যে কোনও কর্মেই একটু বাধা থাকবে। তবে উপার্জন মন্দ হবে না। ললিতকলায় ব্যুৎপত্তি ও স্বীকৃতি। ... বিশদ
লকডাউন পরবর্তীকালে দেশে বেকারত্ব ও মূল্যবৃদ্ধির জোড়া ফলার আক্রমণে এমনিতেই আম-আদমির নাভিশ্বাস ওঠার অবস্থা। এরকম একটা পরিস্থিতিতে ডলারের দাম বৃদ্ধি তেল আমদানিতে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। টাকার দামেও ধস। ফলে আশঙ্কা বাড়ছে। মোদি সরকার ঢাকঢোল পিটিয়ে দাবি করলেও দেশের অর্থনীতি এখনও কোমর সোজা করে দাঁড়াতে পারেনি। তবু এই জ্বলন্ত সমস্যাগুলি নিয়ে বিস্ময়করভাবে নীরবতা পালন করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অথচ মোদি সরকারের চালিকাশক্তি সঙ্ঘ পরিবারও মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে প্রকাশ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। খুচরো পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির হার জুলাইতে সামান্য কমলেও আগস্ট থেকেই তার গতি ঊর্ধ্বমুখী। অথচ রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মতে, মূল্যবৃদ্ধির হার আদর্শ হওয়া উচিত ৪ শতাংশের আশপাশে। কিন্তু এই হার ৭.৪ শতাংশ হওয়ার বিপজ্জনক পূর্বাভাস দিয়েছে ডয়েশ ব্যাঙ্ক। আর দামে লাগাম না-এলে তা বেড়ে ৮ শতাংশ হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। ঘটনা হল, রিজার্ভ ব্যাঙ্কসহ বিভিন্ন দেশি-বিদেশি আর্থিক প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, ভারতে এখন সবচেয়ে বেশি চিন্তার বিষয় হল মূল্যবৃদ্ধি। কিন্তু মোদি সরকারের গতি-প্রকৃতি দেখে বোঝার এতটুকু উপায় নেই যে তারা এ নিয়ে আদৌ চিন্তিত কি না। আসলে মোদি সরকার মূল্যবৃদ্ধি ও বেকারত্ব এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুকেই তেমন আমল দিতে নারাজ। জানা কথা যে, পেট্রপণ্যের দাম বাড়লে তার প্রভাব পড়ে জিনিসপত্রের দামের উপর। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে যখন অশোধিত তেল সস্তা হয়েছিল, অর্থাৎ দেশে জ্বালানি তেলের দাম কমার একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, তখনও এই সরকার তেলের দাম কমায়নি। বরং উল্টো পথে হেঁটে শুল্ক বাড়িয়ে ক্রমাগত পেট্রল ডিজেলের দাম বাড়িয়ে গিয়েছে! এখন পরিস্থিতি, তাতে বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দাম কমলেও ডলারের দাম চড়া হওয়ার কারণে সেই সুবিধা গ্রহণ ভারতের পক্ষে সহজ হবে না। মার্কিন ডলারের তুলনায় গত সাতমাসের মধ্যে টাকার দামের রেকর্ড পতন ঘটেছে এবার। যার প্রভাব ভারতীয় বাজারে পড়তে বাধ্য। তাই টাকা এত দুর্বল হয়ে পড়ার কারণ মোদি সরকারের কাছে জানতে চেয়েছে বিরোধীরা।
সত্যি বলতে কী, মূল্যবৃদ্ধির এই পরিস্থিতিকে আরও ঘোরালো করে তুলেছে টাকার দামের পতন। গত কয়েক মাস ধরেই টাকার দাম পড়ছিল। জানুয়ারি থেকে ৯ শতাংশ দাম পড়েছে। ডলার প্রতি টাকার দাম ৮০ টাকার বিপজ্জনক সীমা আগেই ছাড়িয়েছে। মাঝে কিছুটা উন্নতি হলেও ফের বড় মাপের পতন হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একদিকে টাকার দামের পতন, অন্যদিকে বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ও কমে গিয়েছে। ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি যখন ক্ষমতায় আসেন তখন এক ডলারের দাম ছিল ৫৮.৬২ টাকা। তাঁর আট বছরের রাজত্বে ভারতীয় মুদ্রার দাম ২২ টাকারও বেশি পড়ে গিয়েছে। সরকার স্বীকার করুক বা না করুক, এটাই মোদি জমানায় মুদ্রাস্ফীতির একটি বড় কারণ। সেইসঙ্গে খুচরো মূল্যবৃদ্ধি রয়েছে চড়া হারে। বেড়েছে আমদানি খরচ। তাই কাঁচামাল এবং যন্ত্রপাতি আমদানির খরচ অনেকটাই বেড়ে যাওয়ায় দেশে জিনিসপত্রের দাম ফের বৃদ্ধির আশঙ্কা প্রবল। ভারতীয় মুদ্রার অবনমন পরিস্থিতিকে ঘোরালো করে তুলছে। মূল্যবৃদ্ধির দাপট রাতের ঘুম কেড়ে নিচ্ছে আম জনতার। তবু হেলদোল নেই কেন্দ্রীয় সরকারের। সতর্কবার্তা থাকা সত্ত্বেও মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে পরিকল্পনার অভাবটি স্পষ্ট। দেশবাসী দুর্বিষহ পরিস্থিতিতে পড়লেও মোদির গলায় সেই ‘আত্মনির্ভর ভারত’-এরই স্লোগান! আর এই স্লোগান শুনিয়ে অবিরত মানুষকে ধোঁকা দিয়ে চলেছে মোদি সরকার।