়ের বিষয় হল, বয়স ৩০-এর কোটায় থাকা নবীন প্রজন্মের মধ্যেও এই রোগ দেখা দিচ্ছে। শুনতে অবাক লাগলেও ২৫-৩০ বছরের মধ্যেও হার্ট অ্যাটাক হচ্ছে। এবং তা বাড়ছেও।
প্রিম্যাচিওর করোনারি আর্টারি ডিজিজ
৫৫ বছরের কমবয়সি পুরুষ এবং ৬৫ বছরের কমবয়সি মহিলাদের মধ্যে এস্ট্যাবলিশড কোলেস্টেরল প্লাক দেখা গেলে, সেই অবস্থাকে প্রিম্যাচিওর করোনারি আর্টারি ডিজিজ বলা হয়। কিন্তু এই ধারণাটি ইউরোপিয়ান এবং আমেরিকান রোগীদের ক্ষেত্রে বেশি প্রযোজ্য। এই একই বয়সের সীমায় ভারতীয়দের ক্ষেত্রেও এমনটা দেখা যাবে কি না, তা অবশ্য আলোচনার বিষয়। কারণ ইউরোপিয়ানদের তুলনায় ভারতীয়দের মধ্যে করোনারি আর্টারি ডিজিজ ইন ইয়াং (সিএডিওয়াই) বেশি দেখা যাচ্ছে।
ভারতীয়দের মধ্যে করোনারি আর্টারি ডিজিজের কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য
৪০ বছরের কমবয়সি ভারতীয়দের মধ্যে করোনারি আর্টারি ডিজিজ খুবই স্বাভাবিক এক্ষেত্রে বছর ২০-এর গণ্ডি পেরলেই আর্টেরিয়াল ওয়ালের ওপর কোলেস্টেরল জমাট বাঁধা আরম্ভ হয়ে যায় ৩০ বছর পার হওয়ার পর গুরুতর হার্ট অ্যাটাক হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায় এই রোগে প্রধানত পুরুষেরা আক্রান্ত হয়। পুরুষ ও মহিলাদের এই রোগের অনুপাত হল ৯:১। ইস্ট্রোজেন হর্মোন মহিলাদের এক্ষেত্রে সুরক্ষা দেয়। তবে বর্তমানে প্রিম্যাচিওর মেনোপজের কারণে মহিলাও এই সমস্যায় ভুগতে শুরু করেছেন এক্ষেত্রে অতীতে বুকে ব্যথা বা অ্যানজাইনার ইতিহাস না থাকলেও অল্পবয়সিরা গুরুতর হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন।
করোনারি আর্টারি ডিজিজের ঝুঁকির কারণগুলি কী?
ডায়াবেটিস এবং প্রিডায়াবেটিস দু’টো রোগই করোনারি আর্টারি ডিজিজের কারণ হতে পারে। এর ফলে অ্যাথেরোক্লেরোসিস দীর্ঘ দিন আগেই আরম্ভ হয়ে যায়।
উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশনের কারণেও হতে পারে করোনারি আর্টারি ডিজিজ।
শরীরের কোলেস্টেরলের সমস্যা (ডিসলিপিডেমিয়া) থাকলেও মানুষের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে।
মোটা শরীর বা স্থূলত্বও এই রোগের অন্যতম কারণ।
নিকট আত্মীয়ের মধ্যে কারও করোনারি আর্টারি ডিজিজের ইতিহাস থাকলে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
মানুষের ধূমপানের প্রবণতাও বেড়েছে কয়েকগুণ। আবার বহু মানুষ পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছেন। তার থেকেও সমস্যা বাড়ছে।
কমবয়সি স্কুল ও কলেজে যাওয়া শহুরে ছাত্র-ছাত্রীদের বাইরে খেলাধুলা কমে গিয়েছে। পাশাপাশি মানুষ দৈনিক জীবনে এখন অনেক বেশি সময় বসে কাটায়।
আধুনিক জীবনযাপনে দুশ্চিন্তা বেড়েছে।
নাইট ডিউটির ঠেলায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে চাকরি করা মানুষের ঘুমের স্বাভাবিক সময় ও অভ্যেস বদলেছে।
রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস থেকে এই রোগে অক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। বিশেষত মহিলাদের মধ্যেই এমনটা বেশি হতে দেখা যায়।
শহুরে এলাকায় এবং মেট্রো শহরে বায়ু দূষণ এই রোগের সম্ভাব্য ঝুঁকির কারণের মধ্যে খুব সম্প্রতি যোগ করা হয়েছে।
আর এই সবের কারণে এই রোগের মোকাবিলা করা আরও কঠিন হয়ে উঠেছে।
চিকিৎসা
গত ২০ বছর ধরে আমরা লক্ষ করছি, বয়স ৩০-এর কোটায় থাকা বহু রোগী অ্যাকিউট মায়োকার্ডিয়াল ইনফ্রাকশন নিয়ে ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডে ভর্তি হচ্ছেন। এই রোগীর চিকিৎসায় জরুরি ভিত্তিতে করোনারি অ্যাঞ্জিওগ্রাফি করার প্রয়োজন পড়ছে। অনেক ক্ষেত্রে যতক্ষণে তাঁরা চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আসছেন, ততক্ষণে তাঁদের হার্টের গুরুত্বপূর্ণ অংশের ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। এর ফলে দুর্বল হার্ট নিয়ে তাঁরা সারা জীবনের জন্য সমস্যায় থাকবেন। কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা আরও জটিল আকার ধারণ করে জীবন নিয়ে টানাটানি পর্যন্ত ফেলে দিচ্ছে।
আমরা দেখেছি, গত ১০ বছরে বয়স ২০ থেকে ৪০-এর মধ্যে থাকা ২ হাজারেরও বেশি রোগীকে হয় অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টির মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়েছে, কিংবা তাঁদের বাইপাস সার্জারি করতে হয়েছে। আর এই সংখ্যাটা প্রতি বছরই আশঙ্কাজনকভাবে আরও বেড়েই চলেছে।
এই সংখ্যা বৃদ্ধির কারণটা আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে যখন আমরা আমাদের ডেমোগ্রাফিক চিত্রের দিকে তাকাই। দেশের মোট জনসংখ্যার ৬৫ শতাংশের বেশি মানুষের বয়স ৩৫ বছরের কম। এই কমবয়সিদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি এপিডেমিওলজিস্ট এবং চিকিৎসকদের কাছে চিন্তার।
সমাধান
এই সমস্যা সমাধানে ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন এবং রক্তে কোলেস্টেরলের আধিক্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। তাই প্রতিনিয়িত চিকিৎসকের পরামর্শে থাকা বাঞ্ছনীয়।
পাশাপাশি কমবয়সিদের মধ্যে ধূমপান ত্যাগ করার প্রবণাত বাড়াতে হবে।
খেলাধূলা ও শারীরিক ব্যায়ামে উৎসাহ দেওয়ার জন্য জনসচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন।
প্রাণায়াম করলে মানসিক শান্তি মিলবে।
সমস্যার বিষয় হল, করোনারি আর্টারি রোগে একবার আক্রান্ত হলে বাকি জীবনে চিকিৎসার আওতায় থাকতে হয়। এটা খরচাসাপেক্ষ বিষয়। তাই প্রতিটি মানুষের স্বাস্থ্য বিমার আওতায় থাকা দরকার।