প্রেম-প্রণয়ে কিছু নতুনত্ব থাকবে যা বিশেষভাবে মনকে নাড়া দেবে। কোনও কিছু অতিরিক্ত আশা না করাই ... বিশদ
পঞ্চাশ বছরে পড়েই কেমন যেন আমূল বদলে গিয়েছে সম্পূর্ণার জীবন। শরীরে বড়সড় বদল ঘটেছে। সেই সঙ্গে মনে মনেও বড্ড ভেঙে পড়েছেন। জীবনের সব রং-রূপ যেন কেউ শুষে নিয়েছে। কোনও কিছুতেই মন লাগে না। নিজের জন্যও আলাদা করে সময় দিতে ইচ্ছে করছে না। সাজগোজে মতি নেই। মন নেই সঠিক খাওয়াদাওয়ায়। শরীরই বা এই অত্যাচার সহ্য করবে কেন? এক সময় সেও প্রতিশোধ নিতে শুরু করল। এই অবহেলাই ক্রমশ রূপান্তরিত হল অপুষ্টিতে। সম্পূর্ণার শরীর হয়ে উঠল রোগের আঁতুরঘর।
বয়স বাড়লে বদল আসবে শরীরে
বয়সের সঙ্গে শরীরের কিছু এমন বদল ঘটে যা এড়ানো অসম্ভব। সেই বদলগুলোকে মেনে নিয়েই জীবনে এগিয়ে যেতে হবে জানালেন গাইনোকলজিস্ট ডাঃ সুভাষ বিশ্বাস। তাঁর বক্তব্য, পঞ্চাশ বছর নারীর জীবনে শুধুমাত্র একটা সংখ্যা নয়, বরং একটা বড় মাইলফলক। এই সময় মেয়েদের শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোনের ঘাটতি দেখা দেয়। নানারকম শারীরিক বদলের সঙ্গে তখন খাপ খাইয়ে নিতে হয়। ঘুম কমে যায়, শরীর হঠাৎ হঠাৎ গরম হয়ে যায়, অদ্ভুত এক দুর্বলতা আসে। নিজের শরীর যেন নিজেরই নাগালের বাইরে চলে যায়। ফলে পঞ্চাশের পর থেকেই মেয়েদের বিশেষ যত্নের প্রয়োজন।
জীবনের দ্বিতীয় ইনিংস
শারীরিক এই বদলের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো অনেক মহিলার পক্ষেই বেশ কঠিন হয়ে ওঠে। তাই বলে ভেঙে পড়লে চলবে না। বরং পঞ্চাশ বছর থেকে নব উদ্যমে জীবনের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করতে হবে। সাজপোশাকে ঔজ্জ্বল্য আনতে হবে। খাওয়াদাওয়ায় নিয়ম আনতে হবে। নিজের প্রতি আবার নতুন করে যত্ন নেওয়া শুরু করতে হবে। ডাঃ বিশ্বাসের মতে, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের দেশে মহিলাদের মধ্যে ঔদাসীন্য লক্ষ করা যায়। তাঁরা ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করেন না, সাজগোজে কেমন যেন বুড়োটে ভাব এনে ফেলেন, নিজেদের ইচ্ছেগুলোও প্রকাশ করতে দ্বিধা করেন। কিন্তু এমন মনোভাব বদলাতে হবে। বরং নব আনন্দে জীবনের স্বাদ নেওয়া শুরু করতে হবে।
ডাক্তারি পুষ্টি
বছর আটচল্লিশ বা পঞ্চাশ থেকে নারী শরীরে হরমোনের যে বদল ঘটে, তার সঙ্গে পাল্লা দিতে বাড়তি কিছু পুষ্টির প্রয়োজন হয়। সেই পুষ্টি খানিকটা খাদ্য থেকে পাওয়া যায় ঠিকই, কিন্তু কিছুটা আবার ওষুধের মাধ্যমেও দিতে হয়। শারীরিক বদলের পর প্রয়োজন অনুযায়ী ইস্ট্রোজেন হরমোন ইঞ্জেকশন দিতে হয় অনেক মহিলাকে। কার কতটা প্রয়োজন, সেটা চিকিৎসক ঠিক করেন। অনেকের হয়তো আদৌ এই ইঞ্জেকশন দরকার হয় না। এছাড়া পঞ্চাশ বছরের পর ক্রমশ মহিলাদের শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দেয়। সেক্ষেত্রে তাঁদের এই বয়সে ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খেতে হয়। বয়স বেড়ে গেলে অনেকেই ঘরবন্দি হয়ে পড়েন। তখন শরীরে ভিটামিন ডি-এর অভাব দেখা দেয়। সেরকম হলে ক্যালসিয়ামের সঙ্গে ভিটামিন ডি ট্যাবলেটও খেতে হয়। তবে এর
