হঠাৎ নেওয়া সিদ্ধান্তে বিপদে পড়তে পারেন। চলচিত্র ও যাত্রা শিল্পী, পরিচালকদের শুভ দিন। ধনাগম হবে। ... বিশদ
—অ্যাই ভাই! অ্যাই ভাই, অ্যাই...
কাটারি চালাতে চালাতেই একটি ছেলে একবার তাকিয়ে বলল, হ্যাঁ, কী হয়েছে?
—গাছটা কেটে ফেলছ! কেন? কত বড় গাছ! কত ফুল ধরে আছে!
ঝপ করে শুয়ে পড়ল গাছটা তখনই। মৃতদেহের মতো দড়াম করে পড়ল। তিনি দেখতে পেলেন যন্ত্রণায় তীব্র চিৎকার করছে গাছটা। হাত-পা ছুঁড়ে শেষবারের মতো আকাশের দিকে তাকিয়ে শেষ নিঃশ্বাস ফেলল।
—এ ভাই, এই, গাছটা কেটে ফেললে! কেন?
—অর্ডার আছে অর্ডার। আমাদের কাটতে বলা হয়েছে কাটছি।
বলতে বলতে গাছের মুড়ো ধরে টেনে অবহেলা ভরে খানিকটা দূরে ছুঁড়ে ফেলল ছেলেটা। অন্য ছেলেটা গাছের মৃতদেহ টানতে টানতে বাড়ির পেছন দিকে নিয়ে গেল। জবার পাশেই মস্ত রঙ্গন গাছের ওপর এবারে কোপ পড়তেই কঁকিয়ে উঠেছে গাছটি।
—একেও কেটে ফেলবে তোমরা! ও ভাই...
উত্তর না দিয়ে কোপ দিচ্ছে ছেলেটা।
অন্য ছেলেটা তার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘মেসো, আমাদের অর্ডার আছে।’ সবক’টা গাছই কেটে ফেলতে হবে। গাছের ফুল চুরি করছিল লোকজন। তাই তো বলল বাদলদা।’
যন্ত্রণাক্লিষ্ট গাছটা আরেকটা কোপের পরে রক্তাক্ত হয়ে তীব্র শ্বাসকষ্ট নিয়ে একবার সজোরে হাতপা ছুঁড়ে মরে গেল তিনি দেখতে পেলেন। রক্তাক্ত হচ্ছেন অপরাজিত। গলার ভেতরে তীব্র কষ্ট টের পাচ্ছেন। কোনওমতে বললেন, ‘নিম গাছটাও?’
ছেলেটা হাসতে হাসতে বলল, ‘হ্যাঁ। নিমপাতা চুরি করে লোকজন। আপনার কষ্ট হচ্ছে নাকি?’
কথা তো শুধু মুখেই বলে না মানুষ, মস্তিষ্কের ভেতরেও কথা হয়। তার মস্তিষ্কের ভেতরে কথারা ছড়িয়ে পড়ল, হচ্ছে হচ্ছে। কষ্ট হচ্ছে আমার। মাথাটা, নেড়ে গেলেন শুধু। হাত দুটো কাঁপছে উত্তেজনায়।
হাতের কাছেই ছিল মোবাইল। বাদলকে, বাদলকে ফোন করতে হবে। কেন কাটছে গাছ! অবশ্যই উত্তর দিতে হবে।
—হ্যাঁ, বলুন কাকু!
—বাদল, বাদল! গাছগুলো এভাবে কেটে ফেলছ কেন, বাদল?
গামছা দিয়ে গা মুছতে মুছতে বাদল প্রকাশ্য হয়েই ওপরের ব্যালকনির দিকে তাকাল। বলল, ‘আর বলেন কেন? রাত থাকতে বাইরের ক্যাঁচরা পাবলিক কাকু, গাছের সব ফুল আঁকশি দিয়ে পেড়ে নিয়ে যাচ্ছে রোজ।’
—তারজন্য গাছ কেটে ফেলবে! তারজন্য একটা প্রাণ মেরে ফেললে!
