যে কোনও কর্মেই একটু বাধা থাকবে। তবে উপার্জন মন্দ হবে না। ললিতকলায় ব্যুৎপত্তি ও স্বীকৃতি। ... বিশদ
এই রাজ্যে ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটে গোহারান হেরেছে বিজেপি। তাদের জুটেছিল মাত্র ৭৭টি আসন। ভোটের পর তাও ধরে রাখতে পারেনি নেতৃত্ব। এখন রাজ্যে গেরুয়া বিধায়কের সংখ্যা কমে হয়েছে ৭০। তবু কোনও তর্ক ছাড়াই সরকারিভাবে তারাই রাজ্যে প্রধান বিরোধী দল। কিন্তু বিরোধী পরিসর দখল করতে অস্তিত্ব সঙ্কটে ভোগা বামেরা এখন মমতার সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে এবং রাজ্যকে অশান্ত করে তুলতে মাঠে ময়দানে নেমে পড়েছে। অতএব বিজেপির কাছে তা ইজ্জত কি সওয়াল। তাই জনমানসে ‘ছাপ’ ফেলতে নবান্ন অভিযানের নামে গেরুয়াবাহিনীর হিংস্র তাণ্ডব দেখা গিয়েছে। সেদিন রাজপথে একাধিক পুলিসের উপর বেপরোয়া আক্রমণ নেমে আসে। জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে পুলিসের গাড়ি। গঙ্গার দুই পাড়ের শহরের একাধিক জায়গায় হামলা চালিয়ে সরকারি সম্পত্তিও নষ্ট করেছে বিজেপির আন্দোলনকারীরা। এককথায় অভিযানের নামে সেদিন এক ভয়াবহ বাতাবরণ তৈরি করেছিল বিজেপি। শান্তিপূর্ণ অভিযানের নামে দিনভর এই তাণ্ডবকে অবশ্য দু’হাত তুলে সমর্থন ও আশীর্বাদ করেছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। অবস্থার পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট নিতে দিল্লি থেকে প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছে তারা। এতে হয়তো দ্বিগুণ উৎসাহিত বঙ্গ বিজেপি। গত বৃহস্পতিবার বিধানসভাতেও তার প্রতিচ্ছবি দেখা গিয়েছে। সেদিন দুর্নীতির ইস্যুতে বিধানসভায় ব্যাপক হট্টগোল করেন বিজেপি বিধায়করা। কিন্তু তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সেই রণংদেহি ভাবমূর্তি কর্পূরের মতো উবে গেল! আসলে শক্তি হারাচ্ছে বিজেপি।
সংসদীয় গণতন্ত্রে চিরকালীন রীতি হল, রাজ্যের নানা ইস্যুতে বিধানসভায় শাসকদলকে চেপে ধরে বিরোধীরা। এখন দুর্নীতি ইস্যুতে তোলপাড় রাজ্য। সন্দেহ নেই, দুর্নীতির প্রশ্নে কিছুটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে রয়েছে শাসকদল। ফলে বিধানসভায় শাসকদলকে তুলোধোনা করার সুযোগ ছিল বিজেপির। তারা মুলতুবি প্রস্তাব আনায় সেই সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছিল। কিন্তু দিনের শেষে দেখা গেল, বিজেপির এক বিধায়ক মুলতুবি প্রস্তাব পাঠ করলেও সেই ইস্যুতে কোনও আলোচনাই চাইলেন না তাঁরা। অর্থাৎ দলটির যে ছন্নছাড়া দশা এ ঘটনা তারই প্রমাণ। আসলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে জেরবার বঙ্গ বিজেপি। লক্ষণীয় যে, এমন একটা প্রস্তাব উত্থাপনের দিন বিধানসভায় উপস্থিত বিজেপি বিধায়কের সংখ্যা ছিল মাত্র ১২ জন! এমনকী যাঁরা মুলতুবি প্রস্তাব আনার উদ্যোগ নিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ সভায় হাজিরই হননি। এই দৈন্যদশা ফুটে ওঠার পর ‘মুড’ নেই, তাই আলোচনা চাননি বলে জানিয়েছেন এক বিজেপি বিধায়ক। বিজেপির এমন বালখিল্য আচরণে শাসক তৃণমূলের খুশি হওয়ারই কথা। নিশ্চয়ই তারাও বিস্মিত হয়েছে। বিধানসভায় এমন ছেলেমানুষি আচরণের পর সঙ্গতভাবেই বিজেপি নেতাদের মধ্যে সমন্বয় ও সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রথমত, নবান্ন অভিযানের দিন শুরুতেই বিরোধী দলনেতার স্বেচ্ছায় পুলিসের কাছে ধরা দেওয়া, আন্দোলনের মাঝপথে দিলীপ ঘোষের মিছিল শেষের ঘোষণাটি তাঁদের নিজেদের মধ্যে সমন্বয় নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। আবার শাসকের বিরুদ্ধে মুলতুবি প্রস্তাব এনেও তা আলোচনা করতে না চাওয়ার মধ্যে বিরোধীদের ভূমিকাও প্রশ্নের মুখে। এই ঘটনা কার্যত নজিরবিহীন। দেখা যাচ্ছে, প্রধান বিরোধীদলের ভূমিকা পালন করতেও বিজেপি ব্যর্থ। ছন্নছাড়া, বিভিন্ন গোষ্ঠীতে বিভক্ত, উদ্দেশ্যহীন বঙ্গ বিজেপি নেতৃত্ব অবশ্য এর পরেও ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন দেখছে! তাদের অবস্থা অনেকটা পিপীলিকার পাখনা ঝাপটানোর মতো।