পরিবারের সদস্যদের পারস্পরিক মতান্তর, কলহে মনে হতাশা। কাজকর্ম ভালো হবে। আয় বাড়বে। ... বিশদ
কাঁকসা ব্লক জঙ্গলমহল এলাকা বলেই পরিচিত। ব্লকের বেশিরভাগ আদিবাসী গ্রামেই প্রায় প্রতিটি পরিবার শালপাতা সংগ্রহ করে সংসার চালায়। কাঁকসা পঞ্চায়েত সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্লকে মোট আদিবাসী গ্রামের সংখ্যা প্রায় ৭৫। ব্লকের বাসিন্দা সানি মুর্মু বলেন, আমরা সকাল থেকে দুপুর দুটো পর্যন্ত শালপাতা সংগ্রহ করি। বাড়িতে ফিরে দুপুরের খাবার খেয়ে কুচিকাঠি দিতে পাতা সেলাই শুরু করি। দু’টি কুচি কাঠি দিয়ে একটি পাতা সেলাই হয়। ধোবারু গ্রামের সোনালি হাঁসদার আক্ষেপ, পরিশ্রমের তুলনায় সেভাবে দাম মেলে না। তিনি বলেন, এক হাজার পিস পাতার দাম ২০০ টাকা। পাতা ঘরে জমিয়ে রাখলে শুকিয়ে নষ্ট হওয়ার ভয় থাকে। মজুত করার পরিকাঠামো না থাকায় কম দামে পাতা বিক্রি করতে হয়। কেনার পর তাঁরা সেগুলিকে যন্ত্রের সাহায্যে সেলাই করে বাজারে বিক্রি করেন। এলাকায় ভালো সরকারি পরিকাঠামো না থাকায় শ্রমিকরা পাতা ভালো করে সেলাই করতে পারেন না। যদিও ধোবারু গ্রামে গিয়ে দেখা গেল বেশ কয়েকটি পাতা সেলাই করার মেশিন ব্যবহার না করার ফলে প্রায় নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এর মধ্যে হাতে ঘোরানো ও ইলেক্ট্রিকর মেশিন রয়েছে। এগুলি ব্যবহার না করার মূলত কারণ দু’টি বলে জানা গেল। প্রথমত মেশিনের সেলাই উন্নত মানের হতো না বলে মহাজনরা নিতে চাইত না। দ্বিতীয়ত ইলেক্ট্রিকে মেশিন চালালে যে বিদ্যুৎ বিল আসবে পাতা বেচে তা আয় হয় না। স্থানীয় বাসিন্দা সুমি মুর্মু বলেন, পাতা সেলাইয়ের পর রোদে দিতে হয়। আমরা খোলা মাঠে বা গ্রামের ঢালাই রাস্তার উপরেই রোদে দিই। বৃষ্টি হলে খুবই সমস্যা হয়। আঁধারশুলির এক আদিবাসী বাসিন্দা বলেন, আমরা পাতা তৈরি করতে এত কষ্ট করি। তিন দিন ধরে এক হাজার পাতা তৈরি হলে তবে ২০০ টাকা পাই। কিন্তু প্লাস্টিক ও থার্মোকল পাতার জন্য আমাদের বিক্রি কমে যাচ্ছে। পিয়ারিগঞ্জের বাসিন্দা পেশায় শিক্ষক ভবতোষ ঠাকুর বলেন, ধান বিক্রিতে রাজ্য সরকার যেমন ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নির্ধারণ করেছে তেমনই শালপাতাতেও করলে সুবিধা হবে। সোনালি বলেন, খুব কষ্ট করেই বেঁচে আছি। শালপাতার দাম নেই। একশো দিনের কাজও বন্ধ। স্থানীয় বাসিন্দা সুনীল টুডু বলেন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় একশো দিনের মতোই কাজ চালুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। আমরা সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছি।
বিজেপি নেতা রমন শর্মার অভিযোগ, বছর চারেক আগে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী দুর্গাপুরের এক প্রশাসনিক সভায় জেলার কাঁকসা ব্লকে শালপাতার ক্লাস্টার তৈরির করার কথা ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল এলাকার মানুষের উন্নয়ন নিয়ে ভাবেনি রাজ্য সরকার। তারা শুধু ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি করেছে। সিপিএম নেতা বীরেশ্বর মণ্ডল বলেন, এই রাজ্য সরকার শুধু ঘোষণাই করে। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয় না। এলাকার বহু আদিবাসী পরিবার এই কাজের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণার পরেও ক্লাস্টার করা গেল না কেন? তৃণমূলের কাঁকসা ব্লক সভাপতি নবকুমার সামন্ত বলেন, জায়গার সমস্যার জন্য প্রকল্পটি এখনও শুরু করা যায়নি। তবে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তর সচেষ্ট রয়েছে। কাঁকসা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ভবানী ভট্টাচার্য বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে ট্রেনিং দেওয়া হয়েছিল। আবেদন করলে প্রশাসন পাশে থাকবে।-নিজস্ব চিত্র