সম্পত্তিজনিত মামলা-মোকদ্দমায় সাফল্য প্রাপ্তি। কর্মে দায়িত্ব বৃদ্ধিতে মানসিক চাপবৃদ্ধি। খেলাধূলায় সাফল্যের স্বীকৃতি। শত্রুর মোকাবিলায় সতর্কতার ... বিশদ
ক্যাব থেকে নেমে অর্জুনকে দেখে হাত নাড়ল রিনি। ব্লু জিনসের ওপর ইয়ালো শার্ট। শার্টের রঙে ম্যাচ করা মাস্ক ঢেকে দিয়েছে রিনির পাতলা ঠোঁট দুটো। অর্জুন ভাবে, লিপস্টিকের দিন গেল। এখন মাস্ক বাজার কেড়ে নিয়েছে। এখন জামা-কাপড়ের সঙ্গে ম্যাচ করে চাই রঙিন মাস্ক।
অর্জুন জোর পায়ে হেঁটে রিনির কাছে চলে আসে। বলে, ‘কী ব্যাপার ম্যাম? কাল রাত থেকে আজ সকালের মধ্যে কী এমন ঘটল? মানে সকালেই একেবারে... বাড়ির সবাই ঠিক তো?’ রিনি আঙুল দিয়ে কপালে হামলে পড়া চুল সরিয়ে নেয়। চোখেমুখে চিন্তার বিস্তার ছড়িয়ে বলে, ‘তোমার সঙ্গে খুব খুব খুব জরুরি কথা আছে। ফোনে বলার নয়। তাই তোমাকে কষ্ট দিলাম।’ ওদের পাশ দিয়ে হুস করে একটা এস-টেন ছুটে গেল। দেখে রিনি বলল, ‘ওমা, এই বাসটা তো এখান দিয়েই যায়। শুধু শুধু ক্যাবের ভাড়া গুনলাম।’ অর্জুন বলল, ‘বাস তো চলছে। তবে নিয়মকানুনের তো বালাই নেই। রিস্ক নাওনি ভালো করেছ। এখন বলো তো কী হেতু এত জরুরি তলব?’
রিনিকে খুবই চিন্তিত দেখায়। মাথা নিচু করে থাকে। অর্জুন নাড়া দেয়। বলে, ‘কী হল রিনি? এনিথিং রং?’ রিনি মাথা তোলে। ম্যানিকিওর করা রঞ্জিত দু’আঙুলের কাজে চোখ ঢেকে দেওয়া লকস সরিয়ে নেয়। রিনির এই আদবকায়দাগুলি দেখার মতো। রিনি সরাসরি তাকায় অর্জুনের চোখে। অর্জুন ভ্রূ নাচিয়ে প্রশ্ন সাজিয়ে দেয়। রিনি খানিক অপলক তাকিয়ে থাকে অর্জুনের চোখে। তারপর চোখে মুখের রেখায় এক অদ্ভুত দীপ্তি ছড়িয়ে বলে, ‘অ্যাই কোথাও একটু বসা যায় না? কোথাও একটু বসে কথা বলতে পারলে ভালো হতো।’
‘পাগল? এই করোনার বাজারে কাফে রেস্তরাঁ সবার শাটার নামানো। মাঠে ঘাসে বসলে এখন আওয়াজ খেতে হবে। তারচেয়ে চলো না হাঁটতে হাঁটতে আউট্রাম ঘাটের কাছে যাই। ওখানে গঙ্গার হাওয়া আছে। এখন ময়দান ফাঁকা। মাস্কটাকে খুলে একটা সিগারেটে খানিক দম দিতে পারব।’ রিনি আদুরে গলায় বলল, ‘কিন্তু ওই বাবুঘাটে বড্ড গ্যাঞ্জাম, বাসের ধোঁয়া।’ অর্জুন বলল, ‘ওখানে এখন ফাঁকাই হবে। চলো হাঁটতে থাকি।’ রিনি বলল, ‘তাই চলো।’ বলে পা বাড়াতে গিয়েও কোমরে দু’হাত রেখে ঘুরে দাঁড়ায়। তারপর চোখ ও চিবুক শক্ত করে অর্জুনের চোখে তাকায়। বলে, ‘তুমি আবার এই আনলাকি শার্টটা পরে এসেছ আজ। তোমাকে না বলেছি এই শার্টটা তুমি পরবে না। তুমি কেন পরে এসেছ?’