—আপনার মতো করে কেউ ভাবে না কাকু আজকাল। সবক’টা ফ্ল্যাট থেকে নোটিস দিল আমাকে, গাছ কাটিয়ে দিতে হবে। আমি কী করব বলুন? দারোয়ানি করি। মালিকরা যা বলবে আমাকে হুকুম তামিল করতে হবে।
মাথা নাড়ছেন অপরাজিত। ‘হ্যাঁ, তাই তো... তাই তো।’
মোবাইলে ডাক্তার বক্সীর নম্বর ছিল। ফোন করলেন, হ্যালো!
—হ্যাঁ মিস্টার সাহা, বলুন। গুড মর্নিং!
—গাছগুলো সব কেটে ফেলছেন কেন?
—গাছ! ওহ হো! ওই রাস্তার ফেন্সিং এর ধারের?
—হ্যাঁ। কেন কাটলেন?
গলায় অবহেলার সুর, ‘আর বলবেন না, কী উৎপাত! ভোর হতে না হতে লোকজন কীভাবে ফুল চুরি করে জানেন? নিমপাতা পর্যন্ত! চোর আটকাতে মিস্টার সাহা। জাস্ট এই চুরি বন্ধ করতে! নে, এবার কত চুরি করবি কর। জব্দ সব।’
ভেতরে ভেতরে থমকে গেলেন অপরাজিত। এক মুহূর্ত থেমে বললেন, ‘চুরি! একে চুরি বলেন আপনি! একজন ডাক্তার আপনি! প্রাণ বাঁচানো আপনার কাজ! আপনি... আপনি তো মার্ডার করলেন।’
খলখল করে হাসছেন ডাক্তার বক্সী। বললেন, ‘আপনি খুব সেনসিটিভ মানুষ মশাই। আমি মানুষের প্রাণ বাঁচাই। হ্যাঁ, মানছি গাছের প্রাণ আছে। কিন্তু কী করা যাবে বলুন? চুরি ঠেকাতে এই একমাত্র পথ। অন্য ফ্ল্যাটের রেসিডেন্টরাও এটাই চাইল। বাই দ্য ওয়ে, ফের করোনা বাড়ছে হুহু করে। সাবধানে থাকবেন। এবারে ডেথ রেট ও অ্যালার্মিং। গাছ নিয়ে অত ভাবার কিছু নেই। টেক কেয়ার।’
উঠোন জুড়ে পড়ে আছে রক্তাক্ত গাছেদের শবদেহ। রোদ্দুরের তীব্রতা শরীরে নিয়ে পড়ে আছে দেহগুলো। নিঃশব্দে খুন হয়ে গেল। কোনও প্রতিবাদ নেই। মিটিং মিছিল নেই। রাজনৈতিক চাপানউতোর নেই। মৃতদেহ নিয়ে মিছিল নেই! চা জুড়িয়ে গিয়েছে এতক্ষণে তাঁর। খবরের কাগজের পাতাগুলো হাওয়ায় এদিক ওদিক ছড়িয়ে পড়েছে। সেদিকে একবার তাকালেন কি তাকালেন না বোঝা গেল না।
শৌরসেনী খবরের কাগজ নিতে ব্যালকনিতে এসে ভ্রু কুঁচকে থমকে গেলেন, ‘কী হয়েছে? শুনছ? এরকম করে বসে আছ কেন?’
ভাষাহীন চোখে দেখলেন স্ত্রীকে তিনি। বললেন, ‘মানুষের দিন শেষ বুঝছ?’
—মানে?
—মানুষের ডাক্তার বললেন, আমি মানুষের প্রাণ বাঁচাই। গাছের না।
—কে?
—ডক্টর বক্সী। পাশের অ্যাপার্টমেন্টের রাস্তার ধারের গাছগুলো নির্বিচারে কেটে ফেলল! জাস্ট মার্ডার!
কাতর ব্যথাতুর চোখ শৌরসেনীর। বললেন, ‘কেটে ফেলল!’
—হ্যাঁ!
শরীরটাকে নামিয়ে দিলেন শৌরসেনী ডিভানের ওপরে। ধপ করে বসে পড়লেন। বললেন, ‘ওদের বাড়ির গাছ! আমাদের তো কোনও অধিকার নেই কিছু বলার!’
