পারিবারিক সম্পত্তি সংক্রান্ত আইনি কর্মে ব্যস্ততা। ব্যবসা সম্প্রসারণে অতিরিক্ত অর্থ বিনিয়োগের পরিকল্পনা। ... বিশদ
মোদি সরকার লাগাতার প্রচার চালিয়ে এসেছে, রেলযাত্রীর নিরাপত্তা এবং স্বাচ্ছন্দ্যই তাদের অগ্রাধিকার। কিন্তু বাস্তবে সবটাই যে বহ্বারম্ভে লঘুক্রিয়া মাত্র, নির্মলজোতের ঘটনায় তৈরি সিআরএস রিপোর্ট সেটাই পরিষ্কার করল। তদন্তে প্রকাশ, মালগাড়ির চালক ওই অংশে নির্ধারিত গতিসীমার চেয়ে বেশি স্পিডে ট্রেন চালিয়েছিলেন ঠিকই কিন্তু তার নেপথ্যে ছিল স্টেশন মাস্টারের লিখিত অনুমতি। তাতে নির্ধারিত গতিসীমার উল্লেখই ছিল না! স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার অবর্তমানে টিডি-৯১২ ফর্ম দেওয়ার কথা, পরিবর্তে এক্ষেত্রে চালককে ধরানো হয় টিএ-৯১২। প্রথমোক্ত ফর্ম পেলে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৫ কিমি বেগে ট্রেন চালাবার সতর্ক বার্তা চালক পেতে পারতেন। সেই সুযোগ পাননি বলেই তিনি ৪০ কিমি বেগে ট্রেন ছুটিয়েছিলেন। পরে ইমার্জেন্সি ব্রেক কষেও শেষরক্ষা হয়নি। রিপোর্টে রয়েছে আরও চাঞ্চল্যকর একটি তথ্য, শুধু কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস কিংবা মালগাড়িই নয়, ওই একই লাইনে তখন আরও পাঁচটি ট্রেন দাঁড়িয়েছিল। একমাত্র কাঞ্চনজঙ্ঘার চালকই এগচ্ছিলেন নির্ধারিত গতিতে। এই প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট স্টেশন মাস্টারের কর্তব্যে গাফিলতিরও উল্লেখ রয়েছে।
স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল ব্যবস্থা অকেজো হয়ে গেলে কী করণীয়, তা ঠিকমতো জানেনই না রেলকর্মীরা, মনে করেন সিআরএস। তাঁর রিপোর্ট অনুসারে, এক্ষেত্রে উপযুক্ত কাউন্সেলিংয়ের অভাবটাও প্রকট হয়েছে। এজন্য তৈরি হচ্ছে ভুল ব্যাখ্যা (মিসইন্টারপ্রিটেশন) এবং ভুল বোঝাবুঝির (মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং) অবকাশ। দুর্ঘটনার সময় স্টেশনের সিগন্যালিং কন্ট্রোল অফিসে মাত্র একজন টেকনিশিয়ান ক্যাটিগরির কর্মী ছিলেন। এটি রেল আইনের পরিপন্থী। অর্থাৎ সার্বিক পরিকাঠামোই এখন গভীর প্রশ্নের মুখে। এছাড়া রাঙাপানি-চটেরহাট স্টেশনের মাঝে স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল খারাপও ছিল সেদিন। এজন্য দায়ী করা হয়েছে অবশ্য বজ্রপাতকে। সব মিলিয়ে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে সিআরএসের উল্লেখ, ‘এরর ইন ট্রেন ওয়ার্কিং’। এরপর রেলওয়ে সিস্টেমের ব্যর্থতা কবুলে কিছুমাত্র বাকি থাকে কি? একে একটি ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনামাত্র’ বলে দায় এড়ানোর কোনও চেষ্টা আর যেন না-হয়। তাহলে সেটি হবে আরও বড় ভুল। কর্তৃপক্ষের সেই ভুলেরই চড়া মাশুল গুনে যেতে হবে আগামী দিনের রেলযাত্রীদেরকেও। সিআরএসের পরামর্শ মতো রেল চলাচলের যাবতীয় ত্রুটি অবিলম্বে সংশোধন করে ফেলতে হবে। রেল পরিবহণ ভারতের গর্ব এবং ঐক্য ও আর্থিক সমৃদ্ধির প্রতীক। ইংরেজ শাসক সাম্রাজ্য বিস্তারের ফাঁকেও ভারতের বুকে যতগুলি ভালো কাজ করেছিল, তার শীর্ষেই রাখতে হবে রেলকে। স্বাধীনতা-উত্তর সাতাত্তর বছরে ভারতীয় রেলকে ‘বিশ্বসেরা’ করে তোলার অনেক সুযোগ ও সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু তার সদ্ব্যবহার আমরা করতে পারিনি সস্তার রাজনীতি মূলধন হওয়ায় আর সৎ সাহসের অভাবে। এখনও কি সেই নিন্দিত পথেরই পথিক থাকব আমরা?