‘আরে বাবা এই আনলকে আর আনলাকি বলে কিছু নেই। তাছাড়া এসব বাজে সংস্কার তুমি ছাড়তে পার না?’
‘বাজে সংস্কার নয় মশাই। যে ক’দিন তুমি এই শার্টটা পরে এসেছ, হয় ঝগড়া হয়েছে তোমার সঙ্গে। আর নয়তো শেষটা ভালো হয়নি। তুমি এমন একটা কিছু করেছ বা বলেছ যে, মনখারাপ নিয়ে ফিরতে হয়েছে আমাকে।’ কথা শেষ করে রিনি আগের মতো করেই অর্জুনের জামার বুকের কাছে খামচে ধরতে যাচ্ছিল। অর্জুন নিজেকে বাঁচিয়ে একটা পাক খেয়ে ঘুরে দাঁড়াল। বলল, ‘নো নো ম্যাম, ডোন্ট বি সিলি। ডোন্ট ট্রাই টু টাচ মি। সোশ্যাল ডিস্টেন্সিং। মোদিজি নে কেয়া বোলা শুনা নেহি?’ রিনি বলল, ‘সত্যি গো, কবে যাবে এই আপদ করোনা? আবার কবে তোমার জামার বোতাম খুলে তোমার বুকে মুখ লুকোব?’
‘এখন আপাতত মাস্কে মুখ লুকোও। নাও চলো।’
ওরা হাঁটতে শুরু করে। এ যেন এক সত্যিকারের দুঃস্বপ্নের নগরী। অতিমারীর আতঙ্কে সব স্তব্ধ হয়ে আছে। সত্যিই দুঃস্বপ্নের মতো কোত্থেকে এক ভাইরাস এসে কেড়ে নিয়ে গেছে অর্জুনের সাধের কলকাতাকে। একেবারেই অচেনা এক কলকাতা! তবে অজানা নয়। রাস্তাঘাট সব একইরকম আছে। অর্জুনের মনে হয়, ওরা যেন এক নির্জন অরণ্যে ঢুকে পড়েছে। যে মহানগরীকে জন অরণ্যের তকমা দেওয়া হয়েছে, সেই মহানগরী এখন শুধুই এক কংক্রিটের অরণ্য। সারি সারি বহুতলগুলো যেন সেই সত্যজিতের ছবির গানের মতো, ‘যত আদিম মহাদ্রুম’। আর অরণ্যে পাখির ডাকের মতো মাঝে মাঝে ডেকে উঠছে আনলকে ছাড় পাওয়া কোনও মোটরগাড়ির হর্ন।
অর্জুনের প্রায় গা ঘেঁষে স্পিডোমিটারে প্রায় একশোতে তুলে কর্কশ হর্ন বাজিয়ে ছুটে গেল একটা বিলাসী গাড়ি। রিনি প্রায় আর্তনাদ করে ওঠে। অর্জুনও ঘাবড়ে যায়। রাস্তার একেবারে ধারে প্রায় ছিটকে সরে আসে ওরা। দাঁড়িয়ে পড়ে। রিনি চোখ পাকিয়ে শাসনের ভঙ্গি করে। বলে, ‘তুমি মাঝ রাস্তায় উঠে গেছ কেন?’ অর্জুন ভাবে, সত্যিই তো তারই ভুল। রিনি বলে, ‘এক্ষুনি একটা কাণ্ড ঘটাচ্ছিলে তো। অ্যাক্সিডেন্ট হলে বেঘোরে মরতে হবে এখন। হাসপাতালে যাওয়ার কি কোনও উপায় আছে? গাড়ি নেই, ঘোড়া নেই। থাকলেও হাসপাতালে গিয়ে আর এক হ্যাপায় পড়তে হবে।’
অর্জুন অপরাধীর মতো গালের ঠাস বুনোট দাড়ি চুলকোতে থাকে। বুকটা এখনও কাঁপছে তার।
রিনি এগিয়ে এসে অর্জুনের চুলের মুঠি ধরে টান দিয়ে কী বলতে গিয়ে কথা ঘুরিয়ে নেয়। বলে, ‘এ বাবা, মাথা তো তোমার হাজারিবাগের জঙ্গল হয়ে গেছে, তাই তোমাকে কেমন যেন একটু অন্যরকম লাগছে। আমি তখন থেকে ভাবছি। চুল কাটোনি কেন?’
