সম্পত্তিজনিত বিষয়ে অশান্তি বৃদ্ধির আশঙ্কা। আত্মীয়-পরিজনের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি। শেয়ার, ফাটকা, লটারিতে অর্থাগম, কর্মক্ষেত্রে গোলযোগের ... বিশদ
মেলানিন বা এমন ধরনের কিছু ধরনের রঞ্জকের উপস্থিতির কারণে আমরা বিভিন্ন প্রাণীকে বিভিন্ন রঙে দেখে থাকি। কিন্তু শুনলে অবাক হতে হয় যে, প্রজাপতির শরীরে এমন ধরনের কোনও বর্ণকণিকা নেই। অর্থাৎ প্রজাপতির নিজস্ব কোনও রং নেই!
স্বচ্ছ ডানা
প্রকৃতির সবচেয়ে রঙিন পতঙ্গ প্রজাপতি। নানা রঙে প্রজাপতির ডানা তাদের মূল সৌন্দর্যের আধার। রঙিন এই ডানাগুলো মূলত কাইটিন নামের একধরনের প্রোটিনের স্তর দিয়ে তৈরি, যা অত্যন্ত পাতলা। এই কাইটিনের ডানার উপরে থাকে হাজার হাজার তন্তু বা আঁশ, যেখানে আলোর কারুকার্যে আমরা বিভিন্ন রঙে রাঙানো প্রজাপতির দেখা পাই। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এই আঁশগুলো যখন ঝরে যায়, তখন শুধু থেকে যায় ডানা। লক্ষ করলে দেখা যাবে, এই ডানাগুলো একদম স্বচ্ছ এবং এক পাশ থেকে অন্য পাশে সহজেই দেখা যাচ্ছে।
কাইটিনের তৈরি স্বচ্ছ ডানার উপরে আঁশ বা তন্তুর যে আবরণ, তা প্রজাপতির জীবনধারণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। কারণ, এগুলোই ডানাগুলোকে আরও মজবুত করে এবং দু’পাশের ভারসাম্য প্রদান করে। সাধারণত মিলনের সময়, খাদ্য গ্রহণ বা উড়তে গিয়ে কিছু আঁশ হারায় প্রজাপতি। কিন্তু, উড়তে এতে প্রজাপতির তেমন সমস্যা হয় না। প্রজাপতি যেহেতু নতুন করে এই আঁশ তৈরি করতে পারে না, যদি বেশি পরিমাণে আঁশ হারায়, তাহলে তা তাদের জীবনের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ।
ছদ্মবেশ
খাদ্য-শৃঙ্খলার নীচের দিকের প্রাণী হওয়ায়, পাখি, মাকড়শা, টিকটিকি ও অন্যান্য আরও অনেক প্রাণীর খাদ্য তালিকাতেই প্রজাপতি রয়েছে। আত্মরক্ষার অন্য তেমন কোনও শক্তিশালী উপায় না থাকায় ক্ষুধার্ত শিকারির হাত থেকে বাঁচতে প্রজাপতির সবচেয়ে বড় অস্ত্র ছদ্মবেশ। ডানার রং ও নকশার সঙ্গে মিলিয়ে আশ্রয়স্থল নির্ণয় করতে পারলে সহজেই শিকারের নজর এড়িয়ে যেতে পারে এরা।
প্রজাপতির পাখাগুলো বেশ স্বচ্ছ
তোমরা খেয়াল করে দেখবে প্রজাপতির পাখাগুলো বেশ স্বচ্ছ হয়ে থাকে। পৃথিবীর সব ধরনের পোকামাকড়ের মধ্যে প্রজাপতিই সবচেয়ে রঙিন এবং স্পন্দনশীল। প্রজাপতির পাখাগুলো আসলে এক ধরনের প্রোটিনের স্তর দিয়ে তৈরি যেগুলো প্রাণীটিকে উড়তে সহায়তা করে। এই স্তরগুলো এত পাতলা যে এর ভেতর দিয়ে সবকিছুই দেখা যায়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই হালকা তুলার মতো পদার্থগুলো পাখা থেকে খসে পড়ে যায় এবং একসময় পাখাগুলোর উজ্জ্বলতা হারিয়ে যায়।
পা দিয়ে স্বাদ গ্রহণ
