যে কোনও কর্মেই একটু বাধা থাকবে। তবে উপার্জন মন্দ হবে না। ললিতকলায় ব্যুৎপত্তি ও স্বীকৃতি। ... বিশদ
আদালতের নির্দেশ ও পরামর্শ, তীব্র বিতর্ক প্রভৃতিকে কার্যত পাশ কাটিয়ে আধারকেই বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে মোদি সরকার। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট তৈরি, স্কুলে ভর্তি, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় বসতে, মোবাইল কানেকশন নিতে, চাকরি পেতে, পিএফ অ্যাকাউন্ট খুলতে, হাসপাতালে ভর্তি হতে এবং দূরপাল্লার ট্রেন/বিমান যাত্রায় আধার বাধ্যতামূলকই করা হয়েছে। জমি/বাড়ি/ফ্ল্যাট ক্রয়-বিক্রয় এবং ডেথ সার্টিফিকেট, বিমার ক্লেম ও পাসপোর্ট পেতেও আধার নম্বর দাখিল করতে হচ্ছে। রেশন, মিড ডে মিল, একশো দিনের কাজের প্রকল্প এবং যেকোনও ধরনের সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের বেনিফিট আজ আধার বিনা পাওয়া অসম্ভব। ভোটার কার্ডের সঙ্গে আধার সংযোগ এক নয়া হিড়িক। ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে মহারাষ্ট্রের তেম্ভলির দশজন ব্যক্তিকে প্রথম আধার নম্বর বণ্টন করা হয়। তারপর থেকে এ পর্যন্ত আধার প্রদানের চিত্রটা সত্যিই ব্যাপক। কেন্দ্রের দাবি অনুসারে, ২০২১ সালে ৩১ অক্টোবর আধার ছিল ১৩১ কোটি ৬৮ লক্ষ ভারতবাসীর। কিন্তু সমস্যা হল—আধার পেতে বহু মানুষের প্রচণ্ড ভোগান্তি হয়েছে। বারবার আবেদন করে এবং নির্দিষ্ট কেন্দ্রে গিয়ে ছবি তুলেও হাজার হাজার মানুষ আধার পাননি। সবচেয়ে সমস্যায় পড়েন অন্যভাবে সক্ষম এবং প্রবীণ ব্যক্তিরা। তাঁদের আঙুলের ছাপ মেলে না। বহু ব্যক্তিকে ভুলে ভরা আধার দেওয়া হয়েছে। নাম, ঠিকানা, জন্ম তারিখ প্রভৃতি নানাবিধ ভুল থাকায় অনেকের আধার প্রয়োজনে ব্যবহারই করা চলে না।
আবার আধার সংশোধনের ঝামেলা কত বেশি তা ভুক্তভোগীরাই জানেন। নির্দিষ্ট ব্যাঙ্ক বা ডাকঘরে গিয়ে অ্যাপয়েন্টমেন্ট জোগাড় করতে মানুষের কালঘাম ছুটে যায়। সরকার নানাসময়ে নানাধরনের গালভরা দাবি করলেও তার সঙ্গে বাস্তবের মিল প্রায় নেই। দিনের শেষে চরম দুর্ভোগ ছাড়া কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। তারই মধ্যে নতুন ফরমান জারি করেছে সরকার, প্রতি দশবছরে একবার আধার আপডেট করা বাধ্যতামূলক। এমনিতে কার্ডের সংখ্যার চাপ অসহনীয়। তারই মধ্যে এই ফরমান মোটেই সুখবর নয়। পশ্চিমবঙ্গে পৌনে দশ কোটি মানুষ আধার পেয়েছেন। সংখ্যাটি ভবিষ্যতে আরও বাড়বে বলেই ধরে নেওয়া যায়। অর্থাৎ সারা দেশের সঙ্গে বাংলার কোটি কোটি মানুষের সামনেও এই লাল সঙ্কেত ঝুলে রইল। সরকারকে দেখতে হবে, আধার নিয়ে পূর্ব তিক্ত অভিজ্ঞতার পুনরাবৃত্তি যেন কোনওভাবেই না-হয়। তাহলে আধার আপডেট করার উদ্দেশ্যটাও নষ্ট হবে।