পারিবারিক সম্পত্তি সংক্রান্ত আইনি কর্মে ব্যস্ততা। ব্যবসা সম্প্রসারণে অতিরিক্ত অর্থ বিনিয়োগের পরিকল্পনা। ... বিশদ
তালিকার সামনের সারিতে থাকা দেশগুলি আগামী শতাধিক বছরের মধ্যে যদিও-বা এই অসাম্য দূর করার স্বপ্ন দেখাতে পারে, ৩৩ কোটি দেবতার দেশ ভারত এই সময়কালে আরও পিছিয়ে পড়বে কি না সেই সঙ্গত প্রশ্ন উঠছে। কারণ, শাসকের পরিকল্পনার অভাব। এটা ঠিক, ভারতের রাষ্ট্রপ্রধান একজন মহিলা। কিন্তু সংসদ বা প্রশাসনের ভিতরের দিকে তাকালেই মহিলাদের ক্ষমতায়ন নিয়ে গেরুয়া শাসকগোষ্ঠীর ‘মায়াকান্না’টা ধরা পড়ে যায়। যেমন, বিগত সরকারে মাত্র ১০ জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ছিলেন মহিলা। ৫৪৩ আসনের লোকসভায় গতবার মহিলা সাংসদের সংখ্যা ছিল ৭৮ (১৭ শতাংশ)। এবার মহিলা সাংসদের সংখ্যা কমে হয়েছে ৭৪ (১৩.৬ শতাংশ)। ধরা যাক দেশের স্থল, নৌ ও বিমানবাহিনীর কথা। এখানে নারীশক্তির অনুপাত যথাক্রমে ৩.৮ শতাংশ, ৬ শতাংশ, ১৪ শতাংশ। আবার, সুপ্রিম কোর্টে মহিলা বিচারপতি রয়েছেন ৯.০৯ শতাংশ, হাইকোর্টগুলিতে ১৩.৫ শতাংশ। ৭৭ বছরের স্বাধীন দেশে মেয়েদের ক্ষমতায়ন কতটা হয়েছে তার অজস্র উদাহরণ রয়েছে। ছবিটা করুণ। যেমন, সাক্ষরতায় পুরুষ-নারী ফারাকের নিরিখে ভারতের স্থান বিশ্বে ১১২তম। কলেজ শিক্ষায় সুযোগের তফাতের ক্ষেত্রে ভারতের স্থান ১০৫। সাক্ষরতার হারে পুরুষের চেয়ে মেয়েরা পিছিয়ে রয়েছে ১৭.২ শতাংশ। শিক্ষার মতো অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে লিঙ্গ সমতার প্রশ্নে ভারত রয়েছে বিশ্ব তালিকার তলানিতে (৩৮.৮ শতাংশ)। অসংগঠিত ক্ষেত্রে একই শ্রম দিয়েও পুরুষের অর্ধেক মজুরিও পান না মহিলারা। এদেশে ১৫-৪৯ বছর বয়সের প্রায় ২০ শতাংশ মেয়ের ওজন প্রয়োজনের চেয়ে কম, ৫৩ শতাংশ মেয়ে ভোগেন রক্তাল্পতায়। এ কার লজ্জা?
এসব তথ্য পরিসংখ্যান রিপোর্ট প্রায় সকলেরই জানা। ট্রাজেডি হল, যাঁরা প্রশাসনের মাথায় বসে আছেন তাঁদের অধীনস্থ কর্তারাই সমীক্ষা চালিয়ে এইসব তথ্য তৈরি করে বৈষম্যের ছবিটা সামনে আনেন। ঘটনা হল, ক্ষমতাসীন শাসক এইসব অন্যায় অবিচার অস্বীকার করতে যতটা তৎপর থাকেন, বৈষম্য দূর করতে তার সিকিভাগ তৎপরতাও দেখাননি, তবে ভোট এলে এঁরাই ‘মেয়েদের কথা’ ভেবে কিছু অনুদান বিলির কথা ঘোষণা করেন। নারীর ক্ষমতায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট চান। আবার নারী স্বাধীনতা, স্বাধিকার, সম্মান, নিরাপত্তার মতো শব্দগুলো স্বাধীনতা দিবস কিংবা সাধারণতন্ত্র দিবসের সকালে প্রবল আবেগে, কাঁপাকাঁপা গলায় জনগণের উদ্দেশে ভাসিয়ে দেন! এর উল্টোদিকে, সারা বছর ধরে বাল্য বিবাহ, অকাল মাতৃত্ব, ধর্ষণ, গার্হস্থ্য হিংসা, কর্মক্ষেত্রে শ্লীলতাহানির মতো ঘটনার ঘনঘটায় সকাল হয় দেশে। অভিযোগের আঙুল ওঠে অনেকসময় সেই ধারক-বাহকদের বিরুদ্ধেই। আসলে রাজনীতির ঘরেই নারীর প্রতি বৈষম্যের বাস। তাই রাজনীতির পথেই তা দূর করতে হবে। এর জন্য দরকার সদিচ্ছা, ঢক্কানিনাদ নয়। না হলে অর্ধেক আকাশ অনন্তকাল অন্ধকারেই ঢাকা থাকবে।