পরিবারের সদস্যদের পারস্পরিক মতান্তর, কলহে মনে হতাশা। কাজকর্ম ভালো হবে। আয় বাড়বে। ... বিশদ
কোনও কল্পনার ‘মজার দেশ’ নয়। এই পৃথিবীতেও এমন মাছ রয়েছে, যারা মাটিতে হাঁটতে পারে! তারা অবশ্য রুই-কাতলা নয়। আসলে এই পৃথিবীতে প্রাণীজগতের মতো বৈচিত্র্যময় আর কোনও কিছুই নয়। মৎস্যরাজ্যও এর ব্যতিক্রম নয়। হাজার হাজার প্রজাতির মাছ রয়েছে পৃথিবীতে। আমরা সবাই জানি, মাছ জলেই থাকে। কিন্তু এমন কিছু মাছ রয়েছে, জল ও স্থলে উভয় জায়গাতেই দিব্যি বেঁচেবর্তে থাকতে পারে। এমনই একটি মাছ মাড-স্কিপার। আর সবচেয়ে বড় কথা জীবনের একটা বড় অংশই এই মাছগুলি ডাঙাতেই থাকে। কোথায় পাওয়া যায় এধরনের মাছ? বিশ্বের বহু জায়গাতেই। এমনকী, আমাদের সুন্দরবনেও জলে-ডাঙায় ঘোরাফেরা করে মাড-স্কিপার। আবার দক্ষিণ কোরিয়ার মূল ভূখণ্ডের দক্ষিণে সানচিওন বে-তেও এই মাছের বসতভূমি। এই জায়গাটি সাগরও নয়, আবার ডাঙাও নয়। ভাটার সময় সাগর বহুদূরে চলে যায়। জেগে ওঠে কাদাভূমি। সুন্দরবনের মতো এমন পরিবেশেই বেশি দেখতে পাওয়া যায় মাড-স্কিপারদের। এই মাছের ৩২টি প্রজাতি রয়েছে। তাদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট্ট ‘শাটল হপফিস’।
সুন্দরবনে একশোরও বেশি প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। যার মধ্যেই রয়েছে মজাদার এই উভচর মাছ ‘মাড স্কিপার’। সুন্দরবনে অবশ্য মাড-স্কিপারের অঞ্চলভেদে স্থানীয় নাম রয়েছে। যেমন কোনও কোনও জায়গায় একে ‘ডাহুক মাছ’ বলে ডাকা হয়। বিশেষ করে ভাটার সময় হেঁটে বেড়াতে দেখা যায়। ওদের কি পা আছে যে হাঁটতে পারে? না, এই মাছগুলির পা নেই। পাখনাগুলিকেই পায়ের মতো ব্যবহার করে এরা। আর পুরুষ মাড-স্কিপাররা তাদের লেজে ভর দিয়ে নাচতেও পারে। তাহলে বুঝতেই পারছ, শারীরিক গঠনই এদের অন্য মাছদের তুলনায় আলাদা করেছে। জলে সাঁতার কাটার মতো পাখনা এদের রয়েছে। সেই সঙ্গে ডাঙায় হাঁটার মতো বিশেষ পাখনাও এদের শরীরে থাকে।
অন্যান্য মাছের মতো মাড-স্কিপাররা ফুলকা দিয়ে শ্বাস নেয়। সেই সঙ্গে ত্বক, মুখ ও গলার আস্তরণ দিয়েও অক্সিজেন নিতে পারে। বক্ষ সংলগ্ন জোড়া পাখনা (পেক্টোরাল ফিন) ব্যবহার করে এরা নিজেদের সামনের দিকে এগিয়ে
নিয়ে যেতে পারে। অনেকটা হামাগুড়ি দেওয়ার মতো। সেইসঙ্গে কাদামাটিতে একটার পর একটা লাফ (স্কিপ) দিয়ে এগতে পারে। লবণাক্ত কাদাভূমিই এদের বসবাসের উপযুক্ত জায়গা। কাদামাটিতে গর্ত খুঁড়ে থাকে এরা।
মাড-স্কিপার জলে কম, ডাঙাতেই বেশি থাকে। জীবনচক্রের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ এরা ডাঙাতেই কাটায়। মাড-স্কিপারদের কোনও কোনও প্রজাতি ১২ ইঞ্চির মতো লম্বা হতে পারে। এদের বৈজ্ঞানিক নাম পেরিয়ফথ্যালমাস। এদের শরীরের রং বাদামি সবুজ। পাখনার নানা ধরনের রং থাকে। এরা যখন ডাঙায় দ্রুত হেঁটে চলে, তখন মনে হয় যেন কোনও রঙিন প্রজাপতি কাদা মেখে দৌড়ে বেড়াচ্ছে।
এরা দেখতে সরু লম্বা ধরনের। সামনের দিক থেকে দেখলে মাথাটি কিছুটা ব্যাঙের মতো মনে হয়। মাথার একেবারে উপরে রয়েছে দু’টি গোল জ্বলজ্বলে চোখ। দু’টি চোখ আলাদাভাবে কাজ করতে পারে। আর চারপাশে প্রায় ৩৬০ ডিগ্রিই এরা দেখতে পায়। জলের তুলনায় ডাঙার এদের দৃষ্টিশক্তি বেশি হয়। মাড স্কিপার মাংসাশী। বিভিন্ন ক্ষুদ্র মাছ, কাঁকড়া, পোকামাকড়ের ডিম, কীটপতঙ্গ এদের খাবার।