—কেন নেই? বলো? গাছ ওরা লাগিয়েছে বলে মেরে ফেলার অধিকার আছে ওদের? আরে শালা! ওই গাছগুলো তোদের ফুল দিত... অক্সিজেন দিত! সরি, খারাপ কথা বেরিয়ে এল। মনে আছে তোমার? মনে আছে এই গাছ আমাদের প্রেমে পড়িয়েছিল মনে আছে?’ আবেগ বিহ্বল অপরাজিত। তাঁর বলিরেখা পড়া চোখ তরুণ হয়ে উঠেছে লহমায়। বললেন, ‘একটা গাছের কত ক্ষমতা বলো তো!’
মাথা নাড়ছেন শৌরসেনী, মুখে অদ্ভুত আলোজ্জ্বলা হাসি। বললেন, ‘মনে থাকবে না আর!’
স্থানীয় কাউন্সিলর আর এমএলএ-র নির্দেশে কয়েক একর জমিতে যে গাছেরা স্বাধীনভাবে বেড়ে উঠেছে বছরের পর বছর ধরে, তা নির্মূল করা হচ্ছে। গড়ে উঠবে নাকি কারখানা! কয়েক কোটি টাকায় কিনে নিচ্ছে এক বেনিয়া।
কত বয়স তাঁর তখন? সদ্য কলেজ সরু গোঁফের রেখা বলে দেয় তারণ্যের গল্প। ঝকঝকে চোখ। সাইকেল নিয়ে চরকিপাক দেয় তল্লাটে।
শহরের এদিকটায় এখনও আকাশ ঢেকে দেওয়া অ্যাপার্টমেন্ট গড়ে ওঠেনি। মাঠঘাট পুকুর জলাশয় সবুজ শীতল করে রেখেছে অঞ্চলকে। ছেলেমেয়ের দল ইস্কুল ফেরত খেলাধুলো করে মাঠে। ধুলো মেখে ঘরে ফেরে। পুকুরে জলাশয়ে দাপিয়ে বেড়ায় তারা। সেই তরুণ ও তার প্রিয় সাইকেল নিয়ে দিশাহীন স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়ায়। ধুলো, কাদা মেখে ফুটবল খেলে। দিগন্ত পারের মাঠে গিয়ে দাঁড়ায়, সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে পরদিন ভোরের কথা ভাবে। দু’চোখে স্বপ্ন।
সেদিনও ফুটবল খেলার পরে বন্ধুদের সঙ্গে সমাজ-রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করছে। ফিদেল কাস্ত্রো তার নায়ক। যুদ্ধ, সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতি নিয়ে তুমুল আলোচনার মধ্যে একজন এসে হাঁপাতে হাঁপাতে খবর দিল, ‘ভাই, সেগুন বাগিচার ওখানে প্রচুর লোক জমায়েত হয়েছে। শুনলাম, সব গাছ কেটে ফেলা হবে কাল সকাল থেকে। জঙ্গল বিক্রি হয়ে গিয়েছে বোধহয়।’
লাফিয়ে উঠেছে সে দলবল নিয়ে। ‘মানে? আমাদের এই অঞ্চলের ফুসফুস হল সেগুন বাগিচা। আর সেটা বিক্রি হয়ে যাবে! অসম্ভব। হতে দেওয়া যাবে না। কি বলিস তোরা?’
যুবক দল হইহই করে উঠেছে, ‘অসম্ভব। হতে দেওয়া যাবে না। আটকাতেই হবে। রক্তবিন্দু দিয়ে আটকাব আমরা।’
—ভাই, এর মধ্যে এমএলএ, কাউন্সিলর সবাই জড়িয়ে। ব্যাপারটা বুঝতে পারছিস তো?
—হ্যাঁ, প্রত্যয়ী উত্তর ছিল তার। শোন, আজ রাত থেকে আমরা ঘেরাও করে রাখব জঙ্গল। এখনই বেরিয়ে পড়। সবাইকে খবর দে। যে যার সাইকেল নিয়ে চলে আসুক রাতের খাবার খেয়েই। আটকাতেই হবে। অতগুলো গাছ! ভাবতে পারছিস? নাহ! আমরা থাকতে এ হতে পারে না।
‘ওকে বস। তাই হবে। তুই যা বলবি তাই হবে,’ সম্মিলিত উত্তর এল।
রাত থেকে ঘেরাও হয়ে গেল সেগুন বাগিচা জঙ্গল। সাইকেলের পর সাইকেল জমা হচ্ছে একে একে। এলাকার যত ছেলে আছে সবাই জুটেছে এসে।
—গাছেরা কথা বলে শুনতে পাচ্ছিস?
