যে কোনও কর্মেই একটু বাধা থাকবে। তবে উপার্জন মন্দ হবে না। ললিতকলায় ব্যুৎপত্তি ও স্বীকৃতি। ... বিশদ
ফাঁকা আওয়াজ দেওয়ায় বিজেপির ধারেকাছে কেউ নেই। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় থেকে শুরু হয়েছিল ডায়ালগবাজি। দিল্লির নেতারা বাংলায় এসে হুঙ্কার দিয়েছিলেন, লোকসভা নির্বাচনের রেজাল্ট যেদিন বেরবে তার এক মাসের মধ্যেই পড়ে যাবে মমতা দিদির সরকার। বিপুল শক্তি নিয়ে কেন্দ্রের ক্ষমতায় এসেছিল বিজেপি। কিন্তু তৃণমূল সরকারের গায়ে আঁচড় পর্যন্ত কাটতে পারেনি।
একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগেও তৃণমূলকে ভাঙার জন্য আদাজল খেয়ে নেমেছিল বিজেপি। জেলযাত্রার ভয়ে অনেকেই বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। তা দেখে উৎসাহিত নরেন্দ্র মোদি দাবি করে বসেছিলেন, তাঁর সঙ্গে ৫০জন তৃণমূল বিধায়ক যোগাযোগ রাখছেন। কিন্তু দলবদলু বিধায়কের সংখ্যা তার ধারেকাছেও পৌঁছয়নি।
বিজেপি প্রথমে লক্ষ্য স্থির করে। তারপর ঢাকঢোল পিটিয়ে তা প্রচার করে। উদ্দেশ্য, বিরোধী শিবিরের উপর চাপ সৃষ্টি। কৌশল লা-জবাব। কিন্তু লক্ষ্যভেদ করতে পারে না। এটাই বিজেপির ট্রাজেডি! একুশের নির্বাচনী প্রচারে বিজেপি দু’শোর বেশি আসন পাবে বলে গলা ফাটিয়েছিল। কিন্তু পেয়েছিল মাত্র ৭৭টা।
তিনবারের চেষ্টায় মহারাষ্ট্র দখলের পরই বিজেপি ঝাড়খণ্ড, দিল্লি, বাংলা দখলের হুঙ্কার ছেড়েছিল। সেই লক্ষ্য পূরণ হয়নি, উল্টে বিহার বিজেপির হাতছাড়া হয়েছে। বিধায়ক কিনে ঝাড়খণ্ড দখলের চেষ্টা করতে গিয়ে বিজেপির মুখ পুড়েছে। দিল্লিতেও সেই চেষ্টা হয়েছে ব্যর্থ। এবার বাংলায় ডিসেম্বরেই সরকার ফেলার হুমকি। তবে অনেকে বলছেন, বিজেপি নেতারা মুখে যা বলেন বাস্তবে ঘটে ঠিক তার উল্টো। কেবল মিলে যায় সিবিআই, ইডি নিয়ে তাদের করা ভবিষ্যদ্বাণী। কারণ দিল্লির কর্তাদের তৈরি করে দেওয়া রুটম্যাপ ধরেই চলতে অভ্যস্ত কেন্দ্রীয় এজেন্সি।
নতুন কিছু করাটা নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহের নেশা। তারজন্য বিজেপি হাঁটে উল্টো পথে। সব রাজনৈতিক দল মানুষের মন জয় করে ভোটে
জিতে সরকার গড়ে। আর বিজেপি মানুষকে চটিয়ে ভোটে হারে। তারপর বিধায়ক ভাঙিয়ে ক্ষমতা দখল করে। বিজেপি পায়ের মাপে জুতো না কিনে, জুতোর মাপে পা তৈরি করতে ভালোবাসে। তাই তদন্তের আগেই ঠিক করে দেয়, কোথায় হানা দিতে হবে, আর কাকে কাকে গ্রেপ্তার করতে হবে। কেন্দ্রীয় এজেন্সিও সেটাই অনুসরণ করে।
বিজেপির অন্দরের খবর, পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেপ্তার হওয়ায় তাদের খুব একটা ফায়দা হয়নি। ক্ষীরটা খেয়ে নিয়েছে বামেরা। কিন্তু অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে হিট করতে পারলে তার পুরো বেনিফিট পাবে বিজেপি। তাই অভিষেকের উইকেটটা গেরুয়া শিবিরের কাছে খুব মূল্যবান। তারজন্য তাঁকে দু’দুবার দপ্তরে ডেকে ম্যারাথন জেরা করেছে ইডি। কিন্তু বাগে আনতে পারেনি। তাই তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ডের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের জালে তুলতে চাইছে কেন্দ্রীয় এজেন্সি। আর সেটা করতে গিয়েই এমন সব কাণ্ড করছে যার জন্য আদালতে গিয়ে ভুল স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছে।
প্রথম থেকেই কেন্দ্রীয় এজেন্সির বিরুদ্ধে আঙুল তুলেছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, মানুষের রায়ে পরাজিত বিজেপি সিবিআই, ইডি লাগিয়ে তৃণমূলকে শায়েস্তা করতে চাইছে। প্রতিহিংসার রাজনীতি করছে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশ্যে ঘোষণা করছেন, তাঁর বিরুদ্ধে দশ পয়সার দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারলে তিনি নিজে ফাঁসির মঞ্চে চলে যাবেন। তাঁর অভিযোগ, নরেন্দ্র মোদি সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্যই তাঁকে হেনস্তা করা হচ্ছে।
