প্রেম-প্রণয়ে কিছু নতুনত্ব থাকবে যা বিশেষভাবে মনকে নাড়া দেবে। কোনও কিছু অতিরিক্ত আশা না করাই ... বিশদ
স্বাধীনতার পর থেকে নেতাদের কাছে সাধারণ মানুষের কথা কখনও গুরুত্ব পায়নি। তাদের কথা সবার শেষে ভাবা হতো। এই প্রথম কল্যাণকামী উদ্যোগ, পরিকাঠামো ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি এবং বিশ্বমঞ্চে নতুন ভারত উদয়ের ফসল সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছল। ‘অন্ত্যোদয় থেকে রাষ্ট্রোদয়’—বিশ্বমঞ্চে ভারতের অনবদ্য উত্তরণই ‘এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত’-এর অর্থ উপলব্ধিতে এনে দিল। এখানেই মোদিজির ব্যক্তিত্বের মহিমা যে আমাদের সংস্কৃতি, মানসিক গঠন এবং জনগণের আবেগকে উপলব্ধি করেছেন এবং সেগুলিকে জাতীয়তাবাদের সঙ্গে যুক্ত করেছেন। জনগণের ক্ষমতাকে জাতিগঠনের কাজে লাগানোর এটি একটি দারুণ দৃষ্টান্ত। নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছনোর জন্য বহুত্বের একটি বিশাল ঐক্য কীভাবে ভাবনাচিন্তা এবং কাজ করে, অর্থাৎ জাতি গঠন করে—এটি তারই একটি অনবদ্য দৃষ্টান্ত। প্রধানমন্ত্রীর মহান উদ্যোগে সমস্ত গ্রাম, গরিব, যুবক-যুবতী, কৃষক এবং মহিলা ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। এইভাবেই নিশ্চিত হয়েছে ‘সবকা সাথ, সবকা বিশ্বাস’। হতে পারে এটা ‘বেটি পড়াও, বেটি বাঁচাও’ অথবা ‘উজ্জ্বলা যোজনা’। এর চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে সবার শেষে যে মানুষটি রয়েছে কল্যাণ প্রকল্পের আশীর্বাদটি তার কাছে পৌঁছে দেওয়া। মহিলাদের মধ্যে আত্মমর্যাদা এবং আত্মনির্ভরতার শক্তি সঞ্চার করা। এই প্রসঙ্গে ‘তিন তালাক’ বাতিলের কথাটি ভুলি কী করে। এটির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী নারীশক্তির সম্মান ফিরিয়ে দিয়েছেন এবং আইনসংগত উত্তরাধিকারের দিকটি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছেন। আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নতি এবং সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য গত ছ’বছরে বিভিন্ন ধরনের কল্যাণ প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।
দেশবাসীর মূল সমস্যাগুলি সম্পর্কে আমাদের প্রধানমন্ত্রী বিশেষভাবে অবহিত ছিলেন। সেইমতো অনেক স্কিম নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা তার একটি। এটির মাধ্যমে গরিব গৃহহীনদের জন্য তিন কোটি বাড়ি তৈরি করে দিয়েছেন। স্বাধীনতার পর থেকে জনসংখ্যার একটি বিরাট অংশকে অন্ধকারে রেখে দেওয়া হয়েছিল। ‘হর ঘর বিজলি’ স্কিমের মাধ্যমে প্রায় চার কোটি পরিবার বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়ে সুখে জীবনযাপন করছে। দারিদ্রসীমার নীচের আট কোটি পরিবারের জন্য রান্নার গ্যাসেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই প্রথম কোনও প্রধানমন্ত্রী মহিলাদের রান্নার কষ্ট নিয়ে ভাবলেন এবং তাঁদের অনেক রোগের হাত থেকে বাঁচালেন। এমনকী, প্রায় ১২ কোটি কৃষককে ‘পিএম কিষাণ সম্মান যোজনা’য় সম্মানিত করা হয়েছে। ২৩ কোটির বেশি নাগরিক ‘মুদ্রা যোজনা’য় উপকৃত হয়েছেন। ‘আয়ুষ্মান যোজনা’য় চিকিৎসার সুযোগ পেয়েছেন ৫০ কোটি ভারতবাসী। হর ঘর নাল, পিএম আবাস যোজনা, সৌভাগ্য যোজনা, ওয়ান নেশন ওয়ান রেশন কার্ড, আয়ুষ্মান ভারত প্রভৃতি প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামীণ এবং গরিব মানুষের কল্যাণ ও উন্নয়ন নিশ্চিত হয়েছে। দীর্ঘকাল অবহেলিত কৃষকদের কল্যাণে নেওয়া হয়েছে পিএম শস্য, পিএম কৃষি সেচ, এমএসপি, কিষাণ সম্মান নিধির মতো অনেক প্রকল্প। স্কিল ইন্ডিয়া, স্ট্যান্ড আপ ইন্ডিয়া, স্টার্ট আপ ইন্ডিয়া, মেক ইন ইন্ডিয়া এবং মুদ্রা যোজনা প্রভৃতি যুবক-যুবতীদের স্বনির্ভর ও আত্মমর্যাদাসম্পন্ন করে তুলেছে। এগুলি দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে সাহায্য করেছে। মোদিজির ভারত-কেন্দ্রিক ‘স্টেটসম্যানশিপ’-এর মাহাত্ম্য এটাই যে আমাদের পৌরাণিক, সাংস্কৃতিক এবং আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যকে বিশ্বের দরবারে তিনি পুনঃপ্রতিষ্ঠা দিতে পেরেছেন। নমামি গঙ্গে, বিশ্ব যোগ দিবস, অযোধ্যায় শ্রীরাম মন্দির, কাশী বিশ্বনাথ মন্দির এবং মহাপ্রয়াগ কুম্ভে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মাধ্যমে ভারত বিশ্বের কাছে বিরল স্বীকৃতি আদায় করে নিয়েছে। যোগশাস্ত্রের উপর ভিত্তি করে রাষ্ট্রসংঘ ২১ জুন দিনটিকে ‘বিশ্ব যোগ দিবস’ ঘোষণা করেছে। দু’শোর বেশি দেশ আজ ভারতের এই মহান সংস্কৃতি এবং আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যকে অনুসরণ করছে। এটা কোনও মামুলি ব্যাপার নয়। এটা নিঃসন্দেহে একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর অতি মানবীয় উদ্যোগের ফসল। ২০১৯-এ প্রয়াগ কুম্ভে ২৪ কোটি পুণ্যার্থী গিয়ে দেখে এসেছেন ভারতের ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক জাঁকজমক কাকে বলে! এটি একটি মাইলস্টোন। প্রধানমন্ত্রীর অভিভাবকত্বে এটি ‘দিব্য কুম্ভ ভাব্য কুম্ভ’-এ রূপান্তরিত হয়েছে—ইউনেস্কো যেটাকে মানবজাতির ‘অনধিগম্য ঐতিহ্য’-এর মান্যতা দিয়েছে। এ এমন এক সম্মান সারা ভারত চিরকাল মনে রাখবে।
দেশ কয়েক দশক যাবৎ নিরাপত্তা সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সেগুলির শুধু মুখতোড় জবাব দিয়েই ক্ষান্ত হননি, সেখানে এক শক্তিশালী ভারতকেও প্রতিষ্ঠা করেছেন। চ্যালেঞ্জ শুধু উত্তর-পূর্ব থেকে আসেনি, এসেছে পশ্চিম এবং উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত থেকেও। উন্নয়নের যে শৃঙ্খল প্রধান রচনা করেছেন তাতে যোগ্যতার সঙ্গে যুক্ত করেছেন উত্তর-পূর্ব ভারতকে। ‘লুক ইস্ট’ নীতির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী উত্তর-পূর্বের জন্য পরিকাঠামোগত সুবিধা এনে দিয়েছেন। অন্যদিকে, ‘অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি’র মাধ্যমে পূর্ব এশীয় সুযোগ-সুবিধাগুলি উত্তর-পূর্বের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। ৩৭০ এবং ৩৫এ অনুচ্ছেদ বাতিল—ভারতীয়দের বহু দশকের চাহিদা ছিল। এটি নিশ্চিত করে প্রধানমন্ত্রী ‘এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত’ কথাটিকে আরও জোরদারভাবে প্রতিষ্ঠা দিলেন। উত্তর-পূর্ব এবং কাশ্মীর—দুই জায়গাতেই শান্তি ও সংহতির পরিবেশ ফিরে এসেছে এবং সেখানকার মানুষজন উন্নয়নমুখী হয়ে উঠেছেন।
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে, প্রধানমন্ত্রী ‘বন্ধুদের’ সঙ্গে ‘বন্ধুত্বের’ বিষয়টিকে বিশেষ উচ্চতায় যেমন নিয়ে গিয়েছেন, তেমনি শত্রুদের জন্যও রেখেছেন কড়া বার্তা। লক্ষ্য যখন দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব, তখন প্রধানমন্ত্রীর আলোচনা এগোয় সেইমতো গৃহীত বিদেশনীতির ভিত্তিতে। যে প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে আমরা সার্জিকাল স্ট্রাইক এবং এয়ার স্ট্রাইক করেছি তারা আর আমাদের চোখে চোখ রাখতে সাহস পায় না। এই প্রসঙ্গে মনে রাখতে হবে, সুপার পাওয়ার আমেরিকা আজ ভারতকে তার ‘স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার’ গণ্য করে এবং ইউরোপও ভারতের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও সামরিক সহযোগিতা গড়তে চায়।
উত্তরপ্রদেশের সৌভাগ্য হল—কাশী এখানে। এটি বাবা বিশ্বনাথের সবচেয়ে প্রাচীন নগরী এবং বারাণসী কেন্দ্র থেকে দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন আমাদের প্রিয় প্রধানমন্ত্রী। ছ’বছর আগে প্রধানমন্ত্রী ‘আমার কাশী’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। কাশীধাম আজ প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিত্বের প্রতীক। জননী এবং জন্মভূমি দু’টিই স্বর্গের অধিক গর্বের। এই প্রাচীন বাণীকে প্রধানমন্ত্রী তাঁর জীবনচর্যার অঙ্গ করে তুলেছেন। পবিত্রতা এবং নিষ্ঠার সঙ্গেই প্রধানমন্ত্রী তাঁর সমস্ত দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। ভগবান শ্রীরামচন্দ্রের কাছে প্রার্থনা করি, ‘এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত’-এর রূপকার মোদিজি আমাদের জীবনকে চিরদিনের জন্য সুন্দর করতে প্রয়াসী থাকুন।
প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে লিখেছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী। মতামত ব্যক্তিগত