সম্পত্তিজনিত মামলা-মোকদ্দমায় সাফল্য প্রাপ্তি। কর্মে দায়িত্ব বৃদ্ধিতে মানসিক চাপবৃদ্ধি। খেলাধূলায় সাফল্যের স্বীকৃতি। শত্রুর মোকাবিলায় সতর্কতার ... বিশদ
ইতিমধ্যে অবৈধ কয়লার কারবার সিল করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। ভাটা মালিকদের দাবি, বৈধভাবে সম্পূর্ণ কয়লা কিনে ইট প্রস্তুত করতে গেটে ইটের দাম এক লাফে অনেকটাই বেড়ে যাবে। অত বেশি দামে ইট বিক্রি হবে কি না, তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভাটা মালিকের দাবি, বহু বছর আগে ইসিএল আমাদের কয়লা দিত। তার বদলে আমরা কিছু ইট দিতাম। কিন্তু এখন তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ইসিএলের কয়লার যা দাম, তা দিয়ে ভাটা চালানো সম্ভব নয়। তাই বাধ্য হয়েই আমাদের এই পথ অবলম্বন করতে হয়।
পশ্চিম বর্ধমান ছাড়াও রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় একটি বড় শিল্প হল ইটভাটা। এই জেলাতেই ৮৫০টির বেশি ভাটা রয়েছে। প্রতি জেলাতেই ভাটায় কয়েক হাজার মানুষ কাজ করেন। ইট ভাটার শ্রমিকরা মূলত পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বিহার ঝাড়খণ্ড থেকে আসেন। পুজোর পর থেকেই শ্রমিকরা ভাটায় আসতে শুরু করেন। নভেম্বরের শেষ সপ্তাহেই মাটি থেকে কাঁচা ইট তৈরি করে তা ভাটায় পাতার কাজ শুরু হয়। ডিসেম্বরের শুরুতেই ভাটায় ফায়ারিং অর্থাৎ কয়লা দিয়ে আগুন জ্বালানো হয়। ইট পোড়ানোর জন্য বর্ষার আগে পর্যন্ত চলে এই কাজ চলে। তারপর ইট পোড়ানোর কাজ বন্ধ যায়।
সিবিআই হানায় এবার সেই সিডিউলে বদল আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তার কারণ কয়লার সঙ্কট। এক লক্ষ ইট পোড়াতে প্রায় ৩০ টন কয়লা লাগে। বড় ভাটাগুলিতে একটি মরশুমে এক হাজার টন কয়লার প্রয়োজন হয়। কিন্তু সিবিআই হানায় প্যাডের মাধ্যমে কয়লা পাওয়ার রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ঘুরপথে আসা ‘কালো হীরার’ সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
কয়লার অবৈধ সিন্ডিকেট থেকেই পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, নদীয়া, বর্ধমান সব জায়গায় ইটভাটায় কয়লা যেত। কোটি কোটি টাকার কারবার হতো। এটাই রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু কেন অবৈধ পথে পা বাড়িয়েছিলেন অধিকাংশ ইটভাটার মালিক?
অনেকে বলছেন, অতিরিক্ত মুনাফার জন্যই দু’নম্বরী কয়লা কেনেন অধিকাংশ ভাটা মালিক। ইট পোড়ানোর জন্য উন্নতমানের কয়লার দরকার হয় না। পাথুরে অনুন্নত কয়লা এক টন দেড় থেকে দু’হাজার টাকা দরে মাফিয়াদের সঙ্গে সেটিং করে পাওয়া যায়। সেই কয়লাই ইসিএলের ডিও মাধ্যমে কিনতে হলে ছ’ হাজার টাকারও বেশি দাম পড়ে। তবে খাতায় কলমে ব্যবসা ঠিক রাখতে অনেকেই নকল ‘ডিও’-র আশ্রয় নেয়। এক ভাটা মালিকের দাবি, আমরা ইসিএলের থেকে কয়লা কিনি না। কিন্তু টাকার বিনিময়ে ডিওর কাগজ সংগ্রহ করে রাখি। যাতে তদন্ত হলে আমরা তা দেখাতে পারি।
সিবিআইয়ের ধারাবাহিক অভিযানে এক অভূতপূর্ব সঙ্কটে পড়েছেন অধিকাংশ ভাটা মালিক। এই সময়েই ভাটাতে কয়লার ব্যাপক চাহিদা থাকে। কিন্তু, অবৈধ কয়লা ভাটায় যাচ্ছে না। তাতেই থমকে গিয়েছে ইট প্রস্তুতির কাজ। কয়লা সঙ্কটের জেরে ইটের দাম বাড়ার আশঙ্কা প্রবল হচ্ছে। রানিগঞ্জ এলাকার এক ভাটা মালিকের দাবি, প্রথমত ইসিএল বা অন্য কোথা থেকে বৈধ উপায়ে কয়লা কেনার ঝক্কি রয়েছে। তারপর সেই দামি কয়লা দিয়ে ইট তৈরি করতে গেলে, একটি ইটের দাম ১৫ থেকে ২০টাকা হবে। পরিস্থিতি ‘স্বাভাবিক’ না হলে ইটের দাম বৃদ্ধি সময়ের অপেক্ষা।