পারিবারিক সম্পত্তি সংক্রান্ত আইনি কর্মে ব্যস্ততা। ব্যবসা সম্প্রসারণে অতিরিক্ত অর্থ বিনিয়োগের পরিকল্পনা। ... বিশদ
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সাল থেকেই সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ ব্যবস্থা চালু রয়েছে বাংলাদেশে। তারপরে বিভিন্ন সময়ে সংস্কারের পর ২০১৮ সাল পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে মোট সংরক্ষণের হার দাঁড়ায় ৫৬ শতাংশ। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান ও তাঁদের নাতিনাতনিদের জন্য ৩০ শতাংশ, মহিলাদের জন্য ১০ শতাংশ, জেলা কোটা ১০ শতাংশ, নৃজাতি গোষ্ঠীর জন্য ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ আসন সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ বাকি ৪৪ শতাংশ অসংরক্ষিত। এই কোটা ব্যবস্থা সংস্কার করে অসংরক্ষিত পদ বাড়ানোর দাবিতে ২০১৮ সালে একইভাবে পথে নেমে বিক্ষোভ দেখায় শিক্ষার্থীরা। সেই আন্দোলনের চাপে নৃজাতি ও প্রতিবন্ধী কোটা রেখে বাকি সব সংরক্ষণ বাতিল ঘোষণা করে হাসিনা সরকার। এর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা করে মূলত মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের কিন্তু মানুষ। গত ৫ জুন হাইকোর্ট হাসিনা সরকারের সিদ্ধান্তকে অবৈধ ঘোষণা করায় আবার ফিরে আসে ৫৬ শতাংশ কোটা ব্যবস্থা। কিন্তু হাইকোর্টের এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে হাসিনা সরকার। সর্বোচ্চ আদালতে এই মামলার শুনানি শুরু হওয়ার কথা আজ, রবিবার। কিন্তু তার মধ্যেই ফের কোটা সংস্কার ইস্যুতে দুপক্ষের সংঘর্ষে রক্ত ঝরছে বাংলাদেশে, যা অনভিপ্রেত, দুঃখেরও।
এই পরিপ্রেক্ষিতে যাবতীয় সংঘর্ষ ও অচলাবস্থাকে দূরে সরিয়ে বাংলাদেশে দ্রুত শান্তি ও স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসাটা জরুরি। কারণ সংঘর্ষের ঘটনার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সে দেশের সাধারণ মানুষ, প্রতিদিনের উপার্জনে যাঁদের অধিকাংশের দিন গুজরান হয়। তাছাড়া সংঘর্ষ, রক্তপাত কোনও সমাধানের পথ হতে পারে না। কোটা সংস্কার করে যোগ্যদের জন্য অসংরক্ষিত পদের সংখ্যা বাড়ানোর যে দাবি তুলেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা, তার তাৎপর্য গভীর। কোটা প্রসঙ্গে মতপার্থক্য থাকতেই পারে। কিন্তু তা হিংসাত্মক হয়ে উঠলে দুর্দশা বাড়ে, জনকল্যাণও হয় না। অহিংস পথে আন্দোলন এবং অহিংস পথে তার মোকাবিলা হলে সকলের পক্ষেই তা মঙ্গলজনক। চাই ধৈর্য, আত্মসংযম। আলোচনাই হতে পারে সমাধানের পথ। অতীতে হাসিনা সরকার অনেক কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে। আশা করা যায় এবারও তা করবে। তাই আন্দোলনকারীদের এই দাবির বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের উপায় বের করা দরকার। ক্রোধের বিস্ফোরণ কারও পক্ষেই মঙ্গলজনক নয়। সরকার প্রয়োজন মনে করলে কোটা সংস্কারের নতুন প্রস্তাব সর্বোচ্চ আদালতেও হয়তো পেশ করতে পারে। তবে সুপ্রিম কোর্ট শেষপর্যন্ত কী রায় দেয় তার জন্য যাবতীয় হিংসার পথ পরিহার করে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করাই শ্রেয়। যা বাংলাদেশকে বর্তমান পরিস্থিতি থেকে মুক্ত করার শ্রেষ্ঠ পথ। যে কোনও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের কাছে সেটাই কাম্য। বাংলাদেশ আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসুক, পথ দেখাক মুজিবুর রহমানের দেশ।