যে কোনও কর্মেই একটু বাধা থাকবে। তবে উপার্জন মন্দ হবে না। ললিতকলায় ব্যুৎপত্তি ও স্বীকৃতি। ... বিশদ
মহালয়ার পুণ্যতিথিতে দেবীপক্ষের প্রথম সাঁঝ। ৭৩জন মহিলা চিকিৎসক হাঁটছেন কলকাতার এক অভিজাত পাঁচতারার ‘রাজবাড়ি’ প্রাঙ্গণে। এ এক অন্যরকম ‘ফ্যাশন ওয়াক’। স্টেথো ও প্রেসক্রিপশন ছেড়ে একটা গোটা দিন শাড়ি ও গয়নায় মঞ্চ আলো করলেন এ যুগের দুর্গারা। লাল, কমলা, মাস্টার্ড হলুদ ও রানি পিঙ্ক শেডের শাড়িগুলোর পাড়ে সোনালি জরিসুতোর কাজ। সঙ্গে স্বর্ণালঙ্কারের আভিজাত্য। এমন রূপে সেজে ফ্যাশন শো-এর র্যাম্পে যখন চিকিৎসকরা উপস্থিত হলেন, তখন যেন ‘রাজবাড়ি’-র ঝাড়লণ্ঠন, সুসজ্জিত প্রাসাদের স্তম্ভ, রাজকীয় সিঁড়ি— সবই উৎসবের আবহে প্রহর গুনছে শুধু তাঁদেরই জন্য! সকলের র্যাম্পে হাঁটার অভিজ্ঞতা প্রথমবার!
অনুষ্ঠানের পোশাকি নাম ‘রূপং দেহি— দ্য এসেন্স অব ইনার স্ট্রেন্থ’। ‘ডক্টরস অ্যান্ড শাড়িস গ্রুপ’(ডিএনএস)-এর বার্ষিক এই সমাবর্তন। অনুষ্ঠানটির মূল আহ্বায়ক উডল্যান্ডস হাসপাতালের সিইও তথা শাড়িপ্রেমী রূপালী বসু। তিনি বলেন, ‘ডিএনএস-এর নিজস্ব একটি গোষ্ঠী আছে। সারা দেশের প্রায় ৪০ হাজার চিকিৎসক এই দলের সদস্য। ২০১৯-এ প্রথম এই দলটি তৈরি হয়। শাড়ি এই দলের নামের সঙ্গে মিশে থাকলেও তাঁদের সব ইভেন্ট যে শাড়িকেন্দ্রিকই হয়, এমন নয়। বরং ডিএনএস ট্রেন্ড, ডিএনএস ফোটোগ্রাফি, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ডিএনএস লাইভ সহ নানা কর্মকাণ্ড প্রায় সারা বছর ধরেই চলে এই গ্রুপে। সবচেয়ে বড় কথা, জনহিতকর নানা কাজ ও সদস্যদের বিপদেআপদে পাশে দাঁড়াতেও এই গ্রুপের সদস্যরা
বেশ দড়।’
চিকিৎসকদের র্যাম্প ওয়াক কোরিওগ্রাফি করেছেন সেলিব্রিটি মডেল পিঙ্কি কেনওয়ার্দি। একের পর এক চিকিৎসক যখন বাঙালিয়ানায় সেজে র্যাম্পে এসে দাঁড়াচ্ছেন, সহজাতভাবে শাড়ি সামলে পেশাদার মডেলদের মতো হেঁটে নিচ্ছেন র্যাম্পের এ মাথা-ও মাথা, তখন চারপাশের আবহেও যেন বাংলার মুখ! সতেজ, প্রাণোচ্ছ্বল একটা ঘরোয়া বাঙালি আড্ডার পরিবেশ। মাথায় জুঁইয়ের মালা ও অন্যান্য ফুল দিয়ে সাজানো কেশবিন্যাস, মৃদু সুগন্ধি— সব মিলে এই অনুষ্ঠান যেন বাঙালি ও বাঙালিয়ানার আনন্দোৎসবের চেহারা নিয়েছিল।
তবে ‘রূপং দেহি’-র মঞ্চ কেবল নিয়মমাফিক ফ্যাশন আর র্যাম্প শো-এর আধার হয়েই থেমে থাকেনি। বরং এর বৈচিত্র্য হার মানায় টি২০ গেমসের উন্মাদনাকেও। যখন একদল চিকিৎসক ক্যালেন্ডার শ্যুটে ব্যস্ত, তখন আর একদল হয়তো র্যাম্পে পোজ দিচ্ছেন, কেউ বা সোলো শ্যুটে খুঁজে নিচ্ছেন মনের আরাম। সাজগোজ ও ফ্যাশন শো-এর পর পেটপুজো বাদ গেলে কিন্তু বাঙালিয়ানা থেকে অনেকটা নম্বর কাটা যায়। তাই সেদিকেও নজর রেখেছিল ডিএনএস। আইটিসি-র শেফদের বাছাই করা বাঙালি ও চীনে খাবারের প্ল্যাটার ছিল ভুরিভোজে। সঙ্গে অবশ্যই বাঙালির মিষ্টি।
শাড়ি, র্যাম্প ও খাওয়াদাওয়া মিলিয়ে চিকিৎসকরা এক মনোরম সন্ধ্যার সাক্ষী রইলেন। কলকাতার বুকে ধরা রইল বাঙালিয়ানার এক টুকরো আমেজ।