শরীর ভালো যাবে না। সাংসারিক কলহ বৃদ্ধি। প্রেমে সফলতা। শত্রুর সঙ্গে সন্তোষজনক সমঝোতা। সন্তানের সাফল্যে ... বিশদ
করোনাকে জয় করতে চান? তাহলে বাড়িয়ে তুলুন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। এখন প্রশ্ন হল কীভাবে? বিশিষ্ট সেফ গর্ডল র্যামসের মতে মাত্র কয়েকটি খাবারের মাধ্যমেই নাকি তা বাড়িয়ে তলা যায়। কেমন সেই খাবার? আর কী গুণই বা আছে তাতে? চলুন শেফের মুখেই শোনা যাক সে কথা।
রোজকার খাওদাওয়া
শেফ র্যামসে জানালেন, আমাদের রোজকার খাবারের মধ্যেই এমন কিছু উপকরণ রয়েছে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এই করোনাকালে একটু খেয়াল করে সেই উপকরণগুলো রান্নায় ব্যবহার করতে হবে। যে ধরনের উপকরণের কথা শেফ বললেন, তার মধ্যে রসুন রয়েছে এক নম্বরে। ‘যে কোন রান্নায় অল্প দু’-এক কোয়া রসুন থেঁতো করে দিতে পারলেই ব্যস, ইমিউনিটি নিয়ে আর চিন্তা থাকবে না,’ জানালেন শেফ। এছাড়াও আদাও খুব উপকারী বললেন শেফ। তাঁর প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী দিনে একবার অন্তত গ্রিন টি খাওয়া খুব জরুরি। আর আছে লাল ক্যাপসিকাম, ঘরে পাতা টক দই, আমন্ড, চিকেন স্যুপ এবং মাশরুম।
গুণের হিসেব
এবার একে একে এই খাবারগুলোর কী কী গুণ সে বিষয়েও সবিস্তারে জানালেন শেফ র্যামসে। রসুন দিয়েই শুরু করা যাক। শরীরের যে কোষগুলো ভাইরাসে আক্রান্ত হয় সেগুলোকে নষ্ট করে দিতে সাহায্য করে রসুন। এছাড়াও শরীরে প্রয়োজনীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট জোগাতেও তা সাহায্য করে। এরপর শেফ এলেন আদার কথায়। তাঁর মতে একেবারে ছোটবেলা থেকেই সর্দিকাশিতে ঘরোয়া
টোটকা হিসেবে আদার কুচি খাওয়ানো হয়। অতএব বোঝাই যাচ্ছে যে রোগ প্রতিরোধে তা অপরিহার্য। আদার মধ্যে জীবাণুর সঙ্গে লড়াই করার প্রচণ্ড ক্ষমতা রয়েছে। ফলে শরীরে জীবাণু বাসা বাঁধলে আদা তার বিরুদ্ধে লড়াই করে তাকে মেরে ফেলে।
গ্রিন টি প্রসঙ্গে শেফ বলেন, তার মধ্যে যে ধরনের হার্ব রয়েছে তা শরীরের ভেতর থেকে জীবাণু খুঁজে বার করে মারে। এই চা গরম অবস্থায় তো খেতেই পারেন। এমনকী ঠান্ডা পানীয় হিসেবেও খাওয়া যায় এটি।লাল ক্যাপসিকামে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি রয়েছে। আর আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যার ফলে এই সব্জি খেলে আমাদের ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এছাড়াও এতে প্রচুর বিটা ক্যারোটিন রয়েছে যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।ঘরে পাতা টক দই নিয়ম করে খেতে বললেন শেফ। এই খাবার প্রোবায়োটিক। ফলে এটি খেলে আমাদের ইমিউন সিস্টেম চার্জ পায়। দোকানের টক দইও খেতে পারেন তবে তাতে ফ্যাটের পরিমাণ বেশি থাকে বলে তা ততটা উপকারী নয়।আমন্ডের তো গুণের শেষ নেই, বললেন শেফ র্যামসে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন ই, আয়রন, প্রোটিন সব পাবেন এতে। ইমিউনিটি যে বাড়বে তা তো বলাই বাহুল্য।চিকেন স্যুপে ভিটামিন এ এবং সি ছাড়াও আছে ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস এবং প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। সর্দি কাশির সমস্যা তো বটেই এমনকী ফুসফুসের কার্যক্ষমতাও বাড়িয়ে তোলে চিকেন স্যুপ। সহজপাচ্য বলে জ্বর হলেও এই খাবার অতি উপাদেয়।সব শেষে আসি মাশরুমের কথায়। এই খাবারে নাকি এত বেশি পরিমাণে খনিজ পদার্থ আছে যে তা সব রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। শরীরে নিউট্রিশনের জোগান দিতেও মাশরুমের জুরি মেলা ভার।
