যে কোনও কর্মেই একটু বাধা থাকবে। তবে উপার্জন মন্দ হবে না। ললিতকলায় ব্যুৎপত্তি ও স্বীকৃতি। ... বিশদ
আসছে আসছে করে পুজো এসেই গেল! কিন্তু মনের মতো একটা ছবি কিছুতেই তুলতে পারছিলেন না কলেজপড়ুয়া কৌশানী। ম্যাডক্স স্কোয়ারের দুর্গাকে ব্যাকড্রপে রেখে একখানা ছবি তুলে ফেসবুকে দিতে না পারলে যে পুজোর বারো আনাই মাটি! এমন সময় নামল ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি। ছবি তোলা মাথায় উঠল। অগত্যা খুলতে হল ছাতা। বিরক্ত কৌশানী বলছিলেন, এরকম বৃষ্টি হলে তো পুজোর বারোটা বেজে যাবে। উত্তর কলকাতার ছবিটাও এক। কুমোরটুলি পার্কের লাইনে দাঁড়িয়ে খড়দহের কৃষ্ণা দে ছেলের হাতে কেক ধরিয়ে দিলেন। বললেন, খেয়ে নে। কতক্ষণ দাঁড়াতে হবে কে জানে! বৃষ্টিতেও শ্রীভূমির ঠাকুর দেখার লাইন ছেড়ে কেউ নড়লই না। কলেজ স্কোয়ারে পা ফেলার জায়গা নেই। ভিড়ের স্রোত বয়ে চলেছে হাতিবাগান, আহিরীটোলা, কুমোরটুলি সর্বজনীন থেকে টালা প্রত্যয়, তেলেঙ্গাবাগান পর্যন্ত। বাগবাজারে ডাকের সাজে মায়ের রূপ দর্শন করতে উন্মাদনা সেই আগের মতোই। ভিড় টানার প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে ছিল না সল্টলেক। অভিনব থিম-ভাবনায় তাক লাগিয়ে দেওয়া মণ্ডপগুলিতে রাতভর চলল দর্শনার্থীদের ‘মহামিছিল’।
ম্যাডক্স স্কোয়ারে যথারীতি পুরনো বন্ধুরা পুজোর আড্ডায় মেতেছেন। এটাই এখানকার রীতি। মাত্র দু’দিনের ছুটি পেয়ে আমেরিকা থেকে এসেছেন দেবমাল্য। ছোটবেলার বন্ধু শৌভিককে দেখে প্রথমে চিনতেই পারেননি। বন্ধুকে এতদিন পর সামনাসামনি দেখে তাঁর প্রথম প্রশ্নটাই ছিল, ভিডিও কলে তো তোকে এরকম লাগে না? তবে এত ভিড় পছন্দ নয় মুকুন্দপুরের শোভিতার। একডালিয়া আর সিংহি পার্কের ঠাকুর দেখেই তিনি ক্লান্ত। অগত্যা বন্ধুরা মিলে সিনেমা দেখতে যাওয়ার পরিকল্পনা করলেন। সেখানেও ‘ঠাঁই নাই’ পরিস্থিতি। সিনেমার টিকিটও দুর্মূল্য। তাহলে রেস্তরাঁয় যাওয়া যাক! সেখানেও তো লাইন! শেষ পর্যন্ত ঠাকুর দেখাই ভালো বলে ত্রিধারার দিকে এগিয়ে গেলেন তাঁরা। সেদিক থেকে মানুষের ঢেউ বালিগঞ্জ কালচারালের দিকে। বালি থেকে বন্ধুদের সঙ্গে এসেছেন সৌমিক। মায়ের ফোনে খবর পেলেন, সেখানেও বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বেহালার মণ্ডপগুলিতে যথারীতি জনজোয়ার। নতুন দল, তপোবন, দেবদারু ফটক থেকে আরও দক্ষিণে স্টেট ব্যাঙ্ক পার্ক—মানুষের ঢল দেবীর বোধনের দিনেই। শহরতলির বহু মানুষ সপরিবারে ঠাকুর দেখতে চলে এসেছেন এসব এলাকায়। বিকেলের দিকে ভিড় সামলাতে খানিকটা সমস্যাও হয় পুলিসের।
দু’বছরের করোনা-পর্ব কাটিয়ে এবার বিপুল উৎসাহে মানুষ উৎসবে অংশ নিতে উৎসুক। দুর্গাপুজোর বিশ্বজনীন স্বীকৃতি সেই উৎসাহ বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুণ। পুজোর দিনগুলিতে বৃষ্টির পূর্বাভাস মাথায় রেখে দ্বিতীয়া, তৃতীয়া থেকেই অনেকে শুরু করে দিয়েছিলেন ‘প্যান্ডেল হপিং’। তবে একেবারে আকাশ ভেঙে বৃষ্টি না নামলে মণ্ডপমুখী ভিড় যে আজ-কাল-পরশু উত্তরোত্তর বাড়বে, তা স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছে ষষ্ঠীর জনস্রোত।