সম্পত্তিজনিত মামলা-মোকদ্দমায় সাফল্য প্রাপ্তি। কর্মে দায়িত্ব বৃদ্ধিতে মানসিক চাপবৃদ্ধি। খেলাধূলায় সাফল্যের স্বীকৃতি। শত্রুর মোকাবিলায় সতর্কতার ... বিশদ
আবার যখন তিনি হালকা মুডে থাকতেন তখন তিনি একেবারে অন্য ছায়া দেবী। পরিচালক অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়ের ‘নদী থেকে সাগরে’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন তিনি। মিঠুন চক্রবর্তীর প্রথম বাংলা ছবি। অরবিন্দবাবুর সঙ্গে দিদি-ভাইয়ের সম্পর্ক ছিল ছায়া দেবীর। তাঁকে নিজের হাতে সোয়েটার বুনে দিয়েছিলেন। সেটে তাঁর জন্য দারুণ সব রান্না করে নিয়ে যেতেন। অরবিন্দবাবু বলতেন, ‘ছায়াদির মতো সেন্স অব হিউমার কারও নেই।’ বাবার কাছ থেকে শোনা একটা গল্প বলছিলেন অরবিন্দবাবুর ছেলে অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়। একদিন অভিজিৎবাবুর বাবা, ছায়া দেবী এবং আরও কয়েকজন গাড়ি করে সেন্ট্রাল এভিনিউর দিক থেকে আর জি কর হাসপাতালের দিকে যাচ্ছিলেন। শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ে নেতাজির মূর্তি সকলেরই দেখা। গাড়ি যখন ওখানে দাঁড়িয়ে তখন হঠাৎ ছায়া দেবী অরবিন্দবাবুকে বলে ওঠেন, ‘ঢুলু, দেখ ঘোড়ার ওপর থেকে নেতাজি গোলবাড়ির কষামাংসের দিকে কেমন তাকিয়ে রয়েছেন। নেতাজি নিশ্চয়ই কষা মাংস খেতে খুব ভালোবাসতেন।’
ঘুরে ফিরেই ছবি বিশ্বাসের অভিনয়ের প্রশংসা করতেন ছায়া দেবী। শুধু তো ছবি বিশ্বাস নন, কমল মিত্র আর পাহাড়ী সান্যালের নায়িকা হিসেবেও অনেক ছবিতে কাজ করেছেন তিনি। এঁদের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে একবার তিনি বলেছিলেন, ‘সবাই ঠিকঠাক ছিলেন। ওঁদের সঙ্গে কখনও খটাখটি হয়নি আমার। সকলের সঙ্গেই ভালো সম্পর্ক ছিল।’ তবে, উনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন, ছবি বিশ্বাসের মতো টোটালিটি আর কারও মধ্যে নেই। অথচ উনি ওঁর গুণের কদর সেভাবে কোনওদিন পাননি। ছায়া দেবী আর ছবি বিশ্বাস এই দু’জনকে নিয়েই ‘ছায়া-ছবি’। অভিজাত চরিত্রে ছবি বিশ্বাস থাকলেই তাঁর ঘরনির চরিত্রে ছায়া দেবী সব পরিচালকেরই প্রথম পছন্দ ছিলেন। এক সাক্ষাৎকারে ছায়া দেবী বলেছিলেন, ‘ছবিবাবু কথাবার্তা খুব ভালো বলতেন। মজার মজার কথা বলতেন। উনি বলতেন, সব সময় বলতে হবে বাচ্চা শুয়োর। তাহলে আর ব্যাপারটা গালাগালের পর্যায়ে থাকবে না।’ ছবি বিশ্বাস সম্পর্কে অসীম শ্রদ্ধা থাকলেও তাঁর সামনে কিন্তু সবসময় কপট রাগ দেখাতেন ছায়া দেবী। বলতেন, ‘যে দিকে যাব শুধু ছবি বিশ্বাস, আর যেন কেউ নেই।’ ছবি বিশ্বাসও রহস্য করে নিজের কপালে টোকা মেরে বলতেন, ‘ সবই কপাল ম্যাডাম, সবই কপাল। জীবনে কত কী করার ছিল, কিছুই হল না।’ শৈল্পিক অতৃপ্তি দু’জনেরই ছিল। এই ধরনের মহান শিল্পীদের ক্ষেত্রে যেটা খুবই স্বাভাবিক।
একবার ছবি বিশ্বাসের সঙ্গে একটি অভিনয়ের দৃশ্যে ভয়ানক কাণ্ড হয়েছিল। সিনটা ছিল, ছায়া দেবী ওঁর টাই ধরে জোরে টেনে ধরবেন। পরিচালক অ্যাকশন বলা মাত্র, তিনি টাই ধরে মারলেন এক পেল্লাই টান। সিনটা শেষ হয়ে যাওয়ার পর ছবি বিশ্বাস পরিচালককে ডেকে বলেছিলেন, ‘শুনুন, এই শট যদি এনজি (নট গুড) হয় তাহলেও এই শট আমি আর দেব না। কারণ ম্যাডাম যা জোরে টাই ধরে টেনেছিলেন, আর কিছুক্ষণ সিনটা চললে আমার প্রাণটাই চলে যেত।
(ক্রমশ)