পরিবারের সদস্যদের পারস্পরিক মতান্তর, কলহে মনে হতাশা। কাজকর্ম ভালো হবে। আয় বাড়বে। ... বিশদ
বলতে পার কোথায় থাকে আদ্যানাথের মেসো?’
কবি সুকুমার রায়ের ‘ঠিকানা’ কবিতা তোমরা নিশ্চয়ই পড়েছ। আদ্যানাথের মেসোকে খুঁজতে গিয়ে কতই না চক্কর কাটতে হয়েছিল জগমোহনকে! তবে শুধু কবিতা বা সাহিত্যে নয়, যুগ যুগ ধরে কারও বাড়ি, দপ্তর, দোকানের হদিশ পেতে এমনভাবেই নাকানি-চোবানি খেতে হয়েছে সকলকে। কারণ একাধিক ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, একই নামের বহু জায়গা রয়েছে। ল্যান্ডমার্ক বা কাছাকাছি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা বা স্থানের নামেও কোনও বদল নেই। তাহলে কী উপায়? এই সমস্যার সমাধানে ভারতে চালু হল ‘পিন কোড’। দিনটি ছিল ১৯৭২ সালের ১৫ আগস্ট। ওই দিন ঠিকানার পরাধীনতা থেকে মুক্তি পেল দেশ। তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রকের সিনিয়র অফিসার শ্রীরাম ভিকাজি পিন কোড বিষয়টি তৈরি করেছিলেন। যার মধ্যে দেশের প্রান্ত থেকে শুরু করে জোন, নির্দিষ্ট পোস্ট অফিস পর্যন্ত চিহ্নিত করা যাবে। ফলে আর নামের গোলক ধাঁধায় ঘুরতে হবে না। তবে ভারতের আগে ইউরোপের কয়েকটি দেশে এই ব্যবস্থা চালু হয়েছিল। কিন্তু, আমাদের মতো বিশাল দেশে পাহাড় থেকে সমুদ্রকে পিনকোডের আওতায় আনতে কম ঝক্কি পোহাতে হয়নি।
কীভাবে কাজ করে পিনকোড?
পিনকোডের পুরো কথা হল পোস্টাল ইনডেক্স নম্বর। মোট ছ’টি সংখ্যা দিয়ে তৈরি হয় এটি। এর প্রতিটি সংখ্যা আলাদা আলাদা অর্থ বহন করে। যেমন প্রথম সংখ্যাটি হল নির্দিষ্ট কোনও জোনকে বোঝায়। আমাদের দেশে সবমিলিয়ে ৯টি জোন রয়েছে। এরমধ্যে প্রথম আটটি দেশের বিভিন্ন প্রান্তকে এবং ৯ নম্বরটি নির্ধারিত থাকে সেনাবাহিনীর ঠিকানার জন্য। যেমন ১ নম্বরটি উত্তর ভারতের দিল্লি, হরিয়ানা, হিমাচল প্রদেশ, পাঞ্জাব, চণ্ডীগড়, জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখের মতো রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে বোঝায়। তেমনই ২ নম্বর জোনের অর্থ হল উত্তরাখণ্ড ও উত্তরপ্রদেশ। একইভাবে আমাদের রাজ্য পড়ে সাত নম্বর জোনে। পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে এই তালিকায় রয়েছে অরুণাচল প্রদেশ, অসম, মণিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, ওড়িশা, সিকিম, ত্রিপুরা এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ। এ তো গেল প্রথম সংখ্যার অর্থ। পিনকোডের দ্বিতীয় সংখ্যাটি প্রথমটির সঙ্গে জুড়ে রাজ্য বোঝায়। যেমন ৭০-৭৪ এর মধ্যে পড়ে আমাদের রাজ্য (তবে এর মধ্যে ৭৩৭ ও ৭৪৪-কে বাদ দিতে হবে)। প্রথম দু’টি সঙ্গে তৃতীয় সংখ্যা জুড়লে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের ডাক বিভাগ নির্দেশিত জেলাকে বোঝাবে। আর শেষের তিনটি সংখ্যা তোমার বাড়ির কাছের পোস্ট অফিসের কোড নম্বর। এর সাহায্যে দেশের যেকোনও প্রান্ত থেকেই চিঠি বা পার্সেল পাঠানো হোক না কেন, পিনকোডের হাত ধরেই তা নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে যায়। সেটিকে আর ঠিকানার গোলক ধাঁধায় ঘুরতে হয় না।
এবার একটি উদাহরণ দিলে পুরো বিষয়টি আরও পরিষ্কার হয়ে যাবে। ধরা যাক, কারও পিনকোড-৭০০০৪৯। অর্থাত্ এর মধ্যে ৭ সংখ্যাটি ইস্ট জোনকে বোঝাবে। এর পরের সংখ্যাটি অর্থাত্ শূন্য জুড়লে তা পশ্চিমবঙ্গকে বোঝাবে। প্রথম তিনটি সংখ্যা অর্থাত্ ৭০০ কলকাতা এবং সংলগ্ন এলাকাকে (বৃহত্তর কলকাতা) নির্দেশ করে। আর শেষের তিনটি সংখ্যা ০৪৯ নির্দিষ্ট পোস্ট অফিসকে বোঝায়। এক্ষেত্রে যেটি নিমতা পোস্ট অফিস। আমাদের দেশে প্রায় ১ লক্ষ ৬০ হাজার পোস্ট অফিস রয়েছে। শেষে একটা মজার ব্যাপার জানিয়ে রাখি। ছোট্ট বন্ধুরা, তোমরা তো আন্টার্কটিকার নাম শুনেছ। কিন্তু জানো কি, ১৯৮৪ সালে সেখানকার দক্ষিণ গঙ্গোত্রী নামে একটি জায়গায় ভারত একটি পোস্ট অফিস তৈরি করেছিল! এখন মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে, তাহলে বরফে ঢাকা আন্টার্কটিকায় কোথাকার পিনকোড ব্যবহার হয়? উত্তর হল গোয়া। হ্যাঁ, ঠিকই পড়েছ। তবে, আজ নয়, এই নিয়ে আমরা আর একদিন বিস্তারিত জানব।