রাতের বাতাস দুদ্দাড় করে বয়ে চলেছে গাছেদের শরীর ছুঁয়ে। খসখস শব্দ! ঝিরঝির শব্দে কথা বলে গাছেরা। পাখিরা, এ গাছ ও গাছ করে। ভয়ার্ত কোনও রাতজাগা পাখি আচমকা চিৎকার করে ওঠে। ঝরে পড়া পাতা মাড়িয়ে চলে যায় কোনও প্রাণী! এক অপূর্ব উপলব্ধি!
সে বলল, ‘রাতের এই নিঃশব্দ অবস্থায় অনুভব করা যায় গাছেদের কথা। ভাবতে পারিস ওরা এখনও জানে না ওদের মাথার ওপর মৃত্যুর পরোয়ানা জারি হয়েছে! কাল আচমকা খুনির দল ঝাঁপিয়ে পড়বে! ওরা তো পালিয়েও যেতে পারবে না! শিকড় এতদূর ছড়িয়ে গিয়েছে মাটির ভেতরে। মানুষ উদ্বাস্তু হয়! মানুষ মানুষকে উদ্বাস্তু করেছে! শিকড় থেকে উচ্ছেদ করেছে। মানুষ তবুও পালিয়ে আসতে পেরেছে! কিন্তু গাছ? হেহ! ছায়া দিচ্ছে...অক্সিজেন! কত প্রাণীর বাস! তার দল নেই! রাজনীতি নেই! ভোট নেই! কারওর থেকে কিছু চাওয়ারও নেই! শুধু দিয়ে যায়!’
তরুণের দল চুপচাপ শোনে। বলে, ‘বস। উচ্ছেদ হতে দেব না।’
—তোর আমার ঠাকুরদারাও তো উচ্ছেদ হয়ে এসেছিল। শিকড় থেকে টেনে উপড়ে ফেলা হয়েছিল!
—হ্যাঁ রে!
ভোর হতেই গাড়ি এসে পড়ল একে একে। আধুনিক সাজসরঞ্জাম নিয়ে। ট্রাক্টর এসেছে। হতবাক তারা। জঙ্গল ঘিরে রেখেছে শতাধিক ছেলে! বুঝিয়ে কাজ হল না যখন, তখন ভয় দেখানো শুরু হল। পুলিস এল। এমএলএ, কাউন্সিলর চলে এলেন।
সে সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল, ‘আমাদের মৃতদেহের উপর দিয়ে জঙ্গল কাটতে হবে। আমাদের অ্যারেস্ট করার চেষ্টা করবেন না। এখানেই সুইসাইড করব আমরা। এই জঙ্গল আমরা কাটতে দেব না। বিক্রি হতে দেব না।’
সেদিনের মতো পুলিস চলে গেল। গাছ কাটার গাড়ি গেল ফিরে। ছেলেরা উল্লাসে চিৎকার করল।
বিকেলে সেই মেয়ে এল তার সাইকেলে চেপে সঙ্গে আরও কয়েকটি মেয়ে। কেউ কেউ শাড়ি। কেউ কেউ ফ্রক।
লিডার মতো মেয়েটি সাইকেল থেকে নেমে বলল, ‘আমরাও এলাম। আমি আপনাদের এমএলএ-র মেয়ে।’
—চিনি তো তোমাকে। শৌরসেনী?
—হ্যাঁ।
—তুমি এসেছ বাবা জানে?
—হ্যাঁ, আটকাতে পারেনি। বিষ খাব বলেছি। ওর বাবা এখানকার কাউন্সিলর। ও ঝুমকো। ও এসেছে।
হতবাক সকলে তখনও। বিহ্বলতার ভাব কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই শৌরসেনী বলল, ‘এই যে, অবাক হচ্ছ কেন তোমরা? ছেলেরাই শুধু সব পারও নাকি?’