কলকাতা হাইকোর্টে ইডির দাখিল করা হলফনামায় তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের তোলা সেই অভিযোগই মান্যতা পেল। অভিষেকের শ্যালিকাকে কলকাতা এয়ারপোর্টে আটকে রাখা যে ভুল পদক্ষেপ, তা
ইডির আইনজীবী লিখিতভাবে স্বীকার করেছেন।
তিনি আদালতে জানিয়েছেন, ‘মেনকা গম্ভীরকে কলকাতা বিমান বন্দরে আটকে রাখা ঠিক হয়নি।
তবে এটা ইচ্ছাকৃত নয়। ঘটনাকে হয়রানি হিসেবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।’
কেন্দ্রীয় এজেন্সি প্রভূত ক্ষমতার অধিকারী।
তার সেই ক্ষমতাকে বিজেপি নেতৃত্ব দলীয় স্বার্থে
কাজে লাগাচ্ছে। কেন্দ্রীয় এজেন্সির কাঁধে ভর দিয়ে ম্যাচ জিততে চাইছে। কিন্তু বিরোধী শিবিরের বাঘা বাঘা ব্যাটসম্যানকে আউটের দায়িত্ব যাদের উপর দিয়েছে, তারাও চাপ নিতে পারছে না। তাই মাঝেমধ্যেই করছে ‘নো বল’। তাতে বিরোধীরা পেয়ে যাচ্ছে ফ্রি হিটের সুযোগ।
প্রত্যাশার চাপ কাকে বলে, তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন কেন্দ্রীয় এজেন্সির কর্তারা। আসমুদ্র হিমাচল বিরোধী শিবিরকে দুরমুশ করার দায়িত্ব তাঁদের কাঁধে চাপিয়ে দিয়েছে বিজেপি। নেতৃত্বের সেই প্রত্যাশা পূরণের প্রবল চাপের মুখে অনেক সময়ই তাঁরা ধরে আনার বদলে বেঁধে আনছেন। ফলে ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে, নিরপেক্ষ তদন্তের চেয়ে প্রভুদের খুশি করাই কেন্দ্রীয় এজেন্সির লক্ষ্য। তাতে প্রশ্নের মুখে পড়েছে তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা।
বঙ্গ বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের মুখ দেখাদেখি প্রায় বন্ধ। তা সত্ত্বেও তিন শীর্ষ নেতা এক সুরে বলেছেন, ডিসেম্বরে রাজ্যের সরকার ভাঙছে। কিন্তু বিবিধের মাঝে এমন মিলনটা হল কী করে? কারণ সুর বেঁধে দিয়েছে দিল্লি। তাদের কাছে বঙ্গের কর্মীদের চাঙ্গা করার এটাই একমাত্র রাস্তা। সুর বেঁধে দিলেও কথাগুলি ভিন্ন। তাই খুব ভালো করেই বোঝা যাচ্ছে, সবটাই ফাঁকা আওয়াজ।
বিজেপি নেতাদের কথা এখন আর দলের কর্মী-সমর্থকরাও বিশ্বাস করেন না। সেইজন্যই ময়দানে নামানো হয়েছে মিঠুন চক্রবর্তীকে। মিঠুনের দাবি, তাঁর সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের অনেক বিধায়ক যোগাযোগ রাখছেন। তবে দল পচা আলু চাইছে না, বেছে বেছে ভালো আলু নিতে চাইছে।
কিন্তু দিলীপ ঘোষের কথায় স্পষ্ট হয়েছে, বিজেপির সঙ্গে ভালো বা খারাপ কোনও ‘আলু’ই যোগাযোগ রাখছে না। অর্থাৎ পুরোটাই ফাঁকা আওয়াজ। বিরোধী শিবিরের উপর মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টির এও এক কৌশল।
অনেকে অবশ্য বলছেন, ডিসেম্বরে তৃণমূল সরকার ভেঙে যাবে বলে বিজেপি যে প্রচার চালাচ্ছে, তার পিছনেও রয়েছে একটা অঙ্ক। রাজ্যের কয়েকজন
মন্ত্রী সহ ১৯ জন তৃণমূল নেতার সম্পত্তি বৃদ্ধির মামলায় ইডিকে যুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। তাতেই উৎফুল্ল গেরুয়া শিবির ভেবেছিল, তদন্তের সূত্র ধরেই ঘাসফুল শিবিরকে আতঙ্কিত করা যাবে। আর সেই ভয়ে তৃণমূলের বিধায়করা মহারাষ্ট্রের পথে হাঁটবেন। বাধ্য হবেন বিজেপির সঙ্গে হাত মেলাতে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট তৃণমূল নেতাদের সম্পত্তি বৃদ্ধির মধ্যে কোনও অন্যায় খুঁজে পায়নি। তাই ইডিকে যুক্ত করার ব্যাপারে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ খারিজ করে দিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ে গেরুয়া শিবিরে নেমে এসেছে চরম হতাশা।
তবে, বিজেপি নেতৃত্বকে আরও হতাশ করেছে পুজোর উদ্বোধনের বাজারে তাদের রেকর্ড সেনসেক্স পতন। দুর্গাপুজোর উদ্বোধনে তাদের কেউ ডাকছে না। এমনকী মোটা চাঁদা দিয়ে উদ্বোধক হতে পারেননি অনেকে। এই অবস্থায় পশ্চিম বর্ধমানের এক বিজেপি বিধায়ক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিনা আমন্ত্রণেই যাবেন মণ্ডপে মণ্ডপে। অর্থাৎ পুজোর আনন্দযজ্ঞেও বিজেপি অনাহূত। তাদের সঙ্গ সন্তর্পণে এড়িয়ে চলতে চাইছে সকলেই। হ্যাঁ, ‘গ্রাউন্ড জিরো’য় এটাই প্রকৃত চিত্র।