যে কোনও কর্মেই একটু বাধা থাকবে। তবে উপার্জন মন্দ হবে না। ললিতকলায় ব্যুৎপত্তি ও স্বীকৃতি। ... বিশদ
আসল ধারণাটি কাশ্মীরের ইতিহাস এবং ১৯৪৭ সালের ২৬ অক্টোবর কাশ্মীরের তৎকালীন মহারাজা হরি সিং অন্তর্ভুক্তিতে সম্মত হয়ে যে নথি (ইনস্ট্রুমেন্ট অব অ্যাকসেশন) স্বাক্ষর করেছিলেন তাতেই পরিষ্কার রয়েছে। গণপরিষদ ওই ‘ইনস্ট্রুমেন্ট অব অ্যাকসেশন’-কে স্বীকৃতি দিয়েছিল এবং এর নেপথ্যের চিন্তাভাবনাটিকে সাগ্রহে গ্রহণ করেছিল কংগ্রেস পার্টি। যদিও কংগ্রেস পার্টি দীর্ঘ বছরে তার অবস্থানটি লঘু করে ফেলে। তবে প্রতিটি সুযোগে স্পেশাল স্টেটাস বা বিশেষ মর্যাদার ধারণার নিহিতার্থের উপর পুনরায় তার আস্থা নিশ্চিত করেছে কংগ্রেস।
বিপরীত আইডিয়াটির জনক, ১৯৪৭ সালে জওহরলাল নেহরুর প্রথম মন্ত্রিসভার সদস্য শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। আরএসএস এবং বিজেপিসহ তার রাজনৈতিক শাখাগুলি শ্যামাপ্রসাদের চিন্তাধারাকেই আঁকড়ে ছিল। দীর্ঘ বছরে তার উপরে যোগ হয়েছে আরও কিছু পরত। তাতে মূল ধারণাটি তারা এমনভাবে বিকৃত করেছে যে তাদের কাছে ইনস্ট্রুমেন্ট অব অ্যাকসেশনটাই খারিজ হয়ে গিয়েছে।
কংগ্রেসের ধারাবাহিক অবস্থান
২০১৯ সালের ৫ আগস্ট বিজেপি সরকার, জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা খারিজ, রাজ্যের মর্যাদা হরণ, রাজ্যকে ভেঙে জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখ নামে পৃথক দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তৈরির মতো চরম পদক্ষেপ করেছিল। পরদিন, কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি জরুরি সভা ডেকে একটি প্রস্তাব (রেজোল্যুশন) গ্রহণ করে, একই সঙ্গে পড়ে দেখুন:
‘একতরফা, নির্লজ্জ এবং সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক উপায়ে সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করা হল এবং সংবিধানের বিধানগুলির ভুল ব্যাখ্যার জোরে ভেঙে দেওয়া হল জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যকে, কংগ্রেস কর্মসমিতি (সিডব্লুসি) তার নিন্দা করছে ... জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্য এবং ভারতের মধ্যে স্বাক্ষরিত ইনস্ট্রুমেন্ট অব অ্যাকসেশনের শর্তাবলির সাংবিধানিক স্বীকৃতিরই নাম হল অনুচ্ছেদ ৩৭০। কঠোরভাবে ভারতের সংবিধান মেনে এবং জনগণের সমস্ত অংশের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে এই ব্যবস্থার সংশোধন না-হওয়া পর্যন্ত, এটার সম্মান-মর্যাদা প্রাপ্য।’
কংগ্রেস কর্মসমিতির সিনিয়র এবং দীর্ঘদিনের সদস্য গুলাম নবি আজাদ ওই ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন এবং প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন।
পদক্ষেপ অপরিবর্তনীয় নয়
মোদি সরকারের নেওয়া তথাকথিত ‘আইনি’ পদক্ষেপগুলি ফিরে দেখা যেতে পারে:
(১) কোনও সংবিধান (সংশোধনী) বিল সংসদে আনা বা পাশ করা হয়নি।
(২) আগস্ট ৫, ২০১৯ সরকার অনুচ্ছেদ ৩৭০(১)-এর অধীনে একটি আদেশ জারি করে। আর সেটা করা হয় ১৯৫৪ সালের অনুরূপ একটি আদেশ বাতিল করে এবং সংবিধানের ব্যাখ্যা সংক্রান্ত অনুচ্ছেদ ৩৬৭-তে ক্লজ বা ধারা (৪) যোগ করে।
(৩) একই দিনে, অনুচ্ছেদ ৩৭০ রদ করার জন্য সরকার সংসদে একটি প্রস্তাব আনে এবং সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৭০(৩)-এর বিধান অনুসারে সেটি তথাকথিতভাবে উভয় কক্ষে পাশ করানো হয়।