রেসিপিতে ইমিউনিটি
এই সব খাবারের মধ্যে কয়েকটা শুধু মুখেই খাওয়া যায়। বাকি উপকরণ মিলিয়ে মিশিয়ে দুটো রেসিপি পাঠকদের জানালেন শেফ র্যামসে। চিকেন স্যুপ উইথ মাশরুম
উপকরণ: সেদ্ধ করা বোনলেস চিকেন ৩০০ গ্রাম, মাশরুম কুচি করে কাটা ২০০ গ্রাম, রসুন ও আদা কুচি ১ চামচ করে, চিকেন স্টক ২ কাপ, মরিচ গুঁড়ো পরিমাণ মতো, নুন স্বাদ মতো, মাখন সামান্য।
পদ্ধতি: মাশরুম ভাপিয়ে নিন। কড়াইতে একটু মাখন গলিয়ে নিন। তাতে অল্প গোটা গোলমরিচ থেঁতো করে দিন এবং আদা ও রসুন কুচি দিয়ে দিন। এগুলো একটু নেড়ে নিয়ে চিকেন স্টক দিন। তা ফুটতে শুরু করলে তাতে সেদ্ধ করা চিকেন দিয়ে দিন। তারপর মাশরুম দিন। চিকেন ও মাশরুম একসঙ্গে মিশে গেলে এবং চিকেন স্টক ফুটে উঠলে নুন দিন। নামানোর আগে মরিচ গুঁড়ো ও বাকি মাখন ছড়িয়ে নামিয়ে নিন।
ভেজিস উইথ ইয়োগার্ট
উপকরণ: লাল ক্যাপসিকাম ১টা, মাশরুম ১০০ গ্রাম, গাজর ১টা, লেটুস পাতা কয়েকটা, চেরি টম্যাটো ৬-৭ টা, নুন স্বাদ মতো, মরিচ গুঁড়ো পরিমাণ মতো, জল ঝরানো টক দই ১ কাপ, আদা বাটা ১ চামচ, পেঁয়াজ ২ টো।
পদ্ধতি: সব সব্জি লম্বা করে কাটুন। মাশরুম ভাপিয়ে নিন। পেঁয়াজ চার ফালি করে কেটে নিন। লেটুস পাতা ধুয়ে নিন। দই ফেটিয়ে ক্রিমের মতো করুন। এবার একটা বেকিং ডিশ সামান্য গ্রিজ করে নিন। তাতে সব সব্জি সাজিয়ে নিন। নুন, মরিচ, আদা বাটা সব্জিতে মিশিয়ে নিন। এইভাবে সব্জিগুলো আধ ঘণ্টা রেখে দিন। তারপর ফ্যাটানো দই সব্জিতে মিশিয়ে নিন। এবার অল্প মাখন ছড়িয়ে দিন। সব্জি সাজানোর সময় খেয়াল রাখবেন যেন চেরি টম্যাটো সবার ওপর থাকে। এইভাবে আভেন ১৮০ ডিগ্রিতে সেট করে সবজিগুলো ২০ মিনিট বেক করুন। নামিয়ে নিয়ে লেটুস পাতা সাজিয়ে পরিবেশন করুন।
পানীয় কথা
শুধু খাবারেই নয়, পানীয়তেও রয়েছে ইমিউনিটি বাড়ানোর ক্ষমতা, জানালেন ইয়েলো স্ট্র রেস্তরাঁর প্রধান শেফ। তাঁর কথায়, ফল সব সময়ই শরীরের পক্ষে উপকারী। তাই নানারকম ফল যদি রস হিসেবে খাওয়া যায় তাহলে তা শরীরের পক্ষে ভালো। তিনি দুটো ফল সমৃদ্ধ জুসের রেসিপি জানালেন পাঠকদের।
রিজুভিনেটর স্ট্র
উপকরণ: আনারস ৩০০ গ্রাম, আপেল ১ টা, লেবু ১ টা, বিট নুন স্বাদ মতো, গোলমরিচ গুঁড়ো স্বাদ মতো, বরফের টুকরো কয়েকটা।
পদ্ধতি: আপেল, আনারস টুকরো করে কেটে নিন। এবার তা একে একে জুসারে ভরে রস করে নিন। গ্লাসে ৪-৫ টা বরফের টুকরো ফেলে দিন। রসগুলো একে একে ঢালুন। ওপর থেকে লেবুর রস ছড়িয়ে দিন। তারপর বিট নুন ও মরিচগুঁড়ো দিয়ে নেড়ে পরিবেশন করুন।
স্কিন গ্লো স্ট্র
উপকরণ: গাজর ৫০০ গ্রাম, আপেল ১টা, বিট ১টা, আদা কুচি ১ ইঞ্চি, লেবু ১টা, বিট নুন ও মরিচ গুঁড়ো স্বাদ অনুযায়ী। বরফের টুকরো ৩-৪টে।
পদ্ধতি: গাজর, আপেল এবং বিট ছোট টুকরো করে কেটে নিন। এবার এগুলো একটা জুসারে দিন। তার সঙ্গে আদা দিয়ে দিন। সব একসঙ্গে জুস বানিয়ে নিন। এবার গ্লাসে বরফ দিয়ে তার ওপর জুস ঢেলে দিন। নুন ও মরিচ দিয়ে নেড়ে নিন। ওপর থেকে লেবুর রস ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।