খরচের চাপ এত বেশি থাকবে সে সঞ্চয় তেমন একটা হবে না। কর্মক্ষেত্রে নানান সমস্যা দেখা ... বিশদ
কাঠবেড়ালির সঙ্গে ওর ভাব হয়েছে এই তো সেদিন। বর্ষাকালে মিঠুদিদিদের পেয়ারা গাছে যখন অনেক পেয়ারা হয়েছিল, তখন পাঁচিলে বসে রোদ পোহাতে পোহাতে মিলু দেখেছিল একটা বিশাল বড় ল্যাজ নিয়ে কাঠবেড়ালিটা বসে বসে পেয়ারা চিবোচ্ছে।
‘তোমার নাম কী গো?’ জানতে চেয়েছিল ও। জবাবে একটা আধখাওয়া পেয়ারা ছুঁড়ে মেরে কালু বলেছিল, ‘তুমি বেড়াল হয়ে আমার নাম জানতে চাইছ কেন? আমি যার-তার সঙ্গে ভাব করি না।’
এরকম কথা শুনে কার না দুঃখ হয় বলো? মিলু বেড়াল বলে কি তার মানসম্মান নেই? মিলু পাঁচিল থেকে নেমে চলেই যাচ্ছিল। হঠাৎ ওর চোখে পড়ে একটা সবুজ রঙের সাপ গাছের পাতার সঙ্গে মিশে কালুর দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে।
‘সাবধান সাপ!’
বলার সঙ্গে সঙ্গে কালু তরতর করে গাছের ডাল বেয়ে উঠে যায়। সেইদিন থেকেই বন্ধুত্ব। এমনকী এবারে মিঠু দিদিমণি যখন পাড়ার ফাংশানে হারমোনিয়াম বাজিয়ে গাইল, ‘আলো আমার আলো ওগো’, ওরা দু’জনে মাঠের পাশের আমগাছে উঠে কোরাস গেয়েছিল একই সঙ্গে।
ওদের এই বন্ধুত্ব অনেকেরই পছন্দ হয় না। এমনকী রায়বাড়ির মধু সেদিন বলেছিল, ‘এ ফ্রেন্ডশিপ টিকলে হয়।’
মধুও খুবই ডাঁটিয়াল। মাঝে মাঝে আবার ইংরেজিতে কথা বলে। ওর বাবা ছিল অ্যালসেশিয়ান, মা দেশি নেড়ি। ওকেও বেশ ভালোই দেখতে। গায়ের রং ছাই ছাই হলেও গলার কাছে হারের মতো চিহ্ন আছে। মধু বলে, ‘আমি তোমাদের মতো বেকার নই। দস্তুর মতো মনিবের বাড়িতে রাতপাহারা দিয়ে নিজের রুজিরুটি কামাই।’
কথাটা একেবারে মিথ্যে নয়। বিশাল একটা বাড়িতে ও থাকে। রাতে ওর শেকল খুলে দিলে ও সারা বাড়ি ঘুরে বেড়ায়। বেশ বড় চেহারা। চোর-ডাকাতের সাধ্য কী ওকে ডিঙিয়ে বাড়িতে ঢোকে?
কথাটা শুনে অবশ্য মিলুর একটু মন খারাপ হয়েছিল। মিঠুদিদিরা ওর খাবার দিলেও যেদিন ওরা থাকে না সেদিন তো ওকে ঘুরে ঘুরে মানুষের দয়া নিয়েই খেতে হয়। এই তো সেদিন রাণুদের বাড়ির রান্নাঘরে ঢুকে ও জ্বাল দেওয়া ঘন ক্ষীরে মুখ দেবে দেবে ভাবছে, রাণু এসে এক বালতি জল ওর গায়ে ঢেলে দিল। ঘটনাটা ঘটেছে যদিও উঠোন দিয়ে ছোটার সময়, তাই সব জল গায়ে লাগেনি। তবু ভিজে শরীর রোদে শুকোতে হল তো! না হলে তো ভেজা লোমওলা চেহারা দেখেই সবাই যা বোঝার বুঝে যেত।
শেষ পর্যন্ত কালুর সঙ্গে দেখা হতে খবরটা দিল মিলু।
ঠিক হয়েছে এবারের শীতের পিকনিকটা ওরা জমিয়ে করবে। নদীর পাশেই একটা ফাঁকা জমিও জোগাড় হয়েছে। বেশি লোক না। ডাঙা থেকে যাবে ও, আর বন্ধু নেড়িকুকুর ডলি। জল থেকে আসছে হাঁস মরালী, মাছরাঙা লীলাবতী। আকাশ বাতাসের ঠিকানায় আছে কোকিল কুহু, কাক মুসাফির।
মুসাফির মজা করে বলছিল, ‘আমি কিন্তু অন্য জাত, আমাকে দলে নেবে তো?’
জবাবে লীলাবতী বলল, ‘হাসালে! ওসব জাতপাতের ভেদাভেদ বোকা মানুষদের জন্য। আমি তো সেদিন নজরুল কবির সেই বিখ্যাত গান গাইব। ‘মোরা একই বৃন্তে দুটি কুসুম।’
কালু অমনি ফিক করে হেসে বলল, ‘ওমা কবি নজরুল! উনি তো আমার ঠাকুরদাকে নিয়ে সেই বিখ্যাত কবিতাটা লিখেছিলেন, ‘কাঠবেড়ালি কাঠবেড়ালি পেয়ারা তুমি খাও?...।’ ও বাড়ির খুকু দুলে দুলে আবৃত্তি করে। ও তো আর জানে না আমি সেই কাঠবেড়ালির নিজের নাতি। যাকগে ওটা আমি পিকনিকের দিন বলব, তোমরা শুনো। প্রোগ্রাম ঠিক হল। পিকনিকও শুরু হল। ব্রেকফাস্টে গুগলির স্যুপ। ওটা মরালী এনেছে, খাসা বানিয়েছে ও। মুসাফির কোথা থেকে কয়েক পিস পাউরুটি নিয়ে এল। স্যুপে ডুবিয়ে দিব্যি খাওয়া হল। বিয়েবাড়ি থেকে কাঁচা মাংসের একটা প্যাকেট সরিয়ে নিয়ে এল ডলি। লোকেরা তো বোঝে না, ওকে জোর তাড়া করেছিল। আরে কুকুর তো আর মানুষ নয় যে বাজার থেকে জিনিস কিনবে।
মিলু এনেছিল কয়েক টুকরো মাছ। খুকুদের বাড়ির কাজের লোক মাছ ধুচ্ছে আর মুসাফির তার চারপাশে ‘কা কা’ করে চক্কর মারছে। যেই সে মাছ ফেলে কাক তাড়াতে গিয়েছে, অমনি মিলু মাছ নিয়ে চম্পট দিয়েছে। সেই মাছেই হল ফিসফ্রাই। ওদিকে কালু আনল গাছের পেয়ারা।
সবমিলিয়ে জমে গিয়েছিল পিকনিক। এমনকী আকাশবাতাসবাণীর কোকিল ডিরেক্টার শ্রীমতী কুহু যখন সব অনুষ্ঠানের পর ‘কুহু কুহু কোয়েলিয়া’ গান ধরল, মিষ্টি না খাওয়ার কষ্ট ভুলে গিয়েছিল সকলে।
আমি বলে রেখেছি ওদের, পরেরবার আমাকে যেন ডাকে। তোমরাও যাবে নাকি? তাহলে বলো। বলে রাখব।