(৪) একই দিনে, সরকার রাজ্যসভায় জম্মু ও কাশ্মীর (পুনর্গঠন) বিল, ২০১৯ পেশ এবং পাশ করিয়ে নেয়। সেই অনুসারে, রাজ্যটিকেই ভেঙে দিয়ে তৈরি করে নেয় দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। সেটি লোকসভায় পাশ করানো হয় পরদিন। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩-এর ব্যবহারের মাধ্যমে এটা একইভাবে করা হয়।
(৫) আগস্ট ৬, ২০১৯-এ, রাষ্ট্রপতি তথাকথিতভাবে অনুচ্ছেদ ৩৭০(৩)-এর অধীনে একটি বিজ্ঞপ্তি জারিসহ ঘোষণা করেন যে ৬ আগস্ট ২০১৯ থেকে ৩৭০ অনুচ্ছেদের সমস্ত ধারা অকার্যকর গণ্য হবে, ব্যতিক্রম একই বিজ্ঞপ্তি মারফত সূচিত একটিমাত্র ধারা।
কংগ্রেস কর্মসমিতির সকল সদস্য নিশ্চিত হন যে উপর্যুক্ত পদক্ষেপগুলি অবৈধ এবং অসাংবিধানিক। দুর্ভাগ্যজনক দিন দুটিতে সংসদের উভয় কক্ষেই দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের উপস্থিতি এবং ভোটগ্রহণের যে প্রয়োজন ছিল সরকার সেটি করেনি। ওই আদেশ এবং বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছিল ‘এগজিকিউটিভ পাওয়ার’ প্রয়োগের মাধ্যমে। প্রস্তাব এবং বিলটি পাশ করানো হয় সাধারণ গরিষ্ঠতার (সিম্পল মেজরিটি) ভিত্তিতে।
বিতর্কিত পদক্ষেপগুলি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট যদি কোনও বা সমস্ত পদক্ষেপকে অসাংবিধানিক বলে রায় দেয় তবে পদক্ষেপ বা পদক্ষেপগুলি উল্টে যাবে। বিকল্পভাবে, যদি অন্যকোনও সরকার মোদি সরকারের স্থলাভিষিক্ত হয়, তবে নতুন সরকার কিছু অথবা সমস্ত পদক্ষেপ উল্টে দিতে পারে। আজাদ সাহেব নিশ্চয় সব জানেন। তাহলে তিনি কেন বললেন যে, একটি রাজনৈতিক দল অনুচ্ছেদ ৩৭০ পুনরুদ্ধারের নামে মানুষকে ‘মিথ্যে’ প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে (এমন কিছু যা তিনি কখনওই করেননি)?
আজাদি নয়, স্বায়ত্তশাসন
যে বিষয়টি জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণের কাছে প্রধান, সেটি অনুচ্ছেদ ৩৭০ নয়। তাদের আসল চাহিদা হল ‘বিশেষ মর্যাদা’।
‘বিশেষ মর্যাদার’ তাৎপর্য এখানেই যে, ২০১৯ সালের আগস্টে অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিল হওয়া সত্ত্বেও, কাশ্মীর উপত্যকার বেশিরভাগ মানুষের (এবং জম্মু ও লাদাখেও উল্লেখযোগ্য সমর্থন রয়েছে) কাছে তার আকাঙ্ক্ষা রয়ে গিয়েছে; সর্বোপরি, এটাই জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যকে ভারতীয় সাধারণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে চিরদিনের জন্য স্বায়ত্তশাসন দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট বহু মানুষের সঙ্গে কথা বলে আমি নিশ্চিত যে তারা আজাদি বা স্বাধীনতা বা বিচ্ছিন্ন হওয়ার দাবি করে না। তারা চায় বিরাট মাত্রায় স্বায়ত্তশাসন (লার্জ ডিগ্রি অব অটোনমি)। তারা পি ভি নরসিমা রাও (আকাশই হল সীমা) এবং অটলবিহারী বাজপেয়ির (‘ইনসানিয়াত, জামহুরিয়াত, কাশ্মীরিয়াত’) কথাগুলি স্মরণ করে। একটি ফেডারেশনের মধ্যে কোনও রাজ্যের তরফে বিরাট মাত্রার স্বায়ত্তশাসনের দাবি উত্থাপন অস্বাভাবিক কিছু নয়। শ্রীলঙ্কার জন্য ভারত এমন ব্যবস্থার সুপারিশই জারি রেখেছে, যেমন সম্প্রতি, গত ১২ আগস্ট তারা করেছে রাষ্ট্রসঙ্ঘের মানবাধিকার সংসদে (ইউএনএইচআরসি)। সরকারের সঙ্গে আলোচনায় নাগা গোষ্ঠীগুলি একই দাবি পেশ করেছে, ‘স্বায়ত্তশাসনের মাত্রা’ ইস্যুতে যা এখনও অমীমাংসিত।
কংগ্রেস কর্মসমিতির সদস্য, সাংসদ এবং বিরোধী দলের নেতা হিসেবে আজাদ সাহেব কাশ্মীরের আসল ধারণার ভিত্তিতেই তার বক্তব্য তুলে ধরেন। দুর্ভাগ্য এমনই যে, এমপির স্টেটাস চলে যেতেই আজাদ সাহেব কাশ্মীর সম্পর্কে বিপরীত ভাবনা আঁকড়ে ধরেছেন।