পারিবারিক সম্পত্তি সংক্রান্ত আইনি কর্মে ব্যস্ততা। ব্যবসা সম্প্রসারণে অতিরিক্ত অর্থ বিনিয়োগের পরিকল্পনা। ... বিশদ
মোদির রাজত্বে এই ‘উন্নততর’ অসাম্যের ছবিটা ঠিক কেমন? আর্থিক অসাম্য নিয়ে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ সংস্থা ‘অক্সফ্যাম’ জানিয়েছে ২০১২ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ভারতে তৈরি সম্পদের ৪০ শতাংশ কুক্ষিগত হয়েছে মাত্র এক শতাংশ ধনীতম মানুষের হাতে, দরিদ্রতম মানুষের ৫০ শতাংশের হাতে রয়েছে মাত্র ৩ শতাংশ সম্পদ! আবার প্যারিসের সংস্থা ‘ওয়ার্ল্ড ইন ইকোয়ালিটি ল্যাব’-এর সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ভারতে এখন ব্রিটিশ রাজত্বের সময় থেকেও বেশি অসাম্য। ২০২২-২৩- এ দেশের মোট আয়ের ২২ শতাংশেরও বেশি রয়েছে ওই এক শতাংশ ধনকুবেরদের হাতে। নীচের সারির ৫০ শতাংশের মিলিত আয় দেশের মোট আয়ের মাত্র ১৫ শতাংশ। এই ৫০ শতাংশের গড় আয় বছরে ৭১ হাজার টাকা। আর সবচেয়ে ধনী ১০ হাজার ব্যক্তির গড় আয় বছরে ৪৮ কোটি টাকা। মানে, ২ হাজার গুণেরও বেশি। মোদির শাসনে লিঙ্গ বৈষম্যের ছবিটা আরও ভয়াবহ। যেমন, সাক্ষরতায় পুরুষ-নারীর ফারাকের নিরিখে ভারতের স্থান বিশ্বে ১১২তম। কলেজ শিক্ষার সুযোগের ক্ষেত্রে ভারত রয়েছে ১০৫তম স্থানে। লোকসভায় গতবার মহিলা সাংসদ ছিলেন ১৭ শতাংশ। এবার কমে হয়েছে ১৩.৬ শতাংশ। দেশের স্থল-নৌ-বিমানবাহিনীতে নারীশক্তির অনুপাত যথাক্রমে ৩.৮ শতাংশ, ৬ শতাংশ এবং ১৪ শতাংশ। সুপ্রিম কোর্টে মহিলা বিচারপতি রয়েছেন ৯.০৯ শতাংশ, হাইকোর্টগুলিতে ১৩.৫ শতাংশ। সন্দেহ নেই, অসাম্যের এমন সার্বিক ‘উন্নততর’ ছবি দেখিয়ে নজির গড়েছেন টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী। এ লজ্জা ঢাকার জায়গা নেই।
মোদি জমানার গত দশ বছরের ইতিহাস বলছে, যে কোনও রাজ্যের নির্বাচনের প্রচারেই ‘ডাবল ইঞ্জিন’ সরকারের রব তোলে গেরুয়াবাহিনী। বোঝাতে চায়, কেন্দ্র ও রাজ্যে একই দলের সরকার থাকলে সাফল্যের ঘোড়া ছুটবে। অতএব ভোট দিন পদ্মে। সেই প্রচার যে কত অসার, তা ফাঁস হয়ে গিয়েছে নীতি আয়োগের রিপোর্টেই। দেখা যাচ্ছে, সার্বিক উন্নয়নের মাপকাঠিতে জাতীয় গড়ের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, অসম, ছত্তিশগড়, অরুণাচলের মতো ‘ডাবল ইঞ্জিনের’ রাজ্য। আবার ক্ষুধার্তহীন অবস্থানে (জিরো হাঙ্গার) জাতীয় গড়ের চেয়ে পিছিয়ে মোদি-অমিত শাহদের নিজের রাজ্য গুজরাত। সুস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে জাতীয় গড় পয়েন্ট ৭৭-এর চেয়ে পিছিয়ে উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, অসমের মতো বিজেপি শাসিত রাজ্য। সার্বিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে রাজ্যগুলির পারফরম্যান্সের বিচারে পিছিয়ে রয়েছে ‘ডাবল ইঞ্জিনের’ একাধিক রাজ্য। তাহলে ‘ডাবল ইঞ্জিনে’র সুফল কোথায়? মোদি সরকারের এই ব্যর্থতার ছবি কোনও বিরোধী দল তুলে ধরেনি, ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের ‘চক্রান্ত’ও নয়। অসাম্য নিয়ে উদ্বেগের কথা তুলে ধরেছে খোদ সরকারি রিপোর্ট। তাই এর থেকে শিক্ষা নিয়ে অসাম্য দূর করে প্রকৃত সার্বিক উন্নয়নে যদি নজর দেয় মোদির তৃতীয় সরকার তাহলে দেশ ও দশের মঙ্গল।