পারিবারিক সম্পত্তি সংক্রান্ত আইনি কর্মে ব্যস্ততা। ব্যবসা সম্প্রসারণে অতিরিক্ত অর্থ বিনিয়োগের পরিকল্পনা। ... বিশদ
পরিস্থিতির প্রভাব শুধু বাংলাদেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। নিকটতম প্রতিবেশী ভারত তো বটেই আরও বিভিন্ন দেশ এই ঘটনায় বিচলিত। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে খোদ রাষ্ট্রসংঘ। বিশেষ করে ছাত্রদের উপর হামলার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশসহ হাসিনা সরকারকে সতর্ক করেছে রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার বিভাগ। তাদের দাবি, ছাত্রদের পূর্ণ নিরাপত্তার ব্যবস্থা সরকারকে করতে হবে এবং দোষীদের চিহ্নিত করে দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে বর্তমান পরিস্থিতি। অন্যদিকে, ভারত উদ্বিগ্ন একাধিক কারণে। তার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হল অনুপ্রবেশ বৃদ্ধির আশঙ্কা। বৈদেশিক বাণিজ্য এবং শিক্ষা ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে পারস্পরিক আদান-প্রদানে সংকট সৃষ্টি নিয়েও চিন্তিত ভারত। সরকারি চাকরিতে ব্যাপক ও অন্যায্য হারে সংরক্ষণ চালু রাখার ইস্যুতেই সাম্প্রতিক অশান্তির সূত্রপাত। ১৯৭১-এ স্বাধীন বাংলাদেশ তৈরি হওয়ার পর থেকে সেখানে একাধিক ক্ষেত্রে নানা ধাপে সংরক্ষণ চালু হয়। তার মধ্যে সবচেয়ে বিতর্কিত হল মুক্তিযোদ্ধা এবং তাঁদের সন্তানদের জন্য পৃথক সংরক্ষণ ব্যবস্থা। ২০১১ সালে ওইসঙ্গে আরও যোগ হয় মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনিদের জন্যও সংরক্ষণ। সব মিলিয়ে মেধার ভিত্তিতে চাকরির সুযোগ ক্রমে সংকুচিত হতে থাকে বলে অভিযোগ। বিষয়টি শীর্ষ আদালতে বিচারাধীন। সরকারও আশ্বস্ত করেছে যে, আন্দোলনকারীদের দাবি তারাও আদালতের কাছে পেশ করবে। কিন্তু সেই রায় বেরনোর আগেই আন্দোলন ব্যাপক হিংসাত্মক হয়ে উঠেছে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ, যা সাম্প্রতিক অতীতে বাংলাদেশ ‘ফেস’ করেনি।
বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে গণতান্ত্রিক দুনিয়া নিশ্চয় উদ্বিগ্ন। তার মধ্যে ভারতের চিন্তা সবচেয়ে বেশি। কারণ বাংলাদেশ হল আমাদের দীর্ঘদিনের ‘বন্ধু’ দেশ। তাদের স্বাধীনতার সঙ্গে নাড়ির সম্পর্ক। ১৯৪৭-এ ভারতভাগের মাধ্যমে যে পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টি হয়, তার পূর্বাংশকে ‘পূর্ব পাকিস্তান’ বলা হতো। মূলত বাংলাভাষী অধ্যুষিত এই অঞ্চলে পশ্চিম পাকিস্তানের নিপীড়ন মানবাধিকার লংঘনের সমস্ত সীমা অতিক্রম করে গিয়েছিল। পূর্ববঙ্গ জুড়ে বিস্তৃত হয়েছিল পাক সেনাশাহির হাত থেকে মুক্তির মরিয়া আন্দোলন। একটি সুস্থ শান্তিকামী গণতান্ত্রিক প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পক্ষে এই অন্যায় মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না। মানবিকতার দাবি থেকে ওই আন্দোলনকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছিল ভারত এবং একসময় হয়ে উঠেছিল আন্তরিক সহযোগী। এজন্য ভারতকে অনেক ক্ষতি এবং ত্যাগও স্বীকার করতে হয়। খুব দ্রুত সৃষ্টি হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশ। ভারত-বাংলাদেশ হয়ে ওঠে একে অপরের সহযোগী—শিল্প-বাণিজ্য, শিক্ষা-সংস্কৃতিসহ নানা ক্ষেত্রে। তাতে দুই প্রতিবেশীই বিশেষভাবে উপকৃত হচ্ছে। বলা বাহুল্য, হাসিনা জমানায় এই সহযোগিতার নীতি অনেক বেড়েছে। এই ‘পরাজয়’ পাকিস্তানের শাসকদের পক্ষে মেনে নেওয়া কঠিন। তাই বাংলাদেশে শান্তি সুস্থিতি এবং ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রীর সম্পর্ক বিনষ্ট করে দিতে তারা সচেষ্ট। নানা অছিলায় তারা যুক্ত হয়, ছায়ার মতোই। তাই অনুমান করা কঠিন নয় এই ঘটনার পিছনে ঠিক কারা। বাংলাদেশে চাকরিতে সংরক্ষণ নীতি কী হবে এবং কোন সরকার সেখানে বহাল থাকবে, সেটা একান্তভাবেই সেদেশের জনগণের এবং স্বাধীন সার্বভৌম সিদ্ধান্ত। সেখানে ভারত বা অন্য দেশের পছন্দ-অপছন্দ কোনও বিষয় নয়। শান্তিকামী গণতান্ত্রিক ভারত সবসময়ই তার প্রতিবেশীদের সার্বিক সুস্থতা চায়। কারণ প্রতিবেশীর অসুস্থতা আপনার সুস্থতারও অন্তরায়। প্রতিটি ভারতবাসী চায়, বাংলাদেশ তার এই দুর্দিন অতিদ্রুত কাটিয়ে উঠবে এবং আমাদের বন্ধুতার ঐতিহাসিক সম্পর্কটি নিবিড় হবে আরও, পাশাপাশি চলবে দুই দেশেরই স্বাভাবিক শ্রীবৃদ্ধির সাধনা।