পারিবারিক সম্পত্তি সংক্রান্ত আইনি কর্মে ব্যস্ততা। ব্যবসা সম্প্রসারণে অতিরিক্ত অর্থ বিনিয়োগের পরিকল্পনা। ... বিশদ
পশ্চিমবঙ্গের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির শীর্ষপদ পূরণের জটিলতার নেপথ্যে নবান্ন ও রাজভবনের দ্বৈরথ। নবান্নের অভিযোগ, রাজ্যের উচ্চ শিক্ষাব্যবস্থায় রাজ্যপালের অনাবশ্যক হস্তক্ষেপের ফলে রাজ্যের স্বশাসন ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। ‘রাজ্যে কেন্দ্রের এজেন্টের’ এই ভূমিকাকে শিক্ষানুরাগী মহলেরও অনেকে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার পরিপন্থী বলে নিন্দা করেছেন। রাজ্যবাসীর এই উষ্মার মনোভাব রাজভবনের গোচরে এনেছেন তাঁরা, প্রতিবাদ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে দিল্লির দরবারেও। তবু ‘দাদাগিরি’ ছেড়ে বাস্তবের মাটিতে পা রাখেননি একগুঁয়ে রাজ্যপাল। মোদি সরকারও তাঁকে তেমন পরামর্শ কখনও দিয়েছে বলে শোনা যায়নি। ফলে উপাচার্যের পদটি নিয়ে বাংলার বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়কে নানাবিধ সমস্যার মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়। বঙ্গদেশ ঐতিহাসিকভাবেই শিক্ষা-সংস্কৃতির জগতে অগ্রদূতের ভূমিকা পালন করে এসেছে। ব্রিটিশ ভারতে কলকাতাই ছিল তার কেন্দ্র। রাজভবন বা মোদি সরকারের অসহযোগিতার অবাঞ্ছিত আঘাত নেমে এসেছে তেমনই একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে। স্বভাবতই সুবিচারের আশায়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ ন্যায়ালয়ের কাছে পেশ করে।
গতবছরের ২১ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার প্রথম শুনানি হয়। প্রায় ১১ মাস পর শেষ পর্যন্ত সোমবার দেখা দিল আশার আলো। শীর্ষ আদালতই রাজ্যের উপাচার্য নিয়োগ প্রক্রিয়া সহজ করে দিয়েছে। বিচারের সর্বোচ্চ আসনের অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ নির্দেশ এই যে, আচার্য তথা রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসকে কোনও নামের তালিকা পাঠাবে না সার্চ কমিটি। এমনকী, রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীর কাছেও কোনও সুপারিশ তারা করবে না। উপাচার্য নিয়োগের জন্য প্রস্তাবিত নামের তালিকা সরাসরি যাবে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। তার মধ্যে থেকে যোগ্য প্রার্থীদের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই বেছে নেবেন। অতঃপর তালিকাটি যাবে রাজভবনে। মুখ্যমন্ত্রীর সুপারিশ মেনেই উপাচার্য নিয়োগে সিলমোহর দিতে হবে রাজ্যপাল তথা আচার্যকে। তার জন্য দু’সপ্তাহের সময়সীমাও বেঁধে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। আচার্যের সিলমোহর নিয়ে একসপ্তাহের মধ্যেই উপাচার্য নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করবে রাজ্য। তবে সার্চ কমিটির সুপারিশ করা কোনও নামে আপত্তি থাকলে মুখ্যমন্ত্রী বা আচার্যকে তা কারণসহ সাফ সাফ জানাতে হবে। সম্ভাব্য উপাচার্যের নাম নিয়ে আচার্য ও মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে মতানৈক্য উপস্থিত হলে বিষয়টি চলে যাবে সুপ্রিম কোর্টের এক্তিয়ারে এবং তারাই সমস্যার সমাধান করবে। শীর্ষ আদালতের নির্দেশে স্বভাবতই খুশি রাজ্য। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর প্রতিক্রিয়া, ‘আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি, মুখ্যমন্ত্রীকেই আচার্যের আসন দেওয়া হোক। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ বস্তুত সেই দাবিকেই বৈধতা দিয়েছে।’ অবাঞ্ছিত জেদাজেদি ছেড়ে অবিলম্বে বেরিয়ে আসা উচিত রাজভবনের। শীর্ষ আদালতের নির্দেশ মেনে উপাচার্য নিয়োগ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতেই হবে। ইতিমধ্যেই রাজ্যের উচ্চ শিক্ষাব্যবস্থার অনেক ক্ষতি হয়ে গিয়েছে এবং তা অপূরণীয়। এই ক্ষতি আর বাড়তে দেওয়া যায় না।