‘এখন সেলুনে গিয়ে মরব নাকি?’
‘সেটা ঠিক। যেও না এখন। চলো এসো হাঁটি।’
ওরা আবার হাঁটতে শুরু করে। রিনি বলে, ‘দেখো অর্জুন, কেমন মজার ব্যাপার, এই কলকাতায় লোকের ভিড়ে হাঁটা যেত না। তখন ভাবতাম, এত লোক কোত্থেকে আসে? সেই কলকাতায় দেখো আজ মনে হচ্ছে কিছু লোকের ভিড় থাকলে ভালো হতো। কেমন মনে হচ্ছে না এই শহরে কেউ আমাদের দেখার নেই। কোনও বিপদ হলে কাউকে যে ডাকবে তুমি পাবে না। সব ভোঁ ভাঁ।’ অর্জুন মাস্কটাকে সিধে করতে করতে বলল, ‘কিছু লোক তো অফিস করছে। আর একটু পরে পাঁচটা বাজলে তুমি কিছু লোকের সাড়াশব্দ পাবে। তবে বিপদ হলে পাশে পাবে, সে গুড়ে বালি। করোনা এসে আমাদের অনেক কিছু কেড়ে নিয়েছে। কলকাতার সেই চিরাচরিত মানবিক মুখ আর নেই। মানুষ মরে পচে গেলেও কেউ আজ আর এগতে চায় না।’
‘সেটা ঠিক। পরপর ক’টা ঘটনা ঠিক একই রকম ঘটে গেল। অর্জুনের গলায় সুর আছে। সে নচিকেতার একটা গানের প্যারোডি করে গেয়ে ওঠে, ‘ভয় ভয় ভয় পাছে তার করোনা হয়...’ রিনির চাউনি কেমন উদাস হল খানিক। অর্জুন বলল, ‘ছাড়ো ওসব। এখন বলো তো রিনি তোমার জরুরি কথাটা কী।’ রিনি বলল, ‘চলো না। বাবুঘাটে গিয়ে কোথাও বসে বলব। ব্যাপারটা একটু সিরিয়াস। ব্যাপারটাকে তুমি হালকাভাবে নিও না প্লিজ।’
‘তোমার কোন কথাটা হালকাভাবে নিয়েছি বলো? তুমি তিনটে বলেছ, আমি দুটো চল্লিশ থেকে দাঁড়িয়ে।’
বাবুঘাটে পৌঁছে মাস্কটাকে থুতনিতে ঝুলিয়ে দিল অর্জুন। জিনসের বাঁ পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট টেনে নিল মুঠোয়। ফস করে একটা জ্বেলে নিয়ে জ্বলন্ত দেশলাই কাঠিটাকে টোকা মেরে ফেলতে গিয়ে চোখ তুলল। দেখল পাঁচিলের কাছে এগিয়ে গেছে রিনি। ওর দৃষ্টি ভাসিয়ে দিয়েছে জলে। অর্জুন নিঃশব্দে পেছনে গিয়ে একটু দূরত্ব রেখেই দাঁড়াল। কিছু বলল না। পেছন থেকে রিনিকে দেখতে বেশ লাগছে। মনে হচ্ছে যেন বহু যুগ পরে রিনিকে দেখছে। কিন্তু রিনি আজ কী এমন জরুরি কথা নিয়ে এসেছে? এই মুহূর্তে সেই কৌতূহল তাড়না তুলে দিল অর্জুনের মনে। ঠিক তখনই পেছনে তাকিয়ে রিনি বলল, ‘তোমার কি আমার কথাটা জানা বা শোনার ইচ্ছে আছে?’ অর্জুন দেখল, রিনির চোখে মুখের রেখায় গভীর কোনও ভাবনা ভর করে আছে। এক অদ্ভুত রূপান্তর। যেন অন্য রিনিকে দেখছ সে। রিনি এতক্ষণ গঙ্গার শোভা দেখছিল না তাহলে। অর্জুনের অনীহা দেখে অভিমানে মুখ ফিরিয়ে ছিল। তাই কি? অর্জুন বুঝল, রিনি মনে মনে কোনও ঝড় বয়ে এনেছে। সে কথা আরও বেশি করে মনে হল, রিনিকে ঠিক এই মুহূর্তে সত্যিই খুব চিন্তিত দেখাচ্ছে। অর্জুন তড়িঘড়ি পরিস্থিতি সামাল দিল। বলল, ‘আমি তো সে কথাই ভাবছি, জরুরি কথাটা বলতে এসে গঙ্গা দেখতে চলে গেলে কেন? আমি সিগারেট টানছি বলেই তোমার কাছে যাইনি। এ সময় প্যাসিভ স্মোকার না হওয়াই ভালো। কী জানি, তলে তলে আমিও উপসর্গহীন করোনার ক্যারিয়ার কি না।’ রিনি রিনরিন করে আদুরে গলায় ঝংকার তুলে দিয়ে বলল, ‘কী সব বাজে বাজে কথা বলো, যা মুখে আসে তাই বলে দাও। শুনেই আমার বুক কাঁপছে দেখো।’
‘উপায় নেই।’
‘কী? কী উপায় নেই?’
‘ওই তোমার হার্টবিট পরখ করে দেখার। সোশ্যাল ডিস্টেন্সিং...’ রিনি হেসে ফেলে। বলে, ‘ধ্যাৎ, তুমি দেখছি সেই লকডাউনেই পড়ে আছো। আনলকের তাহলে মানে কী? কাছে আসতেও যেন কেমন বাধো বাধো ভাব তোমার। তাহলে এলে কেন?’
‘তোমার জরুরি তলব কেন? সেটা জানব বলে।’
‘সে তো জরুরি কথা আছেই। তার বাইরে কি কিছু নেই? আজকে তুমি যেন কেমন ফর্মাল বিহেভ করছ আমার সঙ্গে। ঠিক নর্মাল নও।’
কথাটা অর্জুনের মগজের কোথায় গিয়ে এক সূক্ষ্ম খোঁচা দিল। আবার মনে করিয়ে দিল পৃথিবীর রিনিদের একটা তৃতীয় নয়ন থাকে। সেই চোখে সব ধরা পড়ে যায়। অর্জুন ভাবে, সে কি এত অল্পেই ধরা পড়ে গেল রিনির কাছে? অর্জুন একটু নিজেকে সামলে নিতে আরও একটা সিগারেট ধরায়। সরে আসে রিনির কাছ থেকে খানিক তফাতে। তারপর সারসের মতো গলা তুলে গলগল করে ধোঁয়া ছাড়ে। যেন ধোঁয়ার সঙ্গে সে তার জড়তাকে খাঁচা ছাড়া করে দিতে চায়।
রিনি বলল, ‘এত ঘন ঘন কেন খাচ্ছ?’ অর্জুন সে কথায় আমল না দিয়ে বলল, ‘এখন বলো তো তোমার জরুরি কথাটা কী।’ রিনি বলল, ‘অত দূর থেকে বলার নয় কথাটা। চলো ওখানে গিয়ে বসি।’ বলে রিনি ওর তর্জনী তুলে অদূরে শান বাঁধানো গোল বেদিটা দেখিয়ে এগিয়ে গেল। অর্জুন পিছু নিল। তবে বসল না। রিনি বলল, ‘কই এসো, বোসো এখানে।’ অর্জুন হাতের সিগারেট দেখিয়ে বলল, ‘এটা শেষ করি আগে।’
‘তুমি কি আমার পাশে বসে খাওনি আগে?’
