সম্পত্তিজনিত বিষয়ে অশান্তি বৃদ্ধির আশঙ্কা। আত্মীয়-পরিজনের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি। শেয়ার, ফাটকা, লটারিতে অর্থাগম, কর্মক্ষেত্রে গোলযোগের ... বিশদ
ষষ্ঠ শ্রেণী
হুগলি গার্লস হাই স্কুল
আমাদের বিদ্যালয়টি হুগলি শহরে অবস্থিত। বিদ্যালয়টির যথেষ্ট সুনাম আছে। এখানে শিক্ষিকারা আমাদের যথাযথ যত্ন সহকারে পড়ান। যার ফলে আমাদের বিদ্যালয়ের পরীক্ষার ফল অত্যন্ত ভালো হয়। বিশেষ করে মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের ফল এত ভালো হয় যে আমরা গর্ববোধ করি। আমরাও দিদিমণিদের শ্রদ্ধার চোখে দেখি। পড়াশুনার পাশাপাশি আমাদের বিদ্যালয়ে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মনীষীদের জন্মদিন, বাৎসরিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, সরস্বতী পূজা অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে সুশৃঙ্খলভাবে পালিত হয়। বিদ্যালয়ের পরিবেশ এতই সুন্দর যে আমরা কখনওই একঘেয়েমি অনুভব করি না। তবে সবার উপরে আমাদের প্রধান শিক্ষিকা। যিনি আমাদের কন্যাসম আগলে রেখেছেন। প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি যেভাবে লক্ষ রেখে বিদ্যালয় পরিচালনা করেন, তাঁকে দশভুজা বললেও অত্যুক্তি করা হয় না। তাঁর এই কর্মকাণ্ড দেখে শ্রদ্ধায় আমাদের মাথা নত হয়ে আসে। মাতৃসমা এমন প্রধান শিক্ষিকা পেয়ে আমরা প্রত্যেকেই গর্বিত।
বেশ সুন্দরভাবেই আমাদের বিদ্যালয়ের দিনগুলি কাটছিল। সবাই হাসিমুখে বিদ্যালয়ে যাই আবার হাসিমুখে বাড়ি ফিরি। এরই মাঝে একটা দুঃসংবাদে আমাদের সকল ছাত্রী, শিক্ষিকা ও অন্যান্য কর্মীদের মাথায় যেন বাজ ভেঙে পড়ল।
আমরা জানতে পারলাম মায়ের মতো আমাদের বড় দিদিমণি অন্যত্র বদলি হয়ে যাচ্ছেন। খবর শুনে আমরা শোকে-দুঃখে অনেকেই কেঁদে ফেললাম। দিদিমণিরা ও অন্যান্য অফিস কর্মীরা মিটিং ডেকে সিদ্ধান্ত নিলেন—বড় দিদিমণির বদলি আটকাতে যা যা করণীয় তাঁরা করবেন। এমনকী অভিভাবকদের নিয়ে ডিআই অফিসে ডেপুটেশন দেবেন। আমরাও সব ছাত্রীরা ছুটির পরে বড়দির ঘরের সামনে হাত জোড় করে বললাম—‘বড়দি আমাদের অনাথ করে আপনি অন্য কোথাও যাবেন না।’ বড় দিদিমণি শান্ত কণ্ঠে বললেন—‘আমি জানি, তোমরা আমাকে খুব ভালোবাসো। কিন্তু সরকারি নির্দেশ তো অমান্য করা যায় না।’
আমরা অশ্রুপূর্ণ নয়নে বললাম—‘আমরা কোনও কথা শুনব না, যেমন করে হোক এই বদলি বন্ধ করতেই হবে।’
বড়দি সান্ত্বনা দিয়ে বললেন—‘এখন তোমরা বাড়ি যাও। দেখছি কী করা যায়।’ সেদিনকার মতো আমরা সবাই ভারাক্রান্ত মনে বাড়ি ফিরলাম।
পরের দিন বিদ্যালয়ে এলাম। কিন্তু সকলের মুখ ভার। ক্লাসে আলোচনার বিষয়বস্তু বড় দিদিমণির বদলি। এই ভাবেই পঠনপাঠন চলছে। এদিকে সমস্ত দিদিমণিরা, অফিসের কর্মীরা এবং অভিভাবকরা মিলে গণ স্বাক্ষর করে বড় দিদিমণির বদলি আটকানোর জন্য ডিআই-কে, ডিএম-কে এবং শিক্ষামন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়ে দিলেন।
ভারাক্রান্ত পরিবেশে পঠনপাঠন চলতে থাকল। এইভাবে বেশ কয়েকটা দিন কেটে গেল।
হঠাৎ একদিন টিফিনের পরে ক্লাসে ক্লাসে নোটিশ পাঠালেন বড়দি—আজ বিদ্যালয়ে ছুটির পরে সব ক্লাসের মেয়েরা মাঠে জড়ো হবে। একটা ঘোষণা আছে।
আমরা যথারীতি দুরু দুরু বক্ষে বিদ্যালয়ের মাঠে হাজির হলাম। সবাই পিন ড্রপ সাইলেন্স। কী ঘোষণা করবেন সেই দিকে তাকিয়ে আছি।
বড়দিদি আমাদের সামনে এলেন তারপর বলতে শুরু করলেন—‘আমি জানি এই বিদ্যালয়ের সহশিক্ষিকারা, বিদ্যালয়ের সমস্ত কর্মীবৃন্দ ও সবশেষে তোমাদের মতো কন্যাসম ছাত্রীরা আমাকে কতখানি ভালোবাসো ও শ্রদ্ধা করো। তোমাদের কাছ থেকে যে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা পেয়েছি তা আমাকে শিক্ষকতার কাজে প্রেরণা জোগাবে। তোমাদের ভালোবাসার জয় হল। আজই চিঠি এসেছে আমার বদলি হচ্ছে না। আমি এই বিদ্যালয়েই থেকে যাব। আমি তোমাদের—’
দিদিমণির কথা শেষ করার আগেই আমরা উল্লাসে চিৎকার করে উঠলাম—বড় দিদিমণি আপনি আমাদের, আমাদের কাছেই থাকবেন।
গত কয়েকদিনের দুঃখ ভুলে আনন্দে হাসিমুখে বাড়ি ফিরে গেলাম।