যে কোনও কর্মেই একটু বাধা থাকবে। তবে উপার্জন মন্দ হবে না। ললিতকলায় ব্যুৎপত্তি ও স্বীকৃতি। ... বিশদ
বছরভর চাহিদা
ঘামে ভিজে ফাউন্ডেশন ধেবড়ে গেল, মাস্কারা গলে গেল, আর লিপস্টিক স্মাজ করে গেল— এই পরিস্থিতি নৈব নৈব চ। মেকআপ করতে যাঁরা ভালোবাসেন, বর্ষাকালের প্রতি তাঁদের একটা গোষ্ঠীগত অপছন্দও আছে হয়তো। তাই বর্ষা তো বটেই, ইদানীং বছরভর ওয়াটারপ্রুফ মেকআপের খুব চাহিদা। এমনটাই মনে করেন রূপ বিশেষজ্ঞদের বড় অংশ। মেকআপ আর্টিস্ট অভিজিৎ পাল বললেন, ‘সারা বছরই এই মেকআপের চাহিদা রয়েছে। কারণ ঘাম সারা বছরই হয়। সেক্ষেত্রে নন ওয়াটারপ্রুফ দিয়ে লাভ নেই। আর এসি বা নন এসি নয়, ওয়াটারপ্রুফ মেকআপ সব সময়ই ব্যবহার করলে নিশ্চিন্ত থাকা যায়।’
গোড়ার কথা
মেকআপ করার আগে প্রাইমার লাগানো জরুরি। ত্বক এবং মেকআপের মধ্যে সূক্ষ্ম আস্তরণের মতো কাজ করে এই প্রাইমার। বর্ষায় লাইট টেক্সচার পাউডার অথবা জেল প্রাইমার ব্যবহার করুন। যা ত্বকের স্বাভাবিক তেল এবং ঘাম শুষে নিতে সাহায্য করে। আর্দ্র পরিবেশে পাউডার বেসড ফাউন্ডেশন ব্যবহার করলে তা দীর্ঘস্থায়ী হয়। এর উপর কমপ্যাক্ট পাউডার লাগাতে হবে। যা মুখের তৈলাক্ত ভাব দূর করবে। টাচআপের জন্যও কমপ্যাক্ট পাউডার আদর্শ। তাই যে অনুষ্ঠানেই যাবেন, সেখানে ব্যাগে কমপ্যাক্ট পাউডার এবং ওয়েট টিস্যু সঙ্গে নিয়ে যান।
গ্লোয়ি স্কিন
অভিজিৎ মনে করেন, এখন এত ভালো প্রোডাক্ট রয়েছে, তা দিয়ে সহজেই ওয়াটারপ্রুফ মেকআপ করা সম্ভব। তিনি বললেন, ‘বেশিরভাগ মেকআপ এখন ওয়াটারপ্রুফ পাওয়া যায়। যদি কারও মুখে প্যাচ, ডার্ক সার্কল থাকে বা কোনও দাগ থাকে সেক্ষেত্রে একটু কনসিলার ব্যবহার করুন। এগুলো ওয়াটারপ্রুফই হয়। তারপর হালকা পাফ করে নিতে পারেন। সেটা করতেই হবে তার কোনও মানে নেই। কনসিলার দিয়ে পুরো কভারআপ করে কাজল, ওয়াটারপ্রুফ মাস্কারা আর লিপস্টিক লাগান। এখন মেকআপের খুব ভালো ভালো টিন্ট পাওয়া যায়। পাউডারি ব্লাশঅন ব্যবহার না করলেও চলবে। টিন্ট ব্যবহার করলে ন্যাচারাল, গ্লোয়ি একটা স্কিন দেবে।’
চোখের এবং চুলের সাজ
মেকআপের ক্ষেত্রে চোখ অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অভিজিৎ বললেন, ‘আইলাইনার আর কাজলের ক্ষেত্রে চোখের শেপ অনুযায়ী আমরা ব্যবহার করি। যদি কেউ লাইনার ব্যবহার করতে চান ঘন লাইনার হলে তা দেখতে আরও সুন্দর লাগে। লাইনারের সঙ্গে মাস্কারা মাস্ট। না হলে চোখের মেকআপ অসম্পূর্ণ থাকে। কাজলের ক্ষেত্রে বলব, ওয়াটার লাইনে কাজল পরে উপরে যদি থিক মাস্কারা দেন সেটাও সুন্দর লাগবে। দিনের বেলা হালকা কোনও নিউট্রাল শেড, পিচ শেড ব্যবহার করলে দেখতে ভালো লাগবে। রাতের মেকআপে ডার্ক শেড ব্যবহার করতে পারেন। তবে এখন পোশাক যেমনই হোক না কেন, সবের সঙ্গেই ন্যুড শেড যেতে পারে। কনসিলার বেশিরভাগই ওয়ারটারপ্রুফ হয়। মাস্কারা আবার নন ওয়াটারপ্রুফও হয়। সেটা একটু দেখে নিতে হবে।’ কোন প্রোডাক্ট ব্যবহার করবেন, কীভাবে সাজবেন, জানতে হবে সবটাই।
এবার বাকি রইল হেয়ারস্টাইল। ওয়াটারপ্রুফ মেকআপের সঙ্গে তাও মানানসই হওয়া চাই। অভিজিৎ মনে করেন, ‘যারা পরিচর্যা কম করেন, তাদের চুল বর্ষায় ফ্রিজি হয়। সেক্ষেত্রে স্ট্রেটনার ক্যারি করলেই হবে। সব এখন সেরামিক বেস। পুড়ে বা জ্বলে যাওয়ার ভয় নেই। স্ট্রেটনিং নিজে নিজে করা যায়। স্ট্রেট করে নিলে দেখতে পরিচ্ছন্ন লাগে। কোঁকড়া চুল হলে স্ট্রেট করার প্রয়োজন নেই।’ আর যাদের ছোট চুল, তাঁদের বছরভর ঠিক শেপে ট্রিম করে রাখার পরামর্শ দিলেন তিনি। কোথাও যাওয়ার আগে জেল বা হেয়ার ওয়াক্স ব্যবহার করে শুধু সেট করে নিলেই
সাজ সম্পূর্ণ।
ত্বকের যত্ন
তবে সব কিছুর আগে প্রতিদিন ত্বকের যত্ন নেওয়ার পরামর্শ দিলেন অভিজিৎ। ত্বক যত্নে না থাকলে কোনও মেকআপই ভালো লাগে না। তাঁর কথায়, ‘ত্বকের যত্ন নিতে ক্লিনিং, টোনিং, ময়শ্চারাইজিং করে যেতে হবে। শোওয়ার আগে সারাদিনের মেকআপ পরিষ্কার করতেই হবে। না হলে ত্বক খারাপ হয়ে যাবে।’ এই রুটিনের কোনও বদল করবেন না। যত্নে থাকলে প্রোডাক্ট থেকে ত্বকের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনাও কম।
ব্যাগে রাখুন
ওয়াটারপ্রুফ মেকআপ মানেই অনেকটা সময় লাগবে, তা সব সময় নয়। চটজলদি তৈরি হতে গেলে কিছু জিনিস ব্যাগে রাখা জরুরি। অভিজিৎ জানালেন, অফিস থেকে পার্টি, ক্লাব, গেট টুগেদারে যেতে হলে কয়েকটা জিনিস ব্যাগে রেখে দিন। প্রথম হল কনসিলার। হালকা করে পাফ করে নিন। স্টুডিওফিক্স অল্প। কমপ্যাক্ট, টিন্ট ব্লাশঅন, কাজল, মাস্কারা, লিপস্টিক। দিনের বেলা কেউ কাজল পরলেন, রাতে ব্রাইট করতে চাইলে চোখের পাতায় মোটা করে কাজল লাগিয়ে ব্রাশ না থাকলে হাত দিয়েও যদি স্মাজ করে দেন, তার উপর মাস্কারা দিয়ে দিলে একটা স্মোকি এফেক্ট চলে আসবে। সঙ্গে ডার্ক লিপস্টিক।
মেকআপ স্থায়ী হওয়ার টিপস
১) পাউডার অ্যাপ্লাই করে স্পঞ্জ দিয়ে মুখে এবং ঘাড়ে তা ভালো করে মিশিয়ে নিন।
২) লুজ পাউডারের তুলনায় কমপ্যাক্ট পাউডার স্মুদ ফিনিশ দেবে। আই পেন্সিলের তুলনায় লিকুইড আইলাইনার দীর্ঘস্থায়ী হবে।
৩) লিপস্টিক দীর্ঘস্থায়ী করতে লিপস্টিক লাগানোর আগে ঠোঁটে ফাউন্ডেশন লাগিয়ে নিন।