প্রেম-প্রণয়ে কিছু নতুনত্ব থাকবে যা বিশেষভাবে মনকে নাড়া দেবে। কোনও কিছু অতিরিক্ত আশা না করাই ... বিশদ
হবে এবং সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে একটা বিরতি আসবে। কিন্তু তা হয়নি। উল্টে সীমান্তে সংঘর্ষ বাড়িয়ে দিয়েছে পাকিস্তান। সম্প্রতি রাজ্যসভায় তথ্য পেশ করেছেন প্রতিরক্ষা রাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রীপদ নায়েক: গত ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলতি বছরে পাকিস্তান ৩,১৮৬ বার সংঘর্ষ বিরতি লঙ্ঘন করেছে। ১৭ বছরের মধ্যে সর্বাধিক। গত আগস্ট পর্যন্ত এবছর ২৪২ বার গোলাগুলি চালিয়েছে তারা, জম্মু লাগোয়া আন্তর্জাতিক সীমান্তে। তাতে ৮ ভারতীয় জওয়ান শহিদ হয়েছেন এবং দু’জন জখম হয়েছেন। মহিলা ও শিশুসহ অনেক নিরীহ গ্রামবাসীও হতাহত হয়েছেন। এখানেই থামেনি পাকিস্তান। রকমারি জঙ্গি গোষ্ঠীর মাধ্যমে ছায়াযুদ্ধটাও অব্যাহত রেখেছে।
মার্চের গোড়ার দিকে ‘হু’ কোভিড-১৯ প্যানডেমিক ঘোষণার পরই নড়েচড়ে বসে আইসিস। তাদের সাপ্তাহিক নিউজ লেটার ‘আল-নবা’ মারফত তারা শরি’ই নির্দেশ পাঠায় যে, ‘করোনা হইতে সাবধান’। আল্লাহর উপর ভরসা রাখার পাশাপাশি মাস্ক পরা-সহ স্ট্যান্ডার্ড স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলতেই বলা হয়। হুঁশিয়ার করা হয়, কোনওভাবেই সংক্রামিত হওয়া চলবে না। মহামারী ছড়িয়ে পড়া এলাকাতে কেউ ঢুকবে না।
এটা থেকেই নিশ্চয় কেউ কেউ বিভ্রান্ত ও আশাবাদী হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু ভুল ভাঙতে খুব দেরি হয়নি। আফ্রিকা, আফগানিস্তান-সহ নানা জায়গায় ছোট বড় জঙ্গি নাশকতা ঘটিয়েই তারা এই ভুল ভাঙিয়ে দেয়। জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটিতে সন্ত্রাসবাদী কাজকর্মের উপর গবেষণা বিভাগের ডিরেক্টর আলেকজান্দার মালেয়াগ্রৌ-হিচেনস সম্প্রতি ওয়াশিংটন টাইমস-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেছেন, তারা বরং জিহাদিদের উদ্দেশে এই বার্তা রটিয়ে দিয়েছে যে,
শত্রু এবং নাস্তিকদের শায়েস্তা করার জন্য করোনা আসলে ঈশ্বর প্রেরিত একটা সুযোগ। এটাকে কাজে লাগাতে হবে। আমেরিকার ফাউন্ডেশন ফর ডিফেন্স অফ ডেমোক্রেসিজ-এর বিশিষ্ট ডিফেন্স অ্যানালিস্ট বিল রোজিও বলেন, তালিবান এবং আল কায়েদার মতো কিছু সন্ত্রাসবাদী সংগঠন প্রচার করছে যে,
করোনা হল অধঃপাতে যাওয়া পশ্চিমি সংস্কৃতির বিরুদ্ধে ঈশ্বরের এক চরম আঘাত। তারা মনে করে, আমেরিকা, ভারত এবং আফ্রিকা ও ইউরোপের কিছু দেশে হামলা করার এটাই সুবর্ণ সুযোগ। এই সময় আঘাত হানতে পারলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করা যাবে। কারণ, এই দেশগুলোর সরকার, এবং আর্মিও করোনা মোকাবিলা নিয়ে এখন ব্যতিব্যস্ত।
সম্প্রতি ইউরেশিয়ান টাইমস এক রিপোর্টে জানিয়েছে, এই মুহূর্তে আল কায়েদার প্রধান লক্ষ্য ভারতের উপর আঘাত হানা—বিশেষভাবে কাশ্মীর অঞ্চলে। অযোধ্যায় রাম জন্মভূমিতে মন্দিরের শিলান্যাসের দিন (৫ আগস্ট) পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিরা হামলার হামলার ব্লু প্রিন্ট সাজিয়ে ফেলেছিল বলে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর কাছে খবর ছিল। তাদের কাছে আরও খবর ছিল, এজন্য খান পাঁচেক জঙ্গি টিমকে আফগানিস্তানে ট্রেনিং দিয়ে রেডি করা হয়েছিল। লস্কর এবং জইশের ছেলেদের ওই ট্রেনিং দিয়েছিল পাকিস্তানের আইএসআই এক্সপার্টরা। উল্লেখ্য, গত বছর ৫ আগস্ট তারিখেই কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বাতিল করা হয়েছিল। তাই একই দিনে কাশ্মীর এবং দিল্লিতেও হামলার প্ল্যান করেছিল পাকিস্তান। সৌভাগ্য যে ভারতের তৎপরতায় পুরোটাই বানচাল হয়ে গিয়েছে।
বছর খানেক ধরে একটা ট্রেন্ড লক্ষ করা যাচ্ছে, জঙ্গি ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হাতে অস্ত্র পৌঁছে দিতে পাকিস্তান এখন ড্রোনের উপরেই ভরসা রেখেছে। ড্রোনে চেপে সীমান্ত পেরিয়ে কাশ্মীর উপত্যকার গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে পড়ছে একে-৪৭, প্রচুর কার্তুজ, অ্যাসল্ট রাইফেল, পিস্তল সহ নানা ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র। গত ২২ সেপ্টেম্বর রাতে আখনুরের জাদ-সোহাল গ্রামে স্থানীয় পুলিস এরকম কিছু অস্ত্রশস্ত্র বাজেয়াপ্ত করেছে। এসে পৌঁছেছে মোট দু’টো কনসাইনমেন্টে। এই নষ্টামিতে কুখ্যাত জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদের যোগ রয়েছে। প্রমাণ পেয়েছে পুলিস। উল্লেখ্য, হাড় হিম করা পুলওয়ামা হামলা এই সংগঠনেরই কুকীর্তি। তবে শুধু কাশ্মীর নয়, ফের পাঞ্জাবকেও টার্গেট করেছে পাকিস্তান। গত অক্টোবরে পাক সীমান্ত লাগোয়া পাঞ্জাবের গ্রামেও পাওয়া যায় একে-৪৭ রাইফেল, গ্রেনেড এবং স্যাটেলাইট ফোন। বিএসএফ নিশ্চিত যে পাকিস্তানি ড্রোনের মাধ্যমেই ওগুলো এদেশে এনে ফেলা হয়েছিল। ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন ‘খালিস্তান জিন্দাবাদ ফোর্স’ (কেজেডএফ)। ভারতের স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে গত ১৪ আগস্ট পাঞ্জাবের মোগা জেলায় রাজ্য সরকারি অফিসের মাথায় দুষ্কৃতীরা ‘খালিস্তানি পতাকা’ তোলে। সেই অভিযোগে দিল্লি পুলিসের স্পেশাল সেল দুই যুবককে গ্রেপ্তার করেছে।
পুলিসের দাবি, ধৃতরা কেজেডএফ-এর সক্রিয়
সদস্য। আমেরিকা ভিত্তিক বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘শিখস ফর জাস্টিস’(এসএফজে)-এর সঙ্গেও
তারা যুক্ত। এসএফজে পাঞ্জাব রাজ্যকে ভারতের থেকে বিচ্ছিন্ন করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