শৌরসেনীর মুখে আলো। বললেন, ‘সেগুন বাগিচা সেদিন আমাদের ও মিলিয়ে দিয়েছিল কী আশ্চর্যভাবে, বলো?’
‘প্রতিদান!’ হাসলেন অপরাজিত। ‘গাছেরা ঋণ রাখে না!’
—তোমাকে ভালোবেসেছিলাম তারও কত আগে থেকে! তুমি জানতেই না! সাইকেল নিয়ে যখন ঘুরতে, আমাদের গলি দিয়ে যেতে তখন থেকে! তুমিও তো আমাদের বাড়ির জানলার দিকে এক পলক তাকিয়ে চলে যেতে!
—এমএলএ-র মেয়ে, তায় ডাকসাইটে সুন্দরী ওইটুকুই তো সাহস ছিল! ভাগ্যিস সাইকেল ছিল! না হলে যে কী হতো! ওই রাতে অতজন জমা হতে পারতাম না! আমাদের লড়াইয়ে সাইকেলের কিন্তু বড় ভূমিকা ছিল। হারিয়ে তো দিলাম তোমার বাবাকে! মেয়েকেও কেড়ে নিলাম!
বলিরেখা মুছে গিয়েছে অপরাজিতের মুখ থেকে। পরিবর্তে সেই তারুণ্য ঝলমলে মুখ।
—সাইকেলটা কতদিন ব্যবহার হয় না!
—আমি তেল দিই, মুছি। সাইকেলে চড়া তোমাকে দেখেই তো প্রেম! লজ্জার বর্ণনাতীত এক রং ছড়িয়ে পড়েছে প্রৌঢ় শৌরসেনীর মুখে। বললেন, ‘তুমি হয়তো জানো না, বাবি সাইকেলটা নিয়ে সন্ধের দিকে বেরয় ওর বান্ধবীকে দেখতে!’
—কী বলছ! সত্যি? কিন্তু আজকালকার মেয়েরা তো বাইক চড়া মাসলম্যান পছন্দ করে!
ঘাড় নাড়লেন শৌরসেনী, ‘উঁহু। ভেতরে ভেতরে পরিবর্তন আসছে। ওদের যেমনটা বাইরে থেকে দেখো সবটাই সেটা নয়। তোমারই তো ছেলে! ওরা গ্রিন করিডর মুভমেন্ট করছে। ওরা পলিউশন আটকাতে সাইকেলের ব্যবহারে ক্যাম্পেইন করছে! অ্যাকসিডেন্ট ও কম হবে তাতে।’
সমস্ত যন্ত্রণা যেন ধুয়ে মুছে যাচ্ছে অপরাজিতের। ফিরে গিয়েছেন তারুণ্যে। হাঁ হয়ে শুনছেন। বললেন, ‘আমাকে তো এসব কিছু বলোই না!’
—অভিমানের কিছু নেই। তুমিও তো মায়ের ক্লোজ ছিলে বেশি। ও যে তোমার মতোই হয়েছে আমার আনন্দ সেটাই। একটা বড় খবর দিই, তোমাকে জানাতেও বলেছিল বাবি। কাল লেকের বড় গাছ কাটার বিরুদ্ধে ওরা যাচ্ছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে ছেলেমেয়ে আসছে। আর সকলেই যাচ্ছে সাইকেলে!
উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে চোখ শৌরসেনীর।
প্রতিবেশীর উঠোনে গাছেদের শবদেহগুলো পড়ে আছে এখনও। দাঁতে দাঁত চেপে তীব্র ক্রোধ সংবরণ করলেন তিনি। ভেতরে কান্নার স্রোত, ‘কষ্ট পেওনা। গাছগুলোর দিকে তাকানো যাচ্ছে না জানি। কত মানুষ এভাবে উদ্বাস্তু হচ্ছে রোজ। মরে যাচ্ছে! বাবিদের দিকে তাকাও। আমি শক্তি পাচ্ছি। পাল্টাবে। এইভাবেই পাল্টাবে।’ বিড়বিড় করলেন অপরাজিত, ‘ক্ষমা করে দিস। পারলে ক্ষমা করে দিস রে।’