যে কোনও কর্মেই একটু বাধা থাকবে। তবে উপার্জন মন্দ হবে না। ললিতকলায় ব্যুৎপত্তি ও স্বীকৃতি। ... বিশদ
অর্থাৎ বাংলার শিক্ষাক্ষেত্রে এক বিরাট খামতি, আরও পরিষ্কার করে বলা যায়, ভয়ানক এক অন্ধকার দূর করারই দায়িত্ব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাঁধে চেপে বসে। পরিবর্তনের মুখ্যমন্ত্রী এই দায়িত্ব অস্বীকার করেননি। বরং শিক্ষাকেই অন্যতম প্রধান অগ্রাধিকার নির্দিষ্ট করে তাঁর সরকার। শুধু স্কুলের সংখ্যার অপ্রতুলতা নয়, মমতার সরকার চিহ্নিত করে যে বহু পরিবারের তীব্র দারিদ্র্যও স্কুলছুটের নেপথ্যে। সুতরাং আর্থিক বৃদ্ধির নীতিকে পাশ কাটিয়ে শিক্ষার বিকাশ অসম্ভব। তাই গরিব পরিবারগুলির খাদ্য সমস্যা দূর করার সঙ্গে, তাদের হাতে নগদের জোগান দ্রুত বৃদ্ধিরও নানাবিধ কর্মসূচি নেওয়া হয়। পাশাপাশি গৃহীত হল কন্যাশ্রী, নানারকমের ছাত্রবৃত্তি এবং পড়ুয়াদের জন্য বইখাতা, ইউনিফর্ম, সাইকেল প্রভৃতি বণ্টনের স্কিম। বলা বাহুল্য, অঙ্গনওয়াড়ি এবং সমস্ত স্কুলে মিড ডে মিলের পরিসর বৃদ্ধিতেও গুরুত্ব দিল মমতার জমানা। জনসংখ্যার ভিত্তিতে প্রতিবছর প্রাথমিক, উচ্চ প্রাথমিক, হাইস্কুল প্রভৃতিও বাড়ানো হচ্ছে। সব ক্ষেত্রেই অগ্রাধিকার চিহ্নিত হয়েছে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী এবং মেয়েরা। সরকারের এই নীতি কতটা ফলপ্রসূ, তা প্রত্যক্ষ করা গিয়েছে করোনার বছর দুটিতে। একইসঙ্গে লক্ষণীয়, ছাত্রের অভাবে কিছু স্কুল অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়েছে। এরকম সাত হাজারের বেশি প্রাথমিক স্কুল ইতিমধ্যেই চিহ্নিত হয়েছে। এর কারণ একাধিক। তার মধ্যে অন্যতম মধ্যবিত্ত শ্রেণির ভিতরে বেসরকারি স্কুলের চাহিদা বৃদ্ধি। সব মিলিয়ে কেটে গিয়েছে এক দশকের বেশিকাল।
কিন্তু এই সময়ে যত সংখ্যক এবং যে দ্রুততার সঙ্গে শিক্ষক নিয়োগ হওয়ার দরকার ছিল তা হয়নি বলেই মনে করে শিক্ষামহলের একাংশ। তার ফলে রাজ্যজুড়ে স্কুলে স্কুলে শিক্ষকের বহু পদ শূন্য হয়েছে। শিক্ষক-শূন্যতার সমস্যাটি ক্রমবর্ধমান। ইতিমধ্যেই সামনে এসেছে শিক্ষক নিয়োগে বড়সড় বেনিয়ম এবং দুর্নীতির প্রসঙ্গ। বিষয়টি আদালতেও নিন্দিত হয়েছে। সমস্যা দ্রুত কাটিয়ে ওঠার উপর জোর দিয়েছে আদালত এবং শিক্ষানুরাগী মহল। এই ব্যাপারে মূল ভূমিকা রাজ্য সরকারের উপরই ন্যস্ত হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও চান আদালতের নির্দেশ ও পরামর্শ মেনে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় গতি আনতে। পুজোর আগেই ঘোষিত হয়েছে সেই সুখবর: রাজ্য সরকার ১১ হাজার শূন্যপদে দ্রুত শিক্ষক নিয়োগ করবে। ১১ ডিসেম্বর টেট গ্রহণের জন্য তৈরি হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। পাশাপাশি চলবে ইতিমধ্যেই টেট উত্তীর্ণ প্রার্থীদের নিয়োগ প্রক্রিয়া। পুজোর আগেই প্রকাশ করা হবে জোড়া বিজ্ঞপ্তি। একাধিক বিষয়ে বেশকিছু শিক্ষক নিয়োগে একইভাবে তৎপর স্কুল সার্ভিস কমিশনও। নবান্নের এই উদ্যোগটিকে নিছক মুখরক্ষার রাজনীতি হিসেবে দেখা উচিত হবে না, রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থার দীর্ঘ দশকের ঘাটতি পূরণেরই আন্তরিকতা বলে মেনে নেওয়া দরকার। সমস্ত শিক্ষানুরাগী মানুষের পূর্ণ সমর্থন ও সহযোগিতা এই মহতী উদ্যোগের প্রাপ্য।