পরিবারের সদস্যদের পারস্পরিক মতান্তর, কলহে মনে হতাশা। কাজকর্ম ভালো হবে। আয় বাড়বে। ... বিশদ
হারিয়ে গিয়েছিল সংখ্যার ভারসাম্যতা। তারপরেও সংসদের পবিত্র ঐতিহ্য বজায় রাখা উচিত ছিল। কীভাবে সেটা করা সম্ভব সেই দিকটি নিয়ে বিজেপি ভাবেনি। এমনটা যে ঘটে চলেছে, তা নিয়ে বিরোধী দলগুলি বারংবার অভিযোগও করেছে। তবু সংসদীয় ঐতিহ্য কোনোভাবেই পালিত হয়নি। অনেক নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকের মতে, এর ফলে সংসদের দুটি কক্ষই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছিল।
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন সংসদের সেই মহান হৃত ঐতিহ্যের ফেরানোর দারুণ সুযোগ এনে দিয়েছে। এই সুযোগটা সরকার এবং বিরোধী পক্ষ, উভয়েরই জন্য বটে। এটা নিছক গঠনগত দিকটা নিশ্চিত করেনি, এটাই সংসদীয় গণতন্ত্রের সৌন্দর্য-মাহাত্ম্য। ২৩৬টি আসন নিয়ে বিরোধী পক্ষ একটি মজবুত জায়গায় রয়েছে। সংসদ কক্ষে বাধাদান একটি বৈধ সংসদীয় হাতিয়ার এবং সেটা গণতন্ত্রেরই স্বার্থে—বিরোধীদের উচিত অরুণ জেটলির এমন তত্ত্বটিকে কবর দেওয়া। কারণ তত্ত্বটি নিছকই এক কল্পকাহিনি, বরং এর উল্টোটাই সত্যি।
উল্লেখযোগ্য প্রতিশ্রুতি
কংগ্রেসের ২০২৪-এর ইস্তাহার ‘ন্যায়পত্র’ দিয়েই শুরু করতে পারত বিরোধীরা। এতে রয়েছে নীচের প্রতিশ্রুতিগুলি:
•আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে সংসদের দুটি কক্ষ
প্রতি বছরে ১০০ দিনের জন্য বসবে। সংসদের অতীত দিনের প্রচলিত মহান ঐতিহ্যগুলিকে
ফিরিয়ে আনা হবে, আর এগুলি পালিত হবে যথাযথ নিষ্ঠার সঙ্গেই।
•আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে, প্রতিটি কক্ষে সপ্তাহে একদিন করে বিরোধী পক্ষের প্রস্তাব মতো কোনও বিষয়ের উপর আলোচনা করা হবে।
•আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে দুই কক্ষের প্রিসাইডিং অফিসারদের সঙ্গে কোনও রাজনৈতিক দলের আর সম্পর্ক থাকবে না। তাঁরা সম্পূর্ণরূপে হবেন দল নিরপেক্ষ। ‘স্পিকার ডাজ নট স্পিক’ বলে বহু পুরনো যে প্রথাটি রয়েছে পালিত হবে সেটিও।
‘ইন্ডিয়া’ ব্লক প্রতিশ্রুতিগুলি স্বাগত জানিয়ে, পূরণ করার ব্যাপারে দৃঢ়তার সঙ্গে লড়াই করার কথাও ভাবতে পারে।
সংসদের উভয় কক্ষের প্রতিটিতে ১০০ দিনের অধিবেশন, বিরোধীদের প্রস্তাবের উপর আলোচনার জন্য সপ্তাহে একটি দিন বরাদ্দ করা এবং সেখানে একজন নিরপেক্ষ প্রিসাইডিং অফিসারের প্রস্তাবে বিজেপির কোনও আপত্তি থাকতে পারে না।
দলত্যাগ রোধের ব্যবস্থা
বিজেপি ৩৭০ এবং এনডিএ চারশোর বেশি আসনে জিতবে, এই ছিল প্রচার পর্বের লক্ষ্যমাত্রা। সেই জায়গায় বিজেপি পেয়েছে মাত্র ২৪০। নরেন্দ্র মোদি এবং তাঁরই সৌজন্যে বিজেপি এই ধাক্কা কাটিয়ে উঠেছেন বলে মনে হচ্ছে। শাসক এটাই উদযাপন করতে চেয়েছিল, কিন্তু বিজেপির তৃণমূল স্তরের কর্মী-সমর্থকদের মন মেজাজ একদম ভালো ছিল না। ‘সংখ্যালঘু’ তকমাটি বিজেপি নেতৃত্বের পক্ষে হজম করার সত্যিই কঠিন। এই অসম্মানজনক পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে তারা মরিয়া চেষ্টা চালাবেই। লক্ষ্য হিসেবে বিজপিকে প্রলুব্ধ করছে—ওয়াইএসআরসিপি (৪ সদস্য), আপ (৩), আরএলডি (২), জেডিএস (২), অগপ (১), এজেএসইউ (১), এইচএএম (১) এবং এসকেএম (১)। এমনকী, ১২ এমপির জেডিইউ দলটিও আপাতত নিরাপদ নয়। এই দলগুলির মধ্যে কয়েকটি আগের থেকেই এনডিএর শরিক। তবু তারা বিজেপিকে রুখতে পারবে বলে মনে হয় না। ভুলে যাবেন না, মহারাষ্ট্রে শিবসেনার কী দশাই না করেছে মোদিজির পার্টি! সংবিধানের দশম তফসিলের ছিদ্রপথে এমন গহ্বর রয়েছে যে, ছোট দলের এমপিরা সেখানে একবার পড়ে গেলে ভোকাট্টা হয়ে যেতে পারেন! কংগ্রেসের এবারের ইস্তাহারে একটি মার্জিত ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে যেটি মানলে বিজেপির এই অগণতান্ত্রিক প্ল্যান ভেস্তে যাবে:
•আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে সংবিধানের দশম তফসিল সংশোধন করা হবে। তার বলে দলত্যাগীর (অর্থাৎ, মূল যে দলের প্রতীকে তিনি বিধায়ক বা এমপি নির্বাচিত হয়েছেন সেটি ছেড়ে বেরিয়ে গেলে) বিধানসভা বা সংসদের সদস্যপদ আপনা থেকেই বাতিল হয়ে যাবে।
দশম তফসিলে সংশোধন আনতে হবে বিরোধী পক্ষকেই। এই সংশোধনী বিলের বিরোধিতা করলে সরকার পক্ষ ভোটারদের চোখে হীন হয়ে যাবে।
কর্মসংস্থানের উদ্যোগ
দেশের অর্থনীতির সামলানোর ব্যাপারেই বিজেপি সবচেয়ে দুর্বল। আর্থিক বিচক্ষণতা বা পরিকাঠামোগত উন্নয়নের বিরোধিতা কেউই করতে পারে না। সব ধরনের অর্থনৈতিক নীতির চূড়ান্ত লক্ষ্য হল—বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং জিনিসপত্রের দাম সাধারণের সাধ্যের মধ্যে রেখে দেওয়া। কর্মসংস্থান এবং মুদ্রাস্ফীতির প্রশ্নে কিছু করে দেখানোর জোড়া লক্ষ্যেই আবর্তিত হয় সবার অর্থনীতি। আর এই দু’দিকেই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে বিজেপি-এনডিএ এবং লোকসভা নির্বাচনে তারই মাশুল গুনতে হয়েছে তাদের। বিজেপি নেতৃত্ব তাঁদের কর্মধারা এবার বদলাবেন কি না তার আঁচ অবশ্য পাওয়া যাবে রাষ্ট্রপতির ভাষণ এবং বাজেটে। এদিকে কর্মসংস্থান বিষয়ে কংগ্রেসের ইস্তাহারে যেসব প্রস্তাব রয়েছে—কংগ্রেস এবং ‘ইন্ডিয়া’ ব্লককে সেগুলি তুলে ধরে অবশ্যই সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে। ইস্তাহার থেকেই এজেন্ডা উদ্ধৃত করছি:
•আমরা মনোপলি, ওলিগোপলি এবং ক্রোনি ক্যাপিটালিজমের বিরোধিতা করব।
•প্রতিটি উদ্যোক্তার যেসব বস্তুগত সংস্থান বা আর্থিক সুবিধা বা ব্যবসায়িক ছাড়ের সুযোগ পাওয়া উচিত, কোনও সংস্থা বা ব্যক্তি সেসব নিয়ে কোনোরকম দাপট দেখাতে পারবে না, এটা আমরা নিশ্চিত করব।
•যেসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিপুল সংখ্যক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারবে, আমাদের অগ্রাধিকার প্রদানের নীতি থাকবে তাদের পক্ষে।
•কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন স্তরে অনুমোদিত ৩০ লক্ষের মতো শূন্যপদ তাদের দ্রুত পূরণ করতে হবে ...
•সরকারকে একটি নতুন ‘এমপ্লয়মেন্ট-লিঙ্কড ইনসেনটিভ স্কিম’ (ইএলআই) চালু করতে হবে। স্থায়ী পদে অতিরিক্ত চাকরির ব্যবস্থার পুরস্কার হিসেবে ইএলআইয়ের মাধ্যমে কর্পোরেটদের করছাড়ের সুযোগ দেওয়া যাবে।
•নগর পরিকাঠামোর পুনর্গঠন ও পুনর্নবীকরণের কাজ ত্বরান্বিত করতে সেখানকার গরিব মানুষের জন্য কাজের গ্যারান্টি কর্মসূচি চালু করব।
•গ্রাম পঞ্চায়েত ও পুরসভাগুলির মাধ্যমে জলাশয় পুনরুদ্ধার এবং পতিত জমিকে আবাদিকরণের কর্মসূচি নেওয়া হবে। সেখানে কাজ পাবেন স্বল্প-শিক্ষিত এবং স্বল্প-দক্ষ যুবরা।
বিরোধী দলগুলোকে এমনভাবে কাজ করতে হবে যেন তারাও সরকারে রয়েছে। সুযোগগুলো তারাও কাজে লাগাবে এবং সরকারের সামনে স্থাপন করবে একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত। নতুন এবং শক্তিশালী এমন বিরোধীদের সামনে সংখ্যাগরিষ্ঠতার নীচে চলে যাওয়া বিজেপির প্রতিক্রিয়াটি কেমন হয়, সেটা এবার বেশ দর্শনীয় ও আকর্ষণীয় হবে।