গোড়ালি, কনুই বা হাঁটুর সঠিক দেখভাল না করলে কালো দাগ ও ছোপ পড়ে। তাতে মাটি হয় বাকি সাজ। কীভাবে যত্ন নেবেন? পরামর্শে রূপ বিশেষজ্ঞ শেহনাজ হুসেন।

অনেক সময়ই অযত্নে আমাদের গোড়ালি ফেটে যায়, পায়ের গোছ ও কনুইতে কালো ছোপ ধরে অথবা হাঁটুর ত্বক অমসৃণ হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে কী করবেন? কয়েকটা ঘরোয়া পদ্ধতিতেই সমাধান সম্ভব, জানালেন শেহনাজ হুসেন।  
রোজকার দেখভাল
কনুইয়ে কালো ছোপ খুবই সাধারণ একটা ব্যাপার। অবহেলা ও অযত্নে এই ছোপ পড়ে। স্নানের সময় সারা গায়ে সাবান মাখার সময় আলাদা করে কনুই ঘষার কথা আমাদের অনেক সময়ই মনে থাকে না। ফলস্বরূপ কনুইয়ে কালো দাগ হয়ে যায়। কিন্তু রোজ যদি একটু খেয়াল করে কনুই ঘষে স্নান করা যায় তাহলে আর কোনও সমস্যা থাকবে না। একটা পাতিলেবু নিয়ে তা দু’ভাগে ভাগ করে নিন। তারপর এক একটি ভাগ দু’টি কনুইতে গোলাকারে ঘষতে থাকুন। অন্তত দশ মিনিট ঘষার পর ঠান্ডা জলে কনুই ধুয়ে ফেলুন। লেবুর রস আমাদের ত্বকের ভেতর ঢুকে দাগ ছোপ দূর করে। স্কিন কালার এই রসে অনেকটাই হালকা হয়। তাতে কনুই পরিষ্কার দেখায়। এ‌ই যত্ন কিন্তু রোজকার। একইভাবে হাঁটুর কালো দাগও দূর করা যায়। আরও ভালো ফল পেতে রোজ লেবু ঘষার পাশাপাশি সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার এই জায়গায় একটা ঘরোয়া প্যাক লাগান। দই আর বেসন একসঙ্গে ফেটিয়ে নিন। তাতে অল্প হলুদ মেশান। তারপর এই প্যাক কনুইতে লাগিয়ে আধ ঘণ্টা রেখে দিন। শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা জলে ধুয়ে ফেলুন।
হাঁটুর যত্নে নারকেল তেল
বাড়িতে নারকেল তেল তো থাকেই। হাঁটুর কালো ছোপ দূর করতে এই তেলের জুড়ি নেই। স্নানের সময় পাঁচ মিনিট যদি একটু অয়েল মাসাজ করা যায় তাহলে তা খুবই কাজে লাগে। বেশ কিছুক্ষণ ধরে নারকেল তেল হাঁটুতে মাসাজ করে নিন। তারপর তেলটা ত্বকে ঢুকে গেলে স্নান শুরু করুন। এই সময় হাঁটুতে একটু বডি স্ক্রাব লাগিয়ে তা লুফা দিয়ে ঘষে নিন। বেশ কিছুক্ষণ ঘষার পর ধুয়ে ফেলুন। স্নান করে বেরনোর পর গা আধভেজা থাকতে থাকতেই হাঁটুতে ময়েশ্চারাইজিং লোশন লাগান। ভেজা অবস্থায় লোশন লাগালে তা দ্বিগুণ কাজ করে। ত্বক নরম থাকে। হাঁটু ক্রমাগত ঘষার ফলে যদি তাতে কোনও খড়খড়ে ভাব দেখা যায় তাহলে স্নানের পর লোশন মাসাজ করলে তা চলে যাবে। এছাড়া কনুইয়ের ঘরোয়া প্যাক হাঁটুতেও লাগাতে পারেন। একই পদ্ধতিতে লাগাতে এবং ধুয়ে ফেলতে হবে।
পায়ের যত্ন নিন
     গোড়ালি এবং পায়ের পাতা বা আঙুলে কালো দাগ এড়াতে একটা বড় গামলায় জল নিন। তাতে বাথ সল্ট মেশান। তারপর ১ চা চামচ এসেনশিয়াল অয়েল মেশান। এই জলে পা ডুবিয়ে রাখুন কুড়ি মিনিট। তারপর এক চামচ মধু পায়ে ঢেলে কালো অংশে মাসাজ করুন। এরপর একটা ঘরোয়া স্ক্রাব বানিয়ে নিন। তার জন্য আমন্ড বাটা, পাকা পেঁপে কোরানো আর দই একসঙ্গে বেটে নিন। এই মিশ্রণ পায়ের কালো অংশে এবং গোড়ালিতে সমানভাবে লাগিয়ে নিন। তারপর মিনিট পনেরো রেখে তা ধুয়ে ফেলুন। এতে কালো দাগ উঠে যাবে।
প্যাক কথা
ওটস, অ্যালোভেরা জেল আর আমন্ড অয়েল একসঙ্গে বেটে নিন। এই প্যাক কনুই, গোড়ালি আর হাঁটুতে লাগিয়ে রাখুন। তাতে কালো দাগ বা ছোপ দূর হবে। তবে এই প্যাক লাগানোর পর তা পাতলা নরম সুতির কাপড় দিয়ে মুড়ে রাখতে পারলে বেশ উপকার পাওয়া যাবে। অ্যালোভেরা ত্বক ময়েশ্চারাইজ করে, গোড়ালি ফাটার সমস্যা থাকলেও এই জেল বিশেষ উপকারী। এছাড়া তেল ও ওটসের মিশ্রণে ত্বক উজ্জ্বল হয়। দাগ ছোপ দূর হয়। যদি আরও বেশি ফল চান তাহলে এই মিশ্রণের সঙ্গে পরিমাণমতো দুধও মেশাতে পারেন। তবে খেয়াল রাখবেন মিশ্রণ যেন বেশি পাতলা না হয়ে যায়। 
ফুট স্পা
পায়ের যত্ন বা হাতের যত্নের জন্য ফুট স্পা বিশেষ উপকারী। একটা ছোট গামলার গরম জলে পা ডুবিয়ে রেখে তাতে এসেনশিয়াল অয়েল ঢেলে দিন। কিছুক্ষণ পর পা তুলে আলতো করে মুছে নিন। তারপর ফুট স্ক্রাব দিয়ে পা ঘষে নিন। এরপর আবারও পা ওই তেল মেশানো জলে ডুবিয়ে ধুয়ে নিন। পা মখমলের মতো নরম হবে। একইভাবে হাতেরও যত্ন নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে ল্যাভেন্ডার বা রোজ ফ্লেভারের এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহার করবেন। আর স্ক্রাবের জন্য ঘরোয়া পদ্ধতিতে মধু, ওটমিল আর দুধ দিয়ে একটা পেস্ট বানিয়ে সেটা দিয়ে মাসাজ করবেন। 
কিছু টিপস
 লেবুর রস কনুই, গোড়ালি বা হাঁটুতে লাগান।
 গোলাপ জল আর বেসনের পেস্ট কনুই আর হাঁটুতে নিয়মিত লাগান।
 মধু ট্যান তুলতে ভালো কাজ করে। কিন্তু তৈলাক্ত ত্বকের জন্য মধু উপযুক্ত নয়। 
 চন্দনের গুঁড়ো আর হলুদ একসঙ্গে পেস্ট বানিয়ে কনুই বা গোড়ালিতে লাগাতে পারেন। উপকার পাবেন।