প্রজাপতি তার পাগুলো দিয়ে কোনও কিছুর স্বাদ গ্রহণ করে। পাগুলোকে ব্যবহার করে সে কোনও উদ্ভিদ থেকে খাবার খুঁজে বেড়ায়। প্রজাপতি বিভিন্ন গাছের উপরে বসে এবং দুই পা দিয়ে কোনও ফুলকে জড়িয়ে ধরে এর রস আস্বাদন করে থাকে। প্রজাপতির পাগুলোর উপরে মেরুদণ্ডের কাছে একটি কেমোরেসিপটরস থাকে যা বিভিন্ন গাছের রাসায়নিক পদার্থের কোনও মিল খুঁজে পেলে সেখানে সে তার ডিমগুলো স্থাপন করে যায়।
তরল খাবার খেয়ে বেঁচে থাকে
প্রাপ্তবয়স্ক প্রজাপতি সবসময় তরল জাতীয় খাবার (মধু) খেয়ে থাকে। তাদের মুখে হাতির শুঁড়ের মতো এক ধরনের নলাকার বস্তু থাকে যা দিয়ে তারা বিভিন্ন গাছের বা ফুলের মধু খেয়ে থাকে এবং এভাবেই জীবনধারণ করে থাকে।
প্রজাপতি কাদাখানা থেকেও জলপান করে
প্রজাপতি মধু আহরণের পাশাপাশি কাদাখানাতেও চুমুক দিয়ে থাকে যেটিতে প্রচুর পরিমাণে মিনারেল এবং খনিজ লবণ থাকে। এই কাজটি বেশিরভাগ সময়ে পুরুষ প্রজাপতিটি করে থাকে কেননা এই মিনারেল তাদের স্পার্ম তৈরিতে সহায়তা করে। প্রজননের সময় এই মিনারেল স্ত্রী প্রজাপতির দেহে স্থানান্তর হয় যার ফলে এদের ডিমের কার্যকারিতাকে বাড়িয়ে তোলে।
ঠান্ডা মরশুমে প্রজাপতি উড়তে পারে না
প্রজাপতিদের স্বাভাবিকভাবে উড়তে ৮৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রার প্রয়োজন হয়ে থাকে। এটি একটি শীতল রক্তযুক্ত প্রাণী, এর ফলে তারা তাদের দৈহিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে না। এজন্য পরিবেশের তাপমাত্রা তাদের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা রাখে। বাইরের তাপমাত্রা যদি ৫৫ ডিগ্রি ফারেনহাইটের নীচে থাকে তাহলে তারা নড়াচড়া করতে পারে না এমনকী তারা তাদের আহার সংগ্রহে যেতেও পারে না। তাপমাত্রা ৮২-১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের মধ্যে থাকলে প্রজাপতি খুব সহজেই চলাফেরা করতে পারে। শীত মরশুমে প্রজাপতিদের চলাফেরার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে সূর্যের তাপের প্রয়োজন হয়।
প্রজাপতি জন্মেই উড়তে পারে না
নতুন জন্মগ্রহণ করা প্রজাপতির গায়ের সঙ্গে এর পাখাগুলো লেগে থাকে। কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় তার সারা দেহ শুষ্ক হওয়ার জন্য। পাখাগুলোকে ছড়িয়ে দিয়ে গুটিপোকা সাহায্য করে থাকে। তার পাখা পুরোপুরিভাবে খুলে যাওয়ার পরে সে প্রথমবারের মতো উড়তে পারে।
২ থেকে ৪ সপ্তাহ বাঁচে
একটি প্রজাপতির আয়ুষ্কাল মোটামুটিভাবে ২-৪ সপ্তাহ। এতটুকু সময়ের মধ্যে তারা শুধুমাত্র দুটি কাজই করে থাকে খাওয়া এবং প্রজনন করা। এদেরও মধ্যে নীল রঙের ছোট প্রজাপতিগুলো মাত্র কয়েকদিনই বেঁচে থাকে।
এরা অদূরদর্শী হয়
১০-১২ ফুটের মধ্যে প্রজাপতিরা সচরাচর দেখতে পারে, এর বেশি দেখতে পারে না। এরা বড় বড় কাজের ক্ষেত্রে চোখগুলোকে কাজে লাগায় যেমন সঙ্গী খোঁজা, খাবার সংগ্রহ ইত্যাদি। এছাড়া প্রজাপতি অতিবেগুনি রশ্মি ও এমন একটি পরিসীমা দেখতে পায় যেটি মানুষ দেখতে পারে না।
ছবি: সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে