প্রেম-প্রণয়ে কিছু নতুনত্ব থাকবে যা বিশেষভাবে মনকে নাড়া দেবে। কোনও কিছু অতিরিক্ত আশা না করাই ... বিশদ
কয়েক মাস ধরেই ভীষণ কষ্টে ভুগেছেন জারকা। কাটা নাকের ক্ষত যেন আরও দগদগে হয়ে উঠেছিল মনের তীব্র কষ্টে। বুঝেই উঠতে পারছিলেন না, কোন দোষে জীবন এমন শাস্তি দিল তাঁকে।
আফগানিস্তানের খাইরকট জেলার ২৮ বছরের গৃহবধূ জারকার জীবনে দু’মাস আগে নরক নেমে এসেছিল। ১০ বছরের বিবাহিত জীবনে ৬ বছরের এক ছেলের মা তিনি। তবু প্রায় প্রতিদিনই স্বামীর হাতে বেদম পিটুনি খান। তবে ওই দিন যেন সব সীমাই ছাড়িয়ে যায়। বাড়ির পাশের বাগানে তাঁকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যান তাঁর স্বামী। ছুরি হাতে ভয়ঙ্কর মূর্তি ধরেন। নির্মমভাবে কেটে নেন তাঁর নাক। রক্তের নদীতে ভাসতে থাকেন জারকা। তাঁর আর্তনাদে ছুটে আসেন আশপাশের মানুষ। পালিয়ে যান স্বামী। জারকাকে প্রথমে স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। কেউ একজন নিয়ে আসেন তাঁর নাকের বিচ্ছিন্ন অংশ। তবে ওই চিকিৎসক জানান, তাঁর পক্ষে নাক জোড়া লাগানো সম্ভব নয়। এ পরিস্থিতিতে দম যেন বন্ধ হয়ে আসছিল জারকার। তখন তাঁকে চিকিৎসার জন্য কাবুল নেওয়া হয়। এদিকে জারকার অবস্থা ক্রমশ খারাপ হতে শুরু করে, তাঁর নাকের কাটা অংশে সংক্রমণ দেখা দেয়। কাবুলের চিকিৎসক জালমাই তাঁকে অ্যান্টিবায়োটিক সহ নানা ধরনের ওষুধ দেন। প্রাথমিক চিকিৎসার পর বাড়ি ফিরে যান জরকা। পাঁচ সপ্তাহ পরে আবার কাবুলে আসেন। শুরু হয় চিকিৎসার পরবর্তী পর্ব। ২১ জুলাই ২০২০ তাঁর নাকের কাটা অংশ জোড়া লাগাতে অস্ত্রোপচার করেন জালমাই।
এত কষ্টের মধ্যেও কিছুটা আশার আলো দেখতে পান জারকা। তাঁর রক্তাক্ত মুখের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। পারিবারিক হিংসার ভয়ঙ্কর চিত্র উঠে আসে। জালমাই বিনামূল্যে জারকার চিকিৎসা করার কথা জানিয়ে পোস্ট করেন। একই সঙ্গে ওষুধের সব খরচও বহন করেন কয়েকজন। জালমাই জারকাকে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি আবার আগের চেহারা ফিরে পাবেন।
পারিবারিক হিংসা নতুন কিছু নয় আফগানিস্তানে। ইউএন পপুলেশনের এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ৮৭% আফগানি নারী কোনও না কোনও ধরনের শারীরিক, যৌন বা মানসিক নির্যাতনের শিকার হন। যার সবচেয়ে খারাপ দিক স্বামী বা পরিবারের পুরুষ সদস্যের দ্বারা হামলার শিকার হওয়া। জারকার ক্ষেত্রে যা হয়েছে।
লেখাপড়া না জানা জারকার বিয়ে ঠিক করা হয় একদম ছোটবেলায়। ১৮ বছর বয়সে স্বামীর ঘরে যান তিনি। তখন থেকেই উগ্র-স্বভাব ও বদরাগি স্বামীর হাতে নির্যাতনের শিকার তিনি। তবে জারকা এবার ভাবছেন সন্তানের জন্য নতুন লড়াইয়ে নামার। নতুন করে জীবনের হাল ধরতে চান তিনি। ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা বিবিসি তাদের অনলাইন সংস্করণের এক প্রতিবেদনে জারকার এই বিভীষিকাময় গল্প তুলে ধরেছে।
হাড়কে আঙুল বানিয়ে বিশ্বজয় মালবিকার
বোমায় উড়ে গেছে দু’ হাতই। চিকিৎসকের ভুলে হাতের হাড় মাংসে ঢাকা না পড়ে বেরিয়ে থাকে। সে কী যন্ত্রণা! প্রাণে বাঁচলেও সেই যন্ত্রণা এখনও সঙ্গী তাঁর। কিন্তু এত কষ্টের পরেও থেমে থাকেননি। বরং জীবনের পথে এগিয়ে চলেছেন। আজ তিনি ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের গ্লোবাল শেপার। সমস্ত প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে ক্রমাগত লড়াই করে যাওয়া এই নারীর নাম মালবিকা আইয়ার। নিজেকে দৃষ্টান্ত হিসেবে রেখে তিনি এখন রাষ্ট্রপুেঞ্জর সদর দপ্তরে মোটিভেশনাল বক্তব্য দেন। মালবিকা বলেন, ‘মাত্র ১৩ বয়েসে গ্রেনেডে হাত উড়ে যায়। আমাকে বাঁচানোর জন্য চিকিৎসকরা দুটো হাতই কেটে বাদ দেন। একইসঙ্গে সেলাই করার সময় আমার হাতের হাড় যে বেরিয়ে আছে, সেটাই খেয়াল করেননি চিকিৎসকরা। ফলে সেলাই হল ভুল জায়গায়। বেরিয়ে থাকল হাতের হাড়।’
শেষে যন্ত্রণার হাত থেকে বাঁচতে ওই হাড়কে রুপোর পাতলা পাতে মুড়ে নেন তিনি। সেই হাড়ই আজ মালবিকার উড়ে যাওয়া হাতের আঙুলে রূপান্তরিত। যা দিয়ে তিনি টাইপ পর্যন্ত করেন! শুধু তাই নয়, তিনি তার পিএইচডিও শেষ করেছেন ওই হাতে টাইপ করেই!
‘মেঘ দেখে কেউ করিস নে ভয় আড়ালে তার সূর্য হাসে’। এটাই মালবিকার জীবনের মন্ত্র। তিনি বলেন, জীবনের সামান্য থেকে সামান্যতম ঘটনাকেও উপভোগ করা উচিত। এক প্রতিবেদনে মালবিকার লড়াইয়ের খবরটি জানিয়েছে এনডিটিভি।