পরিবারের সদস্যদের পারস্পরিক মতান্তর, কলহে মনে হতাশা। কাজকর্ম ভালো হবে। আয় বাড়বে। ... বিশদ
হাবিবুল্লার বাবা এলাকায় মুন্নাভাই নামেই পরিচিত। ভালো নাম মহম্মদ ইসমাইল। চার ভাইকে নিয়ে ছিল যৌথ পরিবার। ট্রান্সপোর্টের অভিন্ন ব্যবসা চালাতেন। পরিবারের আর্থিক অনটন ছিল না। কিন্তু চার ভাই পৃথক হয়ে যাওয়ায় পরিবহণ ব্যবসায় ভাটা আসে। মুন্নাভাই চরম আর্থিক সঙ্কটে পড়েন। তা সত্বেও অত্যন্ত পরিশ্রম করে বাড়িতে ছাগল প্রতিপালন করে ছেলে, মেয়েদের উচ্চশিক্ষিত করতে চেয়েছিলেন মুন্নাভাই। সেই ছেলেরই মাথায় ঢুকেছে, ‘তালিবান যদি আফগানিস্তানের শাসক হতে পারে আমরা কেন ভারত শাসন করতে পারব না।’ হাবিবুল্লাহের এহেন জঙ্গি মতাদর্শের খবর চাউর হতেই ঘুম উড়েছে পাড়া-প্রতিবেশীদের।
গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, কাঁকসায় পানাগড় দুবরাজপুর রাজ্য সড়কের কাছেই পৈরাগপুরের বাসিন্দা জঙ্গি মডিউল শাহাদতের বাংলার মাথা হাবিবুল্লা। শনিবার দুপুরে অভিযান চালিয়ে তাকে জালে তোলে এসটিএফ। রবিবার সকালে সেখানে গিয়ে দেখা গেল থমথমে পরিবেশ। হাবিবুল্লাদের একতলা বাড়ি। পিছনের অংশে বাঁধা বহু ছাগল। মূল ঘরের দরজা অবশ্য বন্ধ। পাশের বাড়ির এক মহিলা বলছিলেন, ‘ছোট থেকে দেখছি ছেলেটাকে। পড়াশোনার পাশাপাশি ছাগল প্রতিপালন করে বাবা-মাকে সাহায্য করত। খুব কষ্ট করে ওর বাবা, মা ভাই বোনকে পড়াচ্ছিলেন। সে যে এমন হবে স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি।’ হাবিবুল্লার বাড়ির পাশেই দোকান শ্যামল পালের। তাঁর কথায়, ‘পড়াশোনার জন্য বাইরে যাওয়ার পাশাপাশি প্রতি শুক্রবার নামাজ পড়তে যেত হাবিবুল্লা। এছাড়া কখনও আমরা ওকে বাড়ির বাইরে যেতে দেখিনি। সেভাবে কারও সঙ্গে মিশত না। আর পাঁচজন মেধাবী ছাত্রের মতো আচরণ ছিল ওর। ও যেমন এমন জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত, তা ভাবতেই পারিনি। একটু ভয় তো লাগছেই।’
জানা গিয়েছে হাবিবুল্লার দিদি ইসমাতার খাতুনও পড়াশোনায় অত্যন্ত ভালো ছিলেন। কাঁকসার রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাপীঠের ছাত্রী ছিলেন তিনি। পরে বর্ধমানের বিবেকানন্দ কলেজ থেকে কেমিস্ট্রি নিয়ে স্নাতক হয়ে এখন একটি মাদ্রাসায় পড়ান। হাবিবুল্লাও মাধ্যমিক পর্যন্ত রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাপীঠেই পড়েছে। ভাই, বোন মেধাবী হলেও তাঁর সহপাঠীদের দাবি, ওদের মধ্যে ধর্মীয় গোঁড়ামি ছিল। আর সেই দুর্বলতাকে কাজে লাগায় বাংলাদেশের জঙ্গিরা। তদন্তকারীদের দাবি, হাবিবুল্লা নতুন জঙ্গি মডিউলের মাথা হয়ে উঠলেও তাঁর কর্মকাণ্ড মাত্র দু’বছরের। হাবিবুল্লার মেধার পরিচয় জঙ্গিদের কাছে যখন পৌঁছয় তখন সে একাদশ শ্রেণিতে পড়ে। তারপরই তাকে টার্গেট করে জেহাদি বানানোর চেষ্টা শুরু হয়। কিছুদিনের মধ্যেই সে পাকাপোক্ত জঙ্গি হয়ে ওঠে। এরপরই তাঁকে সংগঠন বাড়ানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়।