পারিবারিক সম্পত্তি সংক্রান্ত আইনি কর্মে ব্যস্ততা। ব্যবসা সম্প্রসারণে অতিরিক্ত অর্থ বিনিয়োগের পরিকল্পনা। ... বিশদ
মানুষের এই আকাঙ্ক্ষা ও সরল বিশ্বাসই হয়ে উঠেছে একালে রাজনীতির পুঁজি। রামচন্দ্রের উদাহরণ বাদ দিলেও উন্নত গণতন্ত্রেরও দাবি, রাজনীতির প্রথম ও শেষকথা হল মানুষ। মানুষকে সঙ্গে নিয়ে মানুষের জন্য মানুষের দ্বারা নির্বাচিত যে সরকার একটি দেশে তৈরি হয়, সেটাই গণতান্ত্রিক সরকার। ভারতের বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এমন একটি সরকার গঠনের জন্য শাসক দল হয়ে উঠতে গেলে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সমর্থন জোগাড় করা জরুরি। সমর্থন দেওয়ার আগে মানুষ তার অভিজ্ঞতা থেকে দলগুলিকে যাচাই করে। যে দল মানুষের ভালোর জন্য লড়াই এবং কাজ করেছে, যার হাতে দেশ সুরক্ষিত, তাকেই ক্ষমতায় বসাতে চায় জনগণ। স্বভাবতই ভোটের ময়দানে এই প্রশ্নে তীব্র প্রতিযোগিতা হয়। কিন্তু ভোটারদের প্রত্যাশা পূরণের তেমন রেকর্ড এবং ক্ষমতা নেই, এমন অনেক দলও লড়াইতে অবতীর্ণ হয়। তাদের মধ্যে কেউ কেউ ক্ষমতা দখলের জন্যও মরিয়া হয়ে ওঠে। কিন্তু সেইমতো মানুষের মন ভেজানো সম্ভব কীভাবে? ভারতের মতো বিপুল জনসংখ্যার দেশে সস্তায় বাজিমাত করার রাস্তা আবিষ্কার করেছে হিন্দুত্বের কারবারিরা। ধর্মপ্রাণ নরনারীর সামনে তারা রেখেছে রামরাজ্যের কনসেপ্টটাকে। বিজেপির দাবি, বহিরাগত রাজা-বাদশাদের কয়েকশো বছরের ‘অপশাসনে’ ভারতভূমি রামরাজ্যের সুখ হারিয়েছে। সেই হৃতগৌরবই ফেরাবে তারা।
অতএব লক্ষ্য এবং পুঁজির নাম অযোধ্যা। আমরা জানি, ধর্ম এবং জাতীয়তাবাদের নামে বিজেপি যে উগ্র রাজনীতি আমদানি করেছে তার প্রথম বলির নাম ‘বাবরি মসজিদ’। ওই স্থানটিকে ‘রামজন্মভূমি’ দাবি করে ওখানেই রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠাসহ অত্যাশ্চর্য মন্দির নির্মাণের সংকল্প ঘোষণা করে উগ্র হিন্দুত্বের কারবারিরা। সুদীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর অযোধ্যার বিতর্কিত ভূমিতে মন্দির গড়ার সুপ্রিম ছাড়পত্রও হাসিল করে তারা। একটি বিখ্যাত ইংরেজি দৈনিকের অন্তর্তদন্তে প্রকাশ, এই মওকায় ওই মন্দিরকে ঘিরে মারাত্মক আর্থিক দুর্নীতি হয়েছে। আর এই অভিযোগে কাঠগড়ায় মূলত নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকার, ‘রামরাজ্যের’ যোগী সরকার এবং বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। ২০১৯-এ মন্দির-রায়ের সময় থেকেই কয়েক হাজার একর জমি কিনে নিয়েছেন গেরুয়া ব্রিগেডের নেতা, মন্ত্রী, এমপি এবং শাসক-ঘনিষ্ঠ দাপুটে আমলারা। ২০১৯ থেকেই অযোধ্যার জমি বহিরাগতদের নিশানায়। তবু মন্দির লাগোয়া বিস্তীর্ণ এলাকার জমির সার্কল রেটের বদল হয়নি! হঠাৎ ‘অমূল্য’ হয়ে ওঠা ওইসব জমি বিশেষ গোত্রের ক্রেতারা স্বনামে ও বেনামে হাতিয়েছেন নামমাত্র দামে। রাম ঠকা ঠকেছে কৃষক ও আম জনতা। আর এই বিতর্কে ঘৃতাহুতি দিয়েছেন জমি রেজিস্ট্রেশন বিভাগের আইজি, ‘অযোধ্যা ও লাগোয়া এলাকায় জমির সার্কল রেট বৃদ্ধির প্রস্তাব সরকারকে বার বার দিলেও তা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।’ প্রধানমন্ত্রী মনে করেন, ‘না খায়ুঙ্গা, না খানে দুঙ্গা’ এটাই তাঁর ইউএসপি। কিন্তু এই তার নমুনা? যদিও অযোধ্যাই প্রথম কেলেঙ্কারি নয়, আরও নানা ক্ষেত্রে রাজ করে চলেছেন মোদির প্রিয় বহু খানেবালাই! এই চক্রের রাঘববোয়ালদের টিকি ছোঁয়ার হিম্মত কি সরকারের হবে? সেটা নিরপেক্ষতার সঙ্গে না-হওয়া পর্যন্ত কড়া পদক্ষেপের ক্ষীণ আশাও জাগবে না।