পারিবারিক সম্পত্তি সংক্রান্ত আইনি কর্মে ব্যস্ততা। ব্যবসা সম্প্রসারণে অতিরিক্ত অর্থ বিনিয়োগের পরিকল্পনা। ... বিশদ
বৃহস্পতিবার ঝাড়খণ্ডের গুমলায় এক গ্রাম বৈঠকে মোদির নাম না করে সঙ্ঘপ্রধান যা বলেছেন, তা প্রধানমন্ত্রীর স্ব-আরোপিত ভাবমূর্তিকে ধুয়েমুছে সাফ করে দিয়েছে। ভাগবতের কথায়, ‘কয়েকজন আছেন, যাঁরা মানুষ হলেও তাঁদের মধ্যে মানবিক গুণের অভাব রয়েছে। সেটা নিয়ে তাঁদের চিন্তাভাবনা করা উচিত।’ তারপর বলেছেন, ‘উন্নয়ন (বিকাশ) কখনও শেষ হয় না। কিন্তু কেউ কেউ তার আগেই নিজেকে অলৌকিক শক্তিসম্পন্ন সুপারম্যান ভাবতে শুরু করেন। তারপর সেখানেই না থেমে দেবতা হতে চান, তারপর ভগবান। কিন্তু ভগবান বলেন, তিনি স্বয়ং বিশ্বরূপ। তাঁর চেয়েও বড় কিছু আছে কিনা সেই বিষয়ে কেউ কিছু জানেন না।’ এটা প্রথম নয়। লোকসভার ফলাফল ঘোষণার পর মোদির লাগামছাড়া আত্মপ্রচারের (মোদি গ্যারান্টি ইত্যাদি) সমালোচনাও শোনা গিয়েছে ভাগবতের মুখে। তাঁর পরামর্শ ছিল, বিরোধী নয়, প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখতে হবে বিরোধীদের। বিরোধীরা অন্য ভাবনা তুলে ধরেন, তাই রাজনীতিতে বিরোধীদের অসীম গুরুত্ব রয়েছে। যাঁর উদ্দেশে সঙ্ঘপ্রধানের এই সুপরামর্শ ছিল, সেই প্রধানমন্ত্রী বিগত সরকারের শেষের দিকে লোকসভায় প্রায় ১৫০জন বিরোধী সাংসদকে সাসপেন্ড করে কোনও আলোচনা ছাড়াই একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ বিল পাশ করিয়ে নিয়েছেন। বিরোধীদের উদ্দেশে বারবার কুকথাও বলতে শোনা গিয়েছে প্রধানমন্ত্রীকে। আরএসএস যে এসব ভালোভাবে নেয়নি ভাগবতের কথাতেই তা পরিষ্কার। এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা অশান্ত মণিপুর নিয়েও সবর হয়েছিলেন ভাগবত।
আসলে একটা লোকসভা ভোটের ফলাফলই যেন সঙ্ঘ এবং বিজেপি’র যাবতীয় হিসাবনিকাশ উল্টে দিয়েছে। ভোটের শেষে গত দেড় মাসের ঘটনা পরম্পরা বুঝিয়ে দিচ্ছে, বিজেপি’র কাছে ক্ষমতাই একমাত্র ও শেষকথা। গেরুয়াবাহিনী একা সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে সরকার গড়তে পারেনি বলে সেই একচ্ছত্র ক্ষমতায় ফাটল ধরেছে। তার ফলশ্রুতিতে রাজ্যে রাজ্যে বিজেপি’র সংগঠন ও ডাবল ইঞ্জিন সরকারের অন্দরে যেন বিস্ফোরণের পরিস্থিতি। বঙ্গে বিজেপি সংগঠনে এখন ‘যত মত, যত পথ’। ক্ষমতায় না থেকেও পদ্মের মধুর মোহে গোষ্ঠী লড়াই তুঙ্গে উঠেছে। এ যেন পিছন থেকে ছুরি মারার প্রতিযোগিতা চলছে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা উত্তরপ্রদেশে। সে রাজ্যে গেরুয়া হিন্দুদের ‘পোস্টার বয়’ যোগী আদিত্যনাথের সঙ্গে সরাসরি লড়াই বেঁধেছে দিল্লির নেতৃত্বের। এক্ষেত্রে যোগীর ‘ডেপুটি-ই’ দিল্লির তুরুপের তাস হিসেবে আসরে অবতীর্ণ। গোবলয়ের এই রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী বদল হলেও আশ্চর্যের কিছু নেই! উত্তরপ্রদেশের মতোই রাজস্থান, মহারাষ্ট্র, গোয়া, অরুণাচল—সর্বত্র দ্বন্দ্ব, অন্তর্ঘাত, বিক্ষোভের আগুন ভাইরাসের মতো ছড়িয়েছে। ইতিমধ্যে লোকসভার পর বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভার উপ নির্বাচনেও খারাপ ফল হয়েছে বিজেপি’র। চলতি বছরে যে চার রাজ্যে বিধানসভার ভোট হওয়ার কথা, সেখানেও হাঁড়ির হাল হতে পারে বলে আশঙ্কা। এই পরিস্থিতিতে মোহন ভাগবতের উপর্যুপরি সমালোচনা যে আগুনে ঘি ছড়িয়েছে। তবে প্রশ্ন উঠেছে, সঙ্ঘপ্রধান এতদিন কি ঘুমিয়ে ছিলেন? বড় দেরি হয়ে গেল না তো!