পারিবারিক সম্পত্তি সংক্রান্ত আইনি কর্মে ব্যস্ততা। ব্যবসা সম্প্রসারণে অতিরিক্ত অর্থ বিনিয়োগের পরিকল্পনা। ... বিশদ
সব মিলিয়ে নরেন্দ্র মোদির যে ‘অথরিটি’ তৈরি হয়েছিল তার জোরে নয়া সংসদ ভবনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানকে প্রকারান্তরে তাঁরই ‘রাজ্যাভিষেকের’ চেহারা দিতে পেরেছিলেন তিনি। সনাতন ধর্মের তাবড় নেতাদের অগ্রাহ্য করে অযোধ্যায় রামমন্দির উদ্বোধন অনুষ্ঠানেও নিজেকে কেন্দ্রীয় চরিত্র করে তুলেছিলেন মোদি, ঔজ্জ্বল্যে ছাপিয়ে গিয়েছিলেন হয়তো স্বয়ং যুগপুরুষোত্তম শ্রীরামচন্দ্রকেই! নিজেকে এমন ‘অ্যাগ্রেসিভ সেলসের’ স্তরে নিয়ে গিয়েছিলেন যে, এবারের পুরো লড়াইটাই হয়েছে ‘মোদি বনাম বাকিরা’। ‘মোদির গ্যারান্টি’র কোলাহলে হারিয়ে গিয়েছিল ‘বিজেপি’ নামক দলটি, যে কিনা ‘পার্টি উইথ আ ডিফারেন্স’ এবং ‘বিশ্বের বৃহত্তম রাজনৈতিক শক্তি’ বলে জাহির করে। ছবিটা অচানক বদলে গেল ৪ জুন। বিজেপির একার পক্ষে সরকার গঠনের সমস্ত সম্ভাবনা ততক্ষণে নাকচ করে দিয়েছে দেশ। মোদিবাবুদের সৌজন্যে ভারতীয় রাজনীতি পাল্টিবাজিতে এমন পটু হয়ে গিয়েছে যে, এনডিএর পক্ষেও সরকার গঠন আদৌ সম্ভব হবে কি না শুরু হয়ে গিয়েছিল সেই জল্পনাও। অবশ্য কংগ্রেস এবং বিরোধীদের মহাজোট ‘ইন্ডিয়া’র স্বাস্থ্যকর রাজনীতির বদান্যতায় সেই অস্থিরতা দেশ আপাতত কাটিয়ে উঠেছে। সরকার তৈরিতে হ্যাটট্রিক করেছেন নরেন্দ্র মোদি।
পণ্ডিত নেহরুকে ছুঁয়েছেন ঠিকই কিন্তু আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়নি প্রধানমন্ত্রীর। কারণ তাঁর হাতে রয়েছে সুদীর্ঘ গেরুয়া এজেন্ডা, সেটা এই সরকারের দ্বারা পূরণ হওয়া মোটেই সম্ভব নয়। বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যই যে-দেশের মূল ভিত্তি, একটি দুর্বল কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে সেই দেশে হিন্দুত্বের বিতর্কিত কিছু কর্মসূচির রূপায়ণ বাহুল্য বইকি। এই চ্যালেঞ্জ দিন দিন মোদির সামনে কত বড় হতে থাকবে তা তাঁর শপথগ্রহণের মাত্র তিনসপ্তাহ পরেই বুঝিয়ে দিয়েছেন চন্দ্রবাবু নাইডু। বৃহস্পতিবার হায়দরাবাদ থেকে দিল্লি উড়ে আসেন অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেই তাঁর রাজ্যের জন্য এক লক্ষাধিক কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজ দাবি করে বসেন টিডিপি সুপ্রিমো। পরদিন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের সঙ্গে এক বৈঠকে চন্দ্রবাবু এই বিষয়ে পেশ করেছেন তাঁর স্মারকলিপি। সোজা কথায়, চন্দ্রবাবু অন্ধ্রের জন্য দিল্লি থেকে ‘স্পেশাল প্যাকেজ’ আদায়ের প্ল্যান নিয়ে এগচ্ছেন। সুন্দর সংগত করে চলেছেন মোদি সরকারের আর এক দোস্ত বিহারের বিখ্যাত নীতীশ কুমার। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় কোনও একটি বা দুটি রাজ্যকে যে আলাদাভাবে এমন ‘ফেভার’ করা অসম্ভব, তা তাঁদের মতো দুই সিনিয়র মোস্ট নেতারও অজানা নয়। তবু মোদির অগ্নিপরীক্ষা নিতে সক্রিয় ১৬ এমপির নেতা চন্দ্রবাবু এবং ১২ এমপির জেডিইউ সুপ্রিমো নীতীশ। মাস কয়েকের মধ্যে রয়েছে মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা এবং ঝাড়খণ্ড বিধানসভার নির্বাচন। ওই গুরুত্বপূর্ণ ভোটের ফলাফলের উপরেই নির্ভর করবে এই সেয়ানে সেয়ানে কোলাকুলির ভবিষ্যৎ। অর্থাৎ গদিতে বসতে না বসতেই তার পায়া ধরে নাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা নিয়ে দশবছর যাবৎ রকমারি ‘বিভাজন’ উপহার দিয়ে গিয়েছেন মোদি। আর এবারের দুর্বল সরকার পদে পদে হবে ব্ল্যাক মেইলিংয়ের শিকার। অতএব ফের চৌপাট হবে ‘উন্নয়ন’। সব মিলিয়ে ‘মোদিযুগ’ উন্নয়নের বিপরীতার্থক শব্দ হিসেবে রয়ে যাবে ইতিহাসের পাতায়।