মধ্যে কোন ওষুধ খাবেন এবং কী ডোজে খাবেন, তা অবশ্যই ঠিক করবেন ডাক্তার।
খাওয়াদাওয়ার রুটিন বদল
বয়স বাড়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে খাওয়াদাওয়ার রুটিনেও বদল আনা জরুরি, জানালেন ডায়েটিশিয়ান সুদেষ্ণা মৈত্র নাগ।
ইস্ট্রোজেন কমে যাওয়ার ফলে একটা বয়সের পর মেয়েদের শরীরের মেটাবলিজর হার কমতে থাকে। ফলে অনেক মহিলা পঞ্চাশের পর থেকে হঠাৎ মোটা হতে শুরু করেন। তাই এই বয়সে সাধারণত ফ্যাট আর কার্বোহাইড্রেট একটু কম খাওয়াই ভালো। বিশেষত ফ্যাটযুক্ত খাবার যেমন মিষ্টি, ভাজা, মাখন, তেল ইত্যাদি যতটা সম্ভব কম খাওয়া উচিত।
ইস্ট্রোজেন হরমোনের অভাবে অনেকের আবার রক্তচাপ বেড়ে যায়। খাবারে নুনের পরিমাণ কমিয়েও অনেকে ফল পান না। মনে রাখবেন, রেডি টু ইট ফুড, বাজারচলতি মশলার পেস্ট ইত্যাদিতেও প্রচুর পরিমাণে নুন থাকে। ফলে প্রেশার বেড়ে গেলে শুধু নুন নয়, এই ধরনের খাবারও কম খেতে হবে।
ইস্ট্রোজেনের ঘাটতির ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যায়। ক্যালসিয়ামের সেই অভাব পূরণ করতে দুধ ও দুধের তৈরি খাবার রোজকার ডায়েটে নিয়ে আসুন। দুধ সহ্য হলে সব চেয়ে ভালো, না হলে ছানা, পনির ইত্যাদি রোজ খাবেন। অনেকের দুধে অ্যালার্জি থাকে, তাঁরা সয়া মিল্ক খেতে পারেন।
এই বয়সে মহিলাদের শরীরে প্রোটিনের খুবই প্রয়োজন। তাই মাছ, চিকেন, ডিমের সাদা দু’বেলা খাওয়া উচিত। না পারলে রাজমা, সয়াবিন, ডাল অবশ্য খাবেন।
হরমোনের তারতম্যে অনেক সময় শরীরে টক্সিনের প্রাদুর্ভাব ঘটে। তখন ম্যালিগন্যান্সির সম্ভাবনা দেখা দেয়। এই সম্ভাবনা এড়াতে প্রচুর পরিমাণে ফল ও সব্জি খেতে হবে। তাছাড়া এই বয়সে সয়াবিন, ফ্ল্যাক্সিড, চিয়াসিড জাতীয় খাবার খাওয়া উপকারী। ফ্ল্যাক্সিড, চিয়াসিড হোল-গ্রেন। দিনে ১ চামচ হোল-গ্রেন মধ্যবয়স্ক মহিলাদের জন্য খুবই প্রয়োজন। এগুলো অতিরিক্ত টক্সিন শরীরে জমতে দেয় না। সব্জির মধ্যে এই বয়সে ব্রকোলি বেশ উপকারী। ফলের ক্ষেত্রে আপেল খুবই ভালো। তাছাড়াও বেরি জাতীয় ফল, গ্রিন টি এই সবও মধ্যবয়সের মহিলাদের ডায়েটে রাখা উচিত।
শেষ কথা
সব বয়সেই জীবনে একটা ছন্দ থাকা দরকার। মনে রাখবেন, আপনি সব সময়ই অপরিহার্য। তাই ভালো থাকুন, আনন্দে থাকুন, জীবনটা চুটিয়ে উপভোগ করুন। বয়স বাড়ে বাড়ুক, জীবনের তাল কাটতে দেবেন না।