‘খেয়েছি। বাট নাও ইট শুড নট বি ডান। বিকজ সিচ্যুয়েশন ওয়াজ ডিফারেন্ট দেন।’ কথা শেষ করে অর্জুন সেই হাসিটা হাসল। যে হাসিটা রিনির সবচেয়ে বেশি পছন্দ। রিনি মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে থাকে অর্জুনের দিকে। ভাবে, এই তো অর্জুন। ওর খুব চেনা অর্জুন। তিন মাস দেখা নেই, সাক্ষাৎ নেই। কী জানি সব ঠিকঠাক আছে তো? রিনির মনের তারে এই সব হাবিজাবি ভাবনার একটা ছোট্ট পাখি এসে বসে দোল খাচ্ছে, আবার উড়ে যাচ্ছে।
নিজের পরিস্থিতির কথা আর ভাবতে পারছে না রিনি। বেশ কাটছিল দিনগুলো। হঠাৎ একটা ভাইরাস এসে সব এলোমেলো করে দিল। ভাইটার চাকরি গেল লকডাউনে। ওদের কোম্পানি আর রাখল না। প্রথম মাসের মাইনেটা ঠিক ঠাক দিলেও পরের মাসে স্যালারি কাট। হাফ দিল। আর এমাসে তো মুখের ওপর জবাব দিয়েছে। ছোট সংস্থা আর টানতে পারছে না। দশজনকে বসিয়ে দিল। রিনির চাকরিটার কবে যে কী হবে! নাম প্যানেলে থাকলেও কবে যে শিকে ছিঁড়বে কে জানে। এদিকে বাবার পেনশন আর বাড়িভাড়ার ওই ক’টা টাকাই সম্বল। কী করে যে চলবে! ক’দিন ধরে এসব ভেবে ভেবে কোনও থই পাচ্ছে না রিনি। ভাইটার মুখের দিকেও তাকাতে পারছে না সে। হঠাৎই কাল রাতে বালিশে মুখ গুজে অর্জুনের কথা মনে হয়েছে তার। মনে হয়েছে, অর্জুনই তো মুশকিল আসান হতে পারে। ওদের অ্যাড এজেন্সির বিশাল ব্যাপার। দু’একজনের চাকরিও করে দিয়েছে অর্জুন। সে কি রিনির ভাইয়ের একটা হিল্লে করে দিতে পারে না? নিশ্চয়ই পারে। সেই তো রিনির জরুরি কথা। অর্জুনকে সে কথাটা বলতেই তো ছুটে এসেছে সে। কিন্তু কথাটা যে রিনি কীভাবে বলবে অর্জুনকে, কী কথা কোথায় গড়াবে, নাকি কোনও গৌরচন্দ্রিকা না করে সপাটে বলবে কথাটা। ভাবতে থাকে রিনি। অর্জুনের কাছে রিনির সংকোচ হওয়ার কথা নয়। কিন্তু অর্জুনকে সে যেন আজ ঠিক আগের মতো করে পাচ্ছেও না। গভীর ভাবনার অতলে ডুবে আছে রিনি। মাথা নিচু করে স্থবিরের মতো বসে সে ভাবতে থাকে। ভাবে, সিগারেট শেষ করে অর্জুন কাছে এসে বসলেই দুম করে কথাটা বলে ফেলবে সে। সে আর এই কথার ভার বইতে পারছে না।
অর্জুন সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে লক্ষ করে রিনিকে। গভীর দৃষ্টিপাত যাকে বলে। অর্জুন ওর কর্নিয়ার ক্যামেরা ধরে রাখে মাথা নিচু করে ভাবনার অতলে ডুব দেওয়া রিনিকে। অর্জুন বেশ বুঝতে পারে, ভাবে, রিনি কোনও একটা গভীর সমস্যায় পড়েছে। নাহ, এবার আর তারানা না ভেজে জিজ্ঞেস করবে ব্যাপারটা কী। অর্জুন আবার একথাও ভাবে, ব্যাপার আর যা-ই হোক না কেন, রিনির একটা কথা কিন্তু আজ সত্যি হয়ে যাবে। অর্জুনের এই শার্টটা ওর সত্যিই আনলাকি। আজও ওকে মনখারাপ নিয়েই ফিরতে হবে। কারণ, লকডাউনে অর্জুনের চাকরিটা যে গেছে, আজ যখন রিনি এসেছে, তখন কথাটা ওকে বলেই দেবে সে।