সুকান্ত বসু, কলকাতা: ফি বছরই পুজোয় নিত্যনতুন থিমের ছড়াছড়ি। দর্শক টানা এবং নানা পুরস্কার ছিনিয়ে আনাই যার লক্ষ্য। দেবীর আগমনে যে সর্বত্র খুশির জোয়ার বয়ে যায়– সেই ছবিকেই তুলে আনা হয়েছে উত্তর কলকাতার শ্যামবাজার পল্লিসঙ্ঘের পুজোয়। এখানকার আকর্ষণ মণ্ডপ জুড়ে নানা বাহারি আলোর সমাহার। বৃন্দাবন মাতৃ সমিতির পুজো এবার পড়ল ১১৩ তম বছরে। পুরনো কলকাতার নানা অলিগলির ছবি তুলে আনা হয়েছে মণ্ডপে। দক্ষিণ কলকাতার সমাজসেবী সঙ্ঘের পুজোয় তুলে আনা হয়েছে স্বাধীনতার ৭৫ বছরকে। কসবা বন্ধু মিলন স্পোর্টিং ক্লাবের পুজোর প্রতিমা সাবেকি। অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে তাঁরা পুজো করেন বলে দাবি উদ্যোক্তাদের। হাজরা উদয়ন সঙ্ঘের পুজো এবার পা দিল ৭৭ তম বর্ষে। মণ্ডপজুড়ে সত্যজিৎ রায়ের নানান সৃষ্টিকর্মের কোলাজ তুলে ধরা হয়েছে। সুনীল নগর সর্বজনীনের পুজো পড়ল ৭৩ তম বর্ষে। এখানকার থিম ‘সমাজ দণ্ড’। হাজার হাজার লাঠি দিয়ে সাজানো হয়েছে মণ্ডপ। কুদঘাট প্রগতির সঙ্ঘের পুজোয় এবারকার ভাবনা ‘স্বর্ণযুগ’। সমগ্র প্যান্ডেলটি সাজানো হয়েছে গ্রামোফোন রেকর্ড দিয়ে। বেহালা ২৯ পল্লির পুজোর বিষয় ‘ধরিত্রী’। বেহালার সেনহাটি দুর্গোৎসব সমিতির পুজো এবার পা দিল ৬৪ বছরে। এখানকার প্রতিমা সাবেকি। পুজো উপলক্ষে প্রতিদিন সন্ধ্যায় আয়োজন করা হয়েছে নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। ঠাকুরপুকুর ক্লাবের পুজো মণ্ডপকে সাজানো হয়েছে শরতের প্রকৃতির সাজে। দক্ষিণ কলকাতার তরুণ সমিতির পুজো প্যান্ডেলকে সাজানো হয়েছে বহু বিচিত্র রঙিন কাগজের পাখি দিয়ে। কালীঘাট শ্রীসঙ্ঘের পুজোয় এবার চালচিত্রের নানা পটে দেবী দুর্গার গেরস্থালির ছবিকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। প্রতিমা শিল্পী রেবা পালের এই সৃষ্টি রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছে।
উল্টোডাঙার ধরবাগান সর্বজনীন এবার পা দিল ৭৬ তম বর্ষে। জমিদার বাড়ির ঠাকুর দালানের আঙ্গিকে গড়ে উঠেছে তাদের মণ্ডপ। জমিদার বাড়ির নানা আদব-কায়দা, ঐতিহ্যকেও তুলে ধরা হয়েছে প্যান্ডেলে। বরানগর টবিন রোডের বসাক বাড়ির পুজো এবার পড়ল ৬২ তম বর্ষে। সাবেক বাংলাদেশে শুরু হয়েছিল এই পুজো। ঐতিহ্য মেনে আজও বৈষ্ণব মতে পুজো হয়ে এই বাড়িতে। পরিবারের তরফে অসিতকুমার বসাক জানান, পুজোর দিনগুলিতে আয়োজন করা হয় নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। শহরতলির কিশোর অ্যাথলেটিক ক্লাবের দুর্গাপুজো এবারও সমারোহে পালিত হচ্ছে। বরানগর ছাত্র সম্মিলনীর এবারকার ভাবনা ‘সর্বজনীন থেকে বিশ্বজনীন’। রাজা কংসনারায়ণ রায়ের সময় থেকে এখন পর্যন্ত বাংলার দুর্গাপুজায় চালচিত্রের যে পরিবর্তন হয়েছে, তাকেই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এখানকার মণ্ডপে। প্যান্ডেলে ব্যবহার করা হয়েছে অসংখ্য সিংহাসন, আর হরেকরকম চালচিত্র। পরিকল্পনা শিল্পী অভিজিৎ নন্দীর। এখানকার প্রতিমা শিল্পী হলেন পিন্টু হাজরা। শহরতলির কালাকার পাড়ার পুজো সম্মিলনী ৭৪ তম বর্ষে। এখানকার আকর্ষণ বাঁশের কারু শিল্প।
দক্ষিণেশ্বর ডোমেস্টিক এরিয়া দুর্গাপুজা কমিটির পুজো মণ্ডপ সাজিয়ে তোলা হয়েছে খড়, তালপাতা ও হোগলা দিয়ে। আচমকা দেখলে মনে হবে কোনও গ্রাম। টালিগঞ্জের চারুচন্দ্র ভবনের পুজো এবার ৯৫ বছর পড়ল। এই বাড়ির মা পূজিতা হন কন্যারূপে। বর্ধমান থেকে উপস্থিত হন পুরোহিত। মায়ের সাজের দায়িত্বে রয়েছেন রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পী হরগোপাল সাহা।