খালিস্তানি উগ্রপন্থী সন্দেহে ১৫ সেপ্টেম্বর পাঞ্জাব পুলিস দু’জনকে ইউএপিএ-তে গ্রেপ্তার করেছে। আরও পাঁচ খালিস্তানি জঙ্গির সঙ্গে এরা এক গভীর ষড়যন্ত্রে যুক্ত বলে দাবি করেছেন পাঞ্জাব পুলিসের ডিজি দীনকর গুপ্ত। তাঁর আরও দাবি, ওই পাঁচজনের মধ্যে রয়েছে অমৃতসর জেলে বন্দি কেজেডএফ সদস্য শুবদীপ সিং। এরা সকলেই পাকিস্তানের মদতপুষ্ট খালিস্তানি জঙ্গি মডিউলের অংশ। এদের হেফাজত থেকে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে অনকেগুলো ভয়ানক অস্ত্রশস্ত্র ও ইলেক্ট্রনিক সরঞ্জাম। চীনের তৈরি একটা ড্রোন উদ্ধারের সূত্রে ২০১৯-এর সেপ্টেম্বরে শুবদীপকে গ্রেপ্তার করা হয়। তখন এনআইএ-র কাছে খবর ছিল যে কেজেডএফ প্রধান রণজিৎ সিং পাকিস্তান থেকে আগ্নেয়াস্ত্র, বিস্ফোরক এবং জাল নোট ড্রোনের মাধ্যমে ভারতে ঢোকাচ্ছে। সেই থেকেই বিশেষভাবে সতর্ক রয়েছে জম্মু ও কাশ্মীর, পাঞ্জাব, হরিয়ানা এবং দিল্লি পুলিস। তাদের মিলিত গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতেই গত ১৫ সেপ্টেম্বর অমৃতসরের কাছ থেকে হরজিৎ সিং এবং শমশের সিং নামে দু’জনকে পাকড়াও করা হয়। পাঞ্জাব পুলিসের দাবি, এই সাকসেসফুল অপারেশনের দৌলতে একটা বড় ধরনের জঙ্গি হামলার ঘটনা রুখে দেওয়া গেল।
সম্প্রতি কেরল এবং মুর্শিদাবাদে এনআইএ-র হাতে ন’জন সন্দেহভাজন জঙ্গি পাকড়াও হওয়ার ঘটনাকেও একটা বড় সাফল্য হিসেবে দেখতে হবে। কারণ, বিশ্বজুড়ে শান্তি বিঘ্নিত করার যে চক্রান্ত জারি রয়েছে, এরা তারই অংশ হতে পারে। অবশ্য এটা নিয়ে, বিশেষ করে বাংলায় যে রাজনৈতিক তরজা চলছে তা অনভিপ্রেত। বুঝতে অসুবিধা হয় না, এই তরজার লক্ষ্য মে, ২০২১। একের পর এক জঙ্গি কার্যকলাপ এটাই বুঝিয়ে দিচ্ছে যে, করোনা মোকাবিলার পাশাপাশি জঙ্গি মোকাবিলার সমস্ত ধরনের কর্মসূচিও অব্যাহত রাখতে হবে। বরং জঙ্গি মোকাবিলায় গুরুত্ব বাড়ানো জরুরি। মনে রাখতে হবে, এজন্য ধর্মীয় বিদ্বেষ বা ভেদাভেদ একেবারেই ভুল পথ, ভুল পদক্ষেপ। একটি শ্রেণীকে অকারণ শত্রুভাবাপন্ন করে তুললে কাজটা বরং জটিল ও কঠিন হয়ে যাবে। এসময় ভেদাভেদ দূর করার উপরেই বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। এই কাজে মোদি সরকার আন্তরিক হলে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে হবে প্রধানমন্ত্রীর ‘সবকা সাথ সবকা বিশ্বাস’-এর ঘোষণাটাকে। এই প্রসঙ্গে সম্প্রতি কেন্দ্রের তরফে নেওয়া কাশ্মীর প্যাকেজের উল্লেখ করা যায়: জম্মু ও কাশ্মীরের ব্যবসায়ীদের জন্য ১,৩৫০ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজ নেওয়া হয়েছে। জায়গা বিশেষে এই ধরনের পদক্ষেপ আরও বাড়ানো উচিত। তেলেঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ প্রভৃতি রাজ্যে মাওবাদী কার্যকলাপের ধারভার নষ্ট করতেও এই ধরনের প্যাকেজ একটা ভালো পথ। সতর্ক থাকতে হবে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো সম্পর্কেও। কারণ, ইসলামি, শিখ, মাওবাদী এবং অন্য ধারার বিচ্ছিন্নতাবাদীরাও এই মওকায় ঘনিষ্ঠ হতে চাইবেই। আরও বেশি করে পাশে রাখা দরকার বন্ধু প্রতিবেশী বাংলাদেশ, মায়ানমার, ভুটান ও নেপালকে।