শরীর ভালো যাবে না। সাংসারিক কলহ বৃদ্ধি। প্রেমে সফলতা। শত্রুর সঙ্গে সন্তোষজনক সমঝোতা। সন্তানের সাফল্যে ... বিশদ
করোনার পথ্য হিসেবে নাকি রসগোল্লার ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য?
দেখুন, ডাক্তারদের মতে করোনা প্রতিরোধে প্রোটিন অনিবার্য। খেতেই হবে। সেক্ষেত্রে মিষ্টির মধ্যে রসগোল্লায় প্রোটিনের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। ফলে এই মিষ্টি করোনার পথ্য হিসেবে ব্যবহার করা যেতেই পারে।
রসগোল্লায় খাদ্যগুণের পরিমাণ কত?
খাদ্যগুণের হিসেব অনুযায়ী একটা রসগোল্লা ২টো হাতে গড়া রুটির পরিপূরক। অনেকেই ডায়েট বজায় রাখার জন্য কার্বোহাইড্রেট বেশি খেতে চান না। তাছাড়া এখন এই লকডাউন পরিস্থিতিতে সবাই যখন গৃহবন্দি, হাঁটাচলার সুযোগ কম, তখন কার্বোহাইড্রেট কমানোর দিকে আরও বেশি নজর পড়েছে। অথচ শরীরের শক্তি বজায় রাখতে হলে সঠিক আহার জরুরি। এই অবস্থায় কার্বোহাইড্রেটের বদলে রসগোল্লা খাওয়াই যেতে পারে। পুষ্টিও হল আবার মেদও বাড়ল না।
কিন্তু রসগোল্লায় তো চিনি আছে। তাহলে মেদ কমানোর ক্ষেত্রে তা কীভাবে কাজ করে?
অন্যান্য যে কোনও মিষ্টির তুলনায় রসগোল্লায় চিনির পরিমাণ কম। ফলে অবশ্যই এটি মেদ বাড়তে দেয় না। এছাড়াও রসগোল্লা যেহেতু ফোটাতে হয় সেহেতু এতে জীবাণু থাকে না। ফলে তা অনেক হাইজিনিক।
পুষ্টিগুণের কথায় ফেরা যাক। রসগোল্লার পুষ্টি বিষয়ে একটু বিস্তারিত বলুন।
এই মিষ্টিতে ম্যাগনেসিয়াম আছে প্রচুর পরিমাণে। প্রোটিনেও রসগোল্লা ভরপুর। এর একমাত্র ক্ষতিকর দিক ওই চিনির রসটা। ওটা যদি চিপে খাওয়া যায় তাহলে রসগোল্লার জুরি মেলা ভার। তাছাড়া এখন অতিমারীর সময় করোনার পথ্য হিসেবে রসগোল্লার নাম উঠেছে বটে, কিন্তু পথ্য হিসেবে বা ঘরোয়া টোটকা হিসেবে রসগোল্লার প্রচলন তো বঙ্গজীবনে নতুন নয়। যুগ যুগ ধরে পেটের রোগ সারাতে গরম রসগোল্লা খাওয়ানোর রীতি বাঙালির ঘরে ঘরে প্রচলিত। এবং এটা পরীক্ষিত যে গরম রসগোল্লা খেলে পেটের রোগ সেরে যায়। আজ রসগোল্লার গুণের খাতায় আর একটা নতুন পালক যুক্ত হল এইমাত্র।
লকডাউনের বাজারে অনেকেই বাড়িতে রসগোল্লা বানাচ্ছেন...
এটা তো খুবই আনন্দের কথা। গত বছর লকডাউনের সময় থেকেই বাড়ির গিন্নিদের মধ্যে এই ট্রেন্ড দেখে আমি অভিভূত হয়ে গিয়েছিলাম। বাঙালির জীবনের কতখানি জুড়ে যে রসগোল্লার স্থান, তা এই বাড়িতে রসগোল্লা তৈরির হিড়িক দেখেই বোঝা গিয়েছিল। তখন মিষ্টির দোকান বন্ধ থাকায় বাঙালি তার মিষ্টির চাহিদা মেটাতে বাড়িতেই তা বানিয়ে ফেলেছিল। আমার মনে হয়েছিল গোটা বঙ্গসমাজ যেন একত্রিত হয়েছে এই রসগোল্লার টানে। আমরা সকলেই সেক্ষেত্রে নবীন ময়রার বংশধর।
কিন্তু বাড়িতে তৈরি রসগোল্লা আদৌ কি পাতে দেওয়ার যোগ্য?
অবশ্যই। আরে বাবা নবীনচন্দ্র তো প্রথমে ঘরোয়াভাবেই এই মিষ্টি বানিয়েছিলেন। ফলে নিশ্চয়ই তা বাড়িতে বানানো যায়। তবে কিছু জিনিস খেয়াল রাখতে হয়।
কী রকম?
রসগোল্লার সঠিক নিয়ম আয়ত্তে আনা কিন্তু কষ্টকর। যেমন, দুধ ফোটানোর নির্দিষ্ট তাপমাত্রা লাগে। ছানা কাটানোর আলাদা তাপমাত্রা আছে। এছাড়া ছানার পিএইচ ফ্যাক্টর বজায় রাখতে হয় ইত্যাদি নানা নিয়ম। কিন্তু ঘরোয়া পদ্ধতিতে বানানোর ক্ষেত্রে তো আর এইসব জিনিস নিয়ে মাথা ঘামানো হয় না, তবু কয়েকটা জিনিস জানতেই হবে। প্রথমত, দুধটা খাঁটি গরুর দুধ হওয়া চাই। এবং তা যেন ফুল ক্রিম মিল্ক হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। এবার দেখতে হবে ১ কেজি দুধ ফুটিয়ে যেন ১৬০ গ্রাম ছানা পাওয়া যায়। অর্থাৎ জল ঝরানোর পর এই পরিমাণ ছানা পাওয়া চাই। এরপর ছানা মারা বা বাটা। হাতের তালুর নীচের অংশ দিয়ে করতে হয়। এবং এই ছানা মারার মধ্যেই রসগোল্লার সাফল্য লুকিয়ে আছে। এমনভাবে ছানা মারতে হবে যাতে তা একদম মিহি পেস্ট হয়ে যায়। কোনও দানা যেন না থাকে। দানা থাকলেই রসগোল্লা ফেটে যাবে। এরপর সেটাকে গোল গোল করে ১০ গ্রাম সাইজে ভাগ করে নিতে হবে এবং ফুটন্ত রসে ফেলতে হবে। এই সময় খেয়াল রাখা দরকার যে, রস যেন বেশি মোটা না হয়ে যায়। অর্থাৎ রস যখন ফোটাতে শুরু করবেন তখন থেকেই জলের পরিমাণ চিনির চেয়ে বেশি রাখতে হবে। ফোটানোর ক্ষেত্রেও বলি অন্তত পনেরো মিনিট যেন ফোটানো হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তারপর ঘরোয়া তাপমাত্রায় এনে তা পরিবেশন করতে পারেন।
সুগারের রোগীদের পক্ষেও কি রসগোল্লা উপকারী।
হ্যাঁ উপকারী তবে পরিমাণমতো খাওয়া চাই। আর রোগীর সুগার যেন কন্ট্রোলে থাকে, সেটাও দেখতে হবে। আমি এ বিষয়ে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে দেখেছি, যে চিনির রস চিপে খেলে সুগারের রোগী দিনে একটা রসগোল্লা খেতে পারেন। রোজ না খেয়ে না হয় একদিন অন্তরই খাবেন। তাতে খুব ক্ষতি হয় না, ডঃ সুদীপ চট্টোপাধ্যায় এটা বলেছেন। তবে সুগারের রোগী হলে অবশ্যই ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে তবেই খাবেন